যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মহারণে জিতে নতুন সরকার গঠনের তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় কে থাকতে পারেন, তা নিয়ে শুরু হয়েছে হিসাব-নিকাশ।
যদিও দ্বিতীয়বারের মতো হোয়াইট হাউসে যেতে ট্রাম্পকে এখনো প্রায় আড়াই মাস অপেক্ষা করতে হবে। আগামী ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেবেন তিনি।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর এবারের পথচলায় সরকার ও প্রশাসনে কাদের সঙ্গে রাখতে পারেন, সে ইঙ্গিত আগেই দিয়ে রেখেছিলেন। এর মধ্যে তাঁর দল রিপাবলিকান পার্টির রথী-মহারথীসহ স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্কের মতো ব্যক্তিত্বও রয়েছেন। গত বুধবার ট্রাম্পের প্রচারশিবির আভাস দিয়েছে, সরকারে কারা থাকবেন, খুব শিগগির তা ঠিক করা হবে।
বিগত কয়েক দিনে ব্যক্তিগত বিভিন্ন আলাপচারিতায় ট্রাম্প এটা স্পষ্ট করেছেন, নির্বাচনী যাত্রায় গত দুই বছরে যাঁরা তাঁর পাশে ছিলেন, তাঁদের পুরস্কার দেবেন তিনি। এ থেকে তাঁর একটি পুরোনো ক্ষোভও সামনে এসেছে। ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের পর ট্রাম্প যাঁদের ক্ষমতার সামনের কাতারে এনেছিলেন, তাঁদের অনেকেই শেষ পর্যন্ত তাঁর পাশে থাকেননি।
আগের অভিজ্ঞতা থেকে এবারের মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প আরও পরিণত হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অর্থনীতি, অভিবাসী নীতি, পররাষ্ট্রনীতিসহ যেসব বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি ক্ষমতায় এসেছেন, তা বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে নতুন প্রশাসন সাজানোর কাজে মন দেবেন।
এবারের নির্বাচনে ট্রাম্প যে শুধু হোয়াইট হাউসে ফিরছেন তা নয়, তাঁর দল রিপাবলিকান পার্টি কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে হারানো আধিপত্য ফিরে পেয়েছে, নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পথে রয়েছে।
এবারের নির্বাচনে ট্রাম্প যে শুধু হোয়াইট হাউসে ফিরছেন তা নয়, তাঁর দল রিপাবলিকান পার্টি কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে হারানো আধিপত্য ফিরে পেয়েছে, নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পথে রয়েছে। এই পরিস্থিতি নীতি বাস্তবায়নে ট্রাম্পের জন্য বড় সহায়ক হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কারা থাকতে পারেন সরকারে
ট্রাম্পের প্রচারশিবিরের দুই কর্মকর্তা লিন্ডা ম্যাকম্যাহন ও হাওয়ার্ড লুটনিকের মতে, নতুন প্রশাসনে বিশেষজ্ঞদের যুক্ত করা হবে। ট্রাম্পও তাঁর পাশে থাকা মানুষকে অগ্রাধিকার দিতে চান। সেদিক দিয়ে প্রথমেই নাম আসে সুসি উইলিসের। ট্রাম্পের নির্বাচনী যাত্রায় বড় ভূমিকা রেখেছেন তিনি। তিনি হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফের দায়িত্ব পেতে পারেন। এই পদের জন্য ট্রাম্পের সাবেক অভ্যন্তরীণ নীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ব্রুক রলিনসকেও বিবেচনা করা হতে পারে।
এবারের নির্বাচন ঘিরে একটি আলোচিত নাম রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র। প্রথমে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়ালেও পরে ট্রাম্পকে সমর্থন জানান তিনি। ট্রাম্প বলেই রেখেছিলেন, ক্ষমতায় গেলে কেনেডি জুনিয়রকে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ খাত নিয়ে কাজ করার অবাধ সুযোগ দেবেন তিনি। তবে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য হতে কেনেডি জুনিয়র সিনেটের অনুমোদন পাবেন কি না, তা নিশ্চিত নয়।
ট্রাম্পের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেতে পারেন মাইক পম্পেও। তিনি ট্রাম্পের আগের আমলে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর পরিচালক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। আর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদ পেতে পারেন একসময় জার্মানিতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং ট্রাম্পের আগের আমলে ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্সের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা রিচ গ্রেনেল।
বুধবার রাতে ট্রাম্পের নাতনি কাই ট্রাম্পের পোস্ট করা একটি পারিবারিক ছবিতেও ইলন মাস্ককে দেখা গেছে। নির্বাচনের আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, ক্ষমতা পেলে সরকারের বিপুল ব্যয় কমানোর কাজে মাস্কের সহায়তা নেবেন তিনি।
তবে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে ইলন মাস্কের নাম। শীর্ষ এই ধনকুবের ট্রাম্পের বড় সমর্থক। দুজনের ঘনিষ্ঠতাও রয়েছে। বুধবার রাতে ট্রাম্পের নাতনি কাই ট্রাম্পের পোস্ট করা একটি পারিবারিক ছবিতেও ইলন মাস্ককে দেখা গেছে। নির্বাচনের আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, ক্ষমতা পেলে সরকারের বিপুল ব্যয় কমানোর কাজে মাস্কের সহায়তা নেবেন তিনি।
ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার সম্ভাব্য সদস্যদের মধ্যে যাঁদের নাম শোনা যাচ্ছে তাঁদের মধ্যে আছেন—স্কট বেসেন্ট, জন পলসন, ল্যারি কুডলো, রবার্ট লাইথাইজার, হাওয়ার্ড লুটনিক, রবার্ট ও’ব্রায়েন, বিল হ্যাগারটি, মার্কো রুবিও, মাইক ওয়াল্টজ, টম কটন, কিথ কেলগ, টম হোমান, চাদ ওলফ, মার্ক গ্রিন, জন র্যাটক্লিফ ও মাইক লি।
সব দিকেই এগিয়ে রিপাবলিকানরা
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট পদে জয় পেতে ২৭০টি ভোটই যথেষ্ট। ট্রাম্প ইতিমধ্যে ২৯৪টি ভোট পেয়েছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস পেয়েছেন ২২৩টি। এখনো তিন অঙ্গরাজ্যে ফল ঘোষণা বাকি। এ ছাড়া সিনেটে ইতিমধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ ৫২ আসন পেয়েছে ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টি। সিনেটে আরও পাঁচটি আসন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাদের।
এদিকে প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য অন্তত ২১৮টি আসন প্রয়োজন। এখনো কয়েকটি আসনে ফল ঘোষণা বাকি। রিপাবলিকানরা পেয়েছেন ২০৮টি আসন। বিপরীতে ডেমোক্রেটিক পার্টি এখন পর্যন্ত পেয়েছে ১৮৯টি আসন।
সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলে যেকোনো নীতি বাস্তবায়ন, আইন পাস ও বিচারপতি নিয়োগের কাজ সহজ হবে ট্রাম্পের। এ নিয়ে নিউইয়র্কের ফোর্ডহ্যাম ইউনিভার্সিটির আইনের অধ্যাপক চার্লি বার্ডার বলেন, ‘ট্রাম্প খুব সামান্য বাধা পাবেন। আমি মনে করি, নিজের সিদ্ধান্তগুলো সহজেই বাস্তবায়নের ফলে খুবই শক্তিশালী প্রেসিডেন্ট হয়ে উঠবেন তিনি।’