টুইটার সদর দপ্তর: নেই টয়লেট পেপার, ভাড়া বাকি আর বন্ধ রান্নাঘর

টুইটারের কর্মীরা যাতে সারা দিন কাজ করতে পারেন, সে জন্য অফিসকে শোবার কক্ষে পরিণত করেন ইলন মাস্ক
ছবি: টুইটার

টুইটারের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জ্যাক ডরসি যেভাবে পরিচালনা করতেন, কোম্পানিটি আর সে অবস্থায় নেই। গত বছর কিনে নেওয়ার পর কর্মী ও কোম্পানিটির জন্য অনেক পরিবর্তন আনেন ইলন মাস্ক। মাস্ক যখন টুইটার কেনেন, তখন হয়তো তিনি আঁচ করতে পারেননি, তাঁকে জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়ের মুখোমুখি হতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি কেনার পর ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে এক বছরে ২০ হাজার কোটি ডলারের সম্পদ খুইয়েছেন তিনি।

বিদায়ী বছরটি টুইটার, টেসলা ও স্পেসএক্স–প্রধানের জন্য ছিল নাটকীয়তা ও লোকসানে ভরা। টুইটার সদর দপ্তরে নেই টয়লেট পেপার, ভাড়া বাকি আর বন্ধ রান্নাঘরও। খবর ইন্ডিয়া টুডের।

টুইটারের স্বত্ব কিনে নেওয়ার পর থেকে কোম্পানিটি পরিচালনায় কঠিন সময় পার করছেন মাস্ক। প্রথমত আয় কমে যাওয়া এবং বিজ্ঞাপন হারানোর কারণে এ চাপে পড়েছেন তিনি। তবে টুইটার ‘আর দ্রুত দেউলিয়া হওয়ার পথে নেই’—   এখনো এমনটা বিশ্বাস করতে পছন্দ করেন মাস্ক।

কিন্তু টুইটারের চেহারা দেখে, কোম্পানির অবস্থা খুব আশাব্যঞ্জক মনে হচ্ছে না। অন্তত যদি টুইটারের সদর দপ্তরে কী ঘটছে, সেটা দেখা হয়। দেখে নেওয়া যাক, দায়িত্ব নেওয়ার পর কর্মী ও কোম্পানিটির জন্য মাস্ক কী পরিবর্তন নিয়ে এসেছেন।

এক.
টুইটার হাজারো কর্মী ছাঁটাই করেছে। মাস্ক মনে করতেন, এসব কর্মী কোম্পানির কোনো কাজে আসছে না। প্রথম দফায় মাস্ক সদর দপ্তর এবং দেশের বাইরে মিলিয়ে অর্ধেকের বেশি কর্মী ছাঁটাই করেন। এরপর প্রায় প্রতিদিনই আরও কর্মী ছাঁটাই করেছেন তিনি। পাশাপাশি হাজারো কর্মী ক্ষতিপূরণ নিয়ে স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন।

দুই.
মাস্ক বাসা থেকে কাজ করার সুবিধা তুলে দেন। তিনি দাপ্তরিক ই–মেইলে কর্মীদের অফিসে আসতে বলেন। তিনি স্পষ্ট করে বলে দেন, যাঁরা অফিসে এসে কাজ করতে ইচ্ছুক নন, তাঁরা তাৎক্ষণিক চাকরি ছেড়ে দিতে পারেন।

তিন.
ব্যয় কমাতে কর্মীদের দুপুরে বিনা মূল্যে খাবার দেওয়ার কোম্পানির আগের সিদ্ধান্ত থেকে মাস্ক সরে আসেন। মাস্ক একসময় দাবি করেছিলেন, টুইটার শুধু কর্মীদের দুপুরের বিনা মূল্যের খাবারের পেছনে বছরে প্রায় ১২৯ কোটি টাকা ব্যয় করে।

চার.
টাকার জন্য মাস্ক আসবাব, রান্নাঘরের সরঞ্জাম এবং টুইটার সদর দপ্তরের কথিত সব ‘অবাঞ্ছিত সামগ্রী’ বিক্রি করে দিচ্ছেন।

পাঁচ.

কর্মীরা যাতে সারা দিন কাজ করতে পারেন, সে জন্য অফিসকে শোবার কক্ষে পরিণত করেন মাস্ক। টুইটার অফিসগুলোয় বিছানা, সোফাসহ শোবার কক্ষের ছবি সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এক ই–মেইলে ট্রাম্প কর্মীদের বলেছেন, তিনি নিজে সপ্তাহে সাত দিন চব্বিশ ঘণ্টা কাজ করছেন। ছুটির দিনেও কর্মীরা যেখানেই থাকুন কেন, কাজ করবেন বলে আশা করছেন তিনি।

ছয়.
টাকা বাঁচাতে অফিস সহকারী ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীদেরও ছাঁটাই করেন মাস্ক। কর্মীদের নিজেদেরই টয়লেট পেপার কিনে নিতে হচ্ছে। কেউ টয়লেট পরিষ্কার না করায় টুইটার সদর দপ্তরে এখন দুর্গন্ধ ছড়ায় বলেও খবর বেরিয়েছে।
বলা যায়, মাস্ক ও টুইটার উভয়ই কঠিন সময় পার করছে। প্রতিটি দিনই কোম্পানিটির অবস্থা আগের চেয়ে খারাপ হচ্ছে। যদিও পরিস্থিতি এখন জটিল, তবে মাস্ক বিশ্বাস করেন, টুইটার খুব শিগগির ঘুরে দাঁড়াবে। পাঠকের আগ্রহ বাড়াতে নতুন ফিচার চালুর অঙ্গীকার করেছেন এই ধনকুবের।