মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বাকি মাত্র ৫৮ দিন। এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লড়াই জমে উঠেছে। ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। আগামী মঙ্গলবার পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ফিলাডেলফিয়া শহরে এবিসি নিউজের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দুই প্রার্থীর টেলিভিশন বিতর্ক। নির্বাচনী লড়াইয়ের এ বিতর্ক দিয়েই প্রথম দেখা হচ্ছে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলার।
বিতর্কের আগে গতকাল শনিবার দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য উইসকনসিনে নির্বাচনী সমাবেশ করেছেন ট্রাম্প। সেখানে তিনি বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে আক্রমণ করে বক্তৃতা করেছেন। অন্যদিকে আরেক গুরুত্বপূর্ণ দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য পেনসিলভানিয়াতে বির্তকের জন্য প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে কমলা হ্যারিসকে।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন ঘিরে পরিচালিত জরিপগুলোয় দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতে কমলা ও ট্রাম্পের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে উইসকনসিনের মসিনিতে এক সমাবেশে ট্রাম্প তাঁর স্বভাবসুলভ আক্রমণাত্মক, অতিরঞ্জিত ও মিথ্যায় ভরা বক্তৃতা দেন। তিনি তাঁর বক্তৃতায় বামপন্থী একনায়কের অধীন যুক্তরাষ্ট্র কেমন দেশে পরিণত হবে, তার ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন। সেখানে উপস্থিত শ্বেতাঙ্গ রক্ষণশীল সমর্থকদের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের অধীন আপনাদের সরকার সারা দুনিয়া থেকে খুনি, শিশু নিপীড়ক ও ক্রমিক ধর্ষণকারীদের আমদানি করেছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক বিরোধীদের কারাবন্দী করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে।’
সমাবেশে ট্রাম্প ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফল উল্টে দেওয়ার চেষ্টা থেকে শুরু করে নিউইয়র্কে একাধিক মামলায় তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন। এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে ব্যাপক রাশিয়ান প্রভাবযুক্ত প্রচারের বিষয়টি সরকারের পক্ষ থেকে যেভাবে প্রচার করা হচ্ছে, তা প্রত্যাখ্যান করেন ট্রাম্প। পরে তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল নামের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লেখেন, ‘২০২০ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা প্রতারণা করে জিতেছিল।’ তিনি বলেন, ‘এবার যখন আমি জিতব, দীর্ঘ মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হবে, যাতে বিচারে এমন বৈষম্য আর না ঘটে।’
এদিকে মঙ্গলবারের বিতর্কের জন্য পেনসিলভানিয়ায় প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন কমলা। শনিবার তিনি হালকা মেজাজে সময় কাটান। মঙ্গলবারের বিতর্কে কী বার্তা দেবেন—এমন প্রশ্নে কমলা বলেন, ‘বিভক্তির পাতা উল্টানোর সময় এসেছে। আমাদের দেশকে একত্র করার সময় এসেছে। একটি নতুন পথ তৈরির পথে হাঁটতে হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান নেতা ডিক চেনি ও তাঁর মেয়ে লিজ চেনির সমর্থন পেয়ে উচ্ছ্বসিত ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ সমর্থন সাহসী। এ জন্য সাহসী যে তাঁরা দলের চেয়ে দেশকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নয়; বরং কমলাকে ভোট দেওয়া ঘোষণা দিয়েছেন ডিক চেনি ও তাঁর মেয়ে লিজ চেনি।
ট্রাম্পকে ‘হুমকি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন ডিক চেনি। অন্যদিকে তাঁর মেয়ে লিজ চেনি রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে ‘বিপজ্জনক’ ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
এ নিয়ে শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের পিটসবার্গে কমলা বলেন, ‘আমি তাঁদের (ডিক চেনি ও লিজ চেনি) সমর্থন পেয়ে খুবই সম্মানিত বোধ করছি।’ তিনি আরও বলেন, বাবা-মেয়ে একটি সাহসী বিবৃতি দিয়েছেন।
এদিকে বিপরীত চিত্র ট্রাম্প শিবিরে। নিজ দলের সাবেক নেতাদের ভোট ট্রাম্প পাবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ও তাঁর স্ত্রী লরা আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিজ দল রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প নাকি প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে ভোট দেবেন, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেননি।
অবশ্য ট্রাম্পের জন্য অন্য খুশির খবরও রয়েছে। গত শুক্রবার দেশটির বৃহত্তম পুলিশ ইউনিয়ন ফ্র্যাটারনাল অর্ডার অব পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁকে সমর্থনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এর আগে তিনি নিউইয়র্ক আদালতে আইনি জয়ও পেয়েছেন। ব্যবসায়িক জালিয়াতির মামলার রায় ৫ নভেম্বর নির্বাচনে পর ঘোষণা করার কথা বলেছেন আদালত।
আগামীকালের বিতর্ককে কমলার জন্য নিজের নীতি প্রস্তাব পরিষ্কারভাবে তুলে ধরার একটি বড় সুযোগ বলে মনে করা হচ্ছে। ট্রাম্পের প্রতি আক্রমণ শাণালেও নীতি নিয়ে বিস্তারিত কিছু না জানানোয় কমলার সমালোচনা হচ্ছে।
ট্রাম্প অবশ্য বিতর্ক নিয়ে প্রত্যাশার বিষয়টি আগেই জানিয়ে রাখছেন। ট্রাম্প বলেছেন, মঙ্গলবারের বিতর্কের পদ্ধতি কুটিল। তিনি বিজয়ী হলেও তারা স্বীকার করবে না। তারা বলবে, ট্রাম্পের অপমানজনক পরাজয় ঘটেছে।
যেখানে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, সেই পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যে বর্তমানে দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতে হোয়াইট হাউসে কে যাবেন, তার নির্ধারক হয়ে উঠতে পারে এখানকার ইলেকটোরাল কলেজ ভোট। তাই এখানে বিতর্কের ফল গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।