যুক্তরাষ্ট্রে আজকের হুমকি ভিন্ন, আরও বিপজ্জনক

আজ যুক্তরাষ্ট্র এক ভিন্ন আক্রমণের মুখে, যার প্রভাবে দ্রুত বদলে যাচ্ছে এ দেশের রাজনীতি, নাগরিক সম্পর্ক, এমনকি আইন ও বিচারব্যবস্থা।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ভয়াবহ হামলার পর জ্বলছে টুইন টাওয়ার। এই হামলায় নিহত হয় প্রায় তিন হাজার মানুষ

একুশ বছর আগে, ১১ সেপ্টেম্বর ২০০১, যুক্তরাষ্ট্র তার ইতিহাসের ভয়াবহতম আক্রমণের শিকার হয়েছিল। এদিন জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদার ১৯ জন সন্ত্রাসী মোট চারটি যাত্রীবাহী বিমান ছিনতাই করে বিভিন্ন শহরে একযোগে আঘাত হানে। ধ্বংস হয়ে যায় মার্কিন অর্থনৈতিক আধিপত্যের প্রতীক নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ার। নিহত হয় প্রায় তিন হাজার মানুষ। তৃতীয় একটি বিমান বিধ্বস্ত হয় ওয়াশিংটন ডিসির পেন্টাগন ভবনে। আরও একটি বিমান আছড়ে পড়ে পেনসিলভানিয়ার এক মাঠে।

সেই ঘটনা বদলে দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস। শুধু যুক্তরাষ্ট্র কেন, বদলে গিয়েছিল বিশ্বের ইতিহাসের গতিপ্রবাহ।

৯/১১ ছিল একটি বাইরের হামলা, সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত একদল বিদেশি মানুষের পরিকল্পিত আক্রমণ। আজ যুক্তরাষ্ট্র এক ভিন্ন আক্রমণের মুখে, যার প্রভাবে দ্রুত বদলে যাচ্ছে এ দেশের রাজনীতি, নাগরিক সম্পর্ক, এমনকি আইন ও বিচারব্যবস্থা। কোনো বাইরের শত্রু নয়, এ হামলা আসছে দেশের ভেতর থেকে। সশস্ত্র মিলিশিয়া বাহিনী সংগঠিত হচ্ছে দেশের নানা প্রান্তে। তাদের মুখে শোনা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার হুমকি। সিআইএ এই তৎপরতার নাম দিয়েছে ‘অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস’। যুক্তরাষ্ট্রের ওপর এই হুমকি ৯/১১–এর চেয়েও অধিক বিপজ্জনক।

১১ সেপ্টেম্বর, ২০০১

দিনটির কথা আমার স্পষ্ট মনে আছে। ঝকঝকে সকাল, আকাশে একফোঁটা মেঘও নেই। যথারীতি সকাল ৯টার আগেই আমি কর্মস্থলে পৌঁছে গেছি। দেখি অফিসের সদর দরজা বাইরে থেকে বন্ধ, লোকজন ঢুকতে না পেরে রাস্তায় জটলা করছে। কী হয়েছে কেউ সঠিক বলতে পারছে না। সবার চোখ দূরে লোয়ার ম্যানহাটানের দিকে, সেখানে ঘন কালো ধোঁয়া আকাশময়। জানা গেল, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের আকাশছোঁয়া টুইন টাওয়ারের ওপর একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। খানিকক্ষণ পর, ঠিক সকাল ৯: ০২ মিনিটে, দ্বিতীয় টাওয়ারটিতে আছড়ে পড়ল আরেকটি বিমান। বুঝতে বাকি রইল না এটি দুর্ঘটনা নয়, হামলা।

টুইন টাওয়ারে ৯/১১ হামলা

একটি অজ্ঞাত ভয় আমাদের তাৎক্ষণিক গ্রাস করে। কারা এর পেছনে, কী হতে পারে এর প্রতিক্রিয়া, কীভাবে যুক্তরাষ্ট্র তার নিজ ভূখণ্ডে এই হামলার প্রতিশোধ নেবে—এসব প্রশ্ন সবার মনে ভিড় করে। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই অফিস ছুটি হয়ে গেল। আরও আক্রমণ হতে পারে এই আশঙ্কায় ট্রেন, বাস, সাবওয়ে চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হলো। আমরা হেঁটে বাড়ি ফেরা শুরু করলাম। হাজার হাজার মানুষ, প্রায় নিঃশব্দে সারিবদ্ধভাবে চলছে। সেই দৃশ্য আমার মনে ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চের পর গ্রামমুখী মানুষের কাফেলার কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল। সেই একই রকম সংহতিও নজরে পড়েছিল। আমাকে কুইন্স বরো ব্রিজ পেরিয়ে শহরের অন্য প্রান্তে বাসায় ফিরতে হবে। মনে আছে, রাস্তার পাশে দাঁড়ানো মানুষ আমাদের হাতে পানির বোতল, বিস্কুটের প্যাকেট এগিয়ে দিয়েছে। এক বৃদ্ধার কথা মনে পড়ছে, হাঁটা তাঁর জন্য কষ্টকর। সম্পূর্ণ অচেনা এক মহিলার ঘাড়ে হাত রেখে তিনি চলছেন। প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে আমি সে সময় লিখেছিলাম, যারা যুক্তরাষ্ট্রকে আঘাত করে দুর্বল ও বিভক্ত করতে চেয়েছিল, তারা ভ্রান্ত। এ দেশের মানুষ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ।

এটি একদল ধর্মীয় উগ্রপন্থীর কাজ, এ কথা জানার পর অজ্ঞাত ভীতি আমাদের গ্রাস করল। এখানে সেখানে মুসলিমদের ওপর এলোপাতাড়ি হামলার খবর শোনা গেল। দাড়ি ও পোশাকে আল–কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের মতো দেখতে সে কারণে নিউইয়র্কে একজন শিখ গুলিবিদ্ধ হলেন। টেক্সাসের একটি মসজিদে কারা শূকরের রক্ত ছিটিয়ে গেল। দেশজুড়ে মুসলিমবিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে টের পেয়ে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ মার্কিন মুসলিমদের সঙ্গে নিজের সংহতি ঘোষণা করলেন, ওয়াশিংটনের একটি মসজিদে এসে মুসল্লিদের সঙ্গে কথাও বলেন। আমরা তখনো খুব একটা এ দেশের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নই। ভয় পেয়েই শহরের বাঙালিরা সন্ত্রাসের প্রতিবাদ করে সংহতি মিছিলের আয়োজন করলাম। ইউনিয়ন স্কয়ারে নীরব মোমবাতি মিছিলের আয়োজনও করা হলো।

সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ

‘সভ্যতার সংঘর্ষের’যে কথা ১৯৯২ সালে স্যামুয়েল হান্টিংটন লিখেছিলেন, ৯/১১ হয়ে দাঁড়াল তার প্রমাণপত্র। আল-কায়েদার সন্ত্রাসী হামলার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে বুশ প্রশাসন ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ নামে যে অভিযান শুরু করে তার প্রথম আঘাত আসে আফগানিস্তানের ওপর। এরপর ইরাকে ও সিরিয়ায়। এর ফলে দুই যুগ আগে মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়, তার জের এখনো রয়ে গেছে। আফগানিস্তানে ২০ বছর কাটানোর পর যুক্তরাষ্ট্র নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তন করেছে বটে, কিন্তু জঙ্গি সন্ত্রাস নিশ্চিহ্ন হয়নি, বরং তা ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের নানা দেশে।

যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে ৯/১১–এর প্রতিক্রিয়া প্রকাশিত হয় অন্যভাবে। সন্ত্রাস মোকাবিলায় প্রতিষ্ঠিত হয় ‘হোমল্যান্ড সিকিউরিটি’ নামে নতুন দপ্তর, যার প্রধান দায়িত্ব দেশের মানুষের ওপর নজরদারি। এই নজরদারির প্রধান লক্ষ্য দেশের মুসলিম সম্প্রদায়। এর ফলে যে সন্দেহ ও অসদ্ভাবের শুরু, দুই যুগ পরও তা অক্ষুণ্ন। মার্কিন গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টারের জনমত জরিপ অনুসারে, ২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের এক-চতুর্থাংশ মানুষ ইসলাম ধর্ম ও মুসলিমদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করত। এখন তার পরিমাণ মোট জনসংখ্যার ৫১ শতাংশ। রিপাবলিকানদের মধ্যে বিদ্বেষ পোষণ করে এমন মানুষের সংখ্যা আরও বেশি—প্রায় ৭২ শতাংশ।

৯/১১–এর একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছিল মার্কিন অভিবাসননীতির আমূল পরিবর্তন। বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সারাহ শেরমান স্টোকস মনে করিয়ে দিয়েছেন, ৯/১১–এর ফলে সন্ত্রাস ও অভিবাসন কার্যত অভিন্নার্থ হয়ে পড়ে। টুইন টাওয়ার হামলার এক সপ্তাহ আগেও প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ও মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ভিসেন্তে ফক্স কুয়েসেদা ৩০ লাখ বৈধ কাগজপত্রহীন ব্যক্তিকে বৈধতা প্রদানের বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছিলেন। ৯/১১–এর পর সে আলোচনা ভেস্তে গেল। এ সময় থেকে শুধু মুসলিম নয়, অশ্বেতাঙ্গ অভিবাসীমাত্রই সন্দেহের শিকার হয়ে উঠল। যুক্তরাষ্ট্রের জন্মদাগেই বর্ণবাদ—বর্ণভিত্তিক বৈষম্য রয়েছে এ দেশের রাজনীতি ও সামাজিক সম্পর্কের কেন্দ্রে। ৯/১১ সে রাজনীতিকে বৈধতা প্রদানের একটি হাতিয়ার তুলে দিল।

ট্রাম্পের উত্থান

৯/১১–এর ঠিক অব্যবহিত পর এ কথা কারও মনে হয়নি, কিন্তু এখন পেছন ফিরে তাকালে স্পষ্ট বোঝা যায়, ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের’ একটি অনিবার্য পরিণতি ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্থান। ক্ষমতার কেন্দ্রে আসার জন্য তাঁর তুরুপের তাস ছিল বর্ণবাদ। মুসলিমদের সন্ত্রাসের জন্য অভিযুক্ত করে তিনি তাদের বিশেষ তালিকাভুক্তির দাবি তুললেন। মেক্সিকো ও দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আসা বাদামি বহিরাগতদের গায়ে তিনি ধর্ষক ও মাদক ব্যবসায়ীর তকমা সেঁটে দিলেন। তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোকে তিনি ঢালাওভাবে ‘কদর্য’, তাঁর ভাষায় ‘শিটহোল কান্ট্রিস’ নামে আখ্যায়িত করলেন।

শ্বেত শ্রেষ্ঠত্ববাদীরা অনেক আগে থেকেই কৃষ্ণকায়, বাদামি ও ইহুদি নাগরিকদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে আসছে। ২০১৭ সালে এরাই ভার্জিনিয়ার শার্লসভিলে জ্বলন্ত মশাল নিয়ে মিছিল করার সময় স্লোগান তুলেছিল, ইহুদিরা আমাদের জায়গা নিতে পারবে না। হিটলারের জার্মানিতে প্রথম এই স্লোগান শোনা গিয়েছিল। মার্কিন বর্ণবাদীরা সেই একই স্লোগান তুলল, তবে তারা ইহুদি বলতে সব অশ্বেতকায়কেই বুঝিয়ে ছিল। সে মিছিলে রক্তপাতের ঘটনা ঘটলে ট্রাম্প শ্বেতবাদীদের পক্ষ নিয়ে ‘তাদের অনেকেই ভালো মানুষ’ এমন সাফাই গাইলেন।

ট্রাম্পের সে কথায় যুক্তরাষ্ট্রের রুচিমান ও গণতন্ত্রমনা মানুষ ক্ষুব্ধ হয়েছিল। কিন্তু এ দেশের সেসব শ্বেতকায় মানুষ, যারা ক্রমান্বয়ে তাদের সংখ্যাগুরু পদমর্যাদা ও প্রতিপত্তি হারানোর আশঙ্কায় অস্থির ও অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছিল, তারা ট্রাম্পের ভেতর এক নতুন সেনানায়কের খোঁজ পেয়ে গেল। এই প্রতিপত্তি উদ্ধারে সহিংস পথ অনুসরণের ‘সবুজসংকেত’ দিলেন ৭৬ মিলিয়ন মানুষের ভোটে নির্বাচিত এই প্রেসিডেন্ট। বললেন, যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরে পেতে হলে তোমাদের লড়তে হবে, প্রাণপণ লড়তে হবে। ৬ জানুয়ারি ২০২০-তে তাঁরই নির্দেশে আক্রান্ত হলো মার্কিন কংগ্রেস।

গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা

৬ জানুয়ারির ক্যাপিটল হিলে মার্কিন আইন পরিষদের ওপর যে সশস্ত্র হামলা ঘটে, একার্থে তা ছিল একটি নতুন ৯/১১। ২০ বছর আগের প্রথম হামলাটি ছিল বহির্গত শত্রুর হাতে। দ্বিতীয় হামলাটি দেশীয় শত্রুর হাতে। এর আপাতলক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রের শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর বিঘ্নিত করে ট্রাম্প ও রিপাবলিকান নেতৃত্বকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখা। আসল লক্ষ্য, এ দেশের শ্বেতকায়দের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্যের পুনরুদ্ধার। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রবার্ট পেপের নেতৃত্বে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, যারা ৬ জানুয়ারির দাঙ্গায় অংশ নেয়, তারা অধিকাংশই প্রধানত ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন যেসব এলাকায় ২০২০ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করেন, সেসব এলাকার বাসিন্দা। অর্থাৎ এরা ঠিক রক্ষণশীল রিপাবলিকান নির্বাচনী ক্ষেত্র থেকে আসেনি। এরা এমন সব অঞ্চল থেকে এসেছে, যেখানে বহিরাগতদের আগমনের ফলে শ্বেতকায়রা ক্রমশ সংখ্যালঘুতে পরিণত হচ্ছে ও তাদের প্রথাগত আধিপত্য হারাতে বসেছে। পেপের সমীক্ষা থেকেই জানা গেছে, নিজের ক্ষমতা পুনরুদ্ধারে এরা সহিংস পথ অনুসরণে সম্পূর্ণ প্রস্তুত।

শহুরে এলাকার বাইরে, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও পশ্চিমের কৃষিপ্রধান এলাকাগুলোতে অনেক আগে থেকেই সশস্ত্র মিলিশিয়াদের তৎপরতা চলছে, এ কথা অজ্ঞাত নয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে, বিশেষত ২০২০ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের পরাজয়ের পর, এদের তৎপরতা বহুগুণে বেড়ে গেছে। সিআইএর প্রধান ক্রিস্টোফার রে বলেছেন, বহির্গত শত্রুর হাতে হুমকির চেয়েও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় হুমকি এসব মিলিশিয়ার ‘অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস’। মার্কিন কংগ্রেসের সামনে এক শুনানিতে তিনি জানান, ৬ জানুয়ারির হামলা মোটেই বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। যে সশস্ত্র মিলিশিয়া ও সহিংস রাজনৈতিক তৎপরতা এ দেশে অনেক দিন আগে থেকেই দানা বেঁধেছে, তারই ফল। শিগগিরই যে এই হুমকি মিটবে, তা–ও মনে হয় না।

এ কথা স্পষ্ট, এই অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস ঠেকানো না গেলে তার সরাসরি ফল দাঁড়াবে গৃহযুদ্ধ। এ দেশে সবার হাতেই বন্দুক, ফলে লড়াই যদি বাধে, তা হবে রক্তক্ষয়ী। এক সাম্প্রতিক জনমত জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেক মানুষ মনে করে আজ অথবা কাল এ দেশে গৃহযুদ্ধ বাধবেই। কেউ কেউ বলেছেন, অনাগত ভবিষ্যতে নয়, এখনই যুক্তরাষ্ট্র গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। সাবেক শ্রমমন্ত্রী রবার্ট রাইশ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ এখন এতটাই বিভক্ত হয়ে পড়েছে যে তারা আর একে অপরের সঙ্গে পাশাপাশি বাস করতেও রাজি নয়। এই বিভক্তি দাগের একদিকে রিপাবলিকান, অন্যদিকে ডেমোক্র্যাট। একদিকে শহর, অন্যদিকে কৃষিপ্রধান অঞ্চল। একদিকে শ্বেতকায়, অন্যদিকে মিশ্রবর্ণের মানুষ।

যদি গৃহযুদ্ধ বাধেই তো তার ফলে যুক্তরাষ্ট্র কয়েক টুকরা হয়ে যেতে পারে। কথাটা খুব হালকাভাবে বলা নয়। টেক্সাসের রিপাবলিকান পার্টির প্রধান হুমকি দিয়েছেন, ডেমোক্র্যাটদের ব্যবহারে তারাই এতটাই বিরক্ত যে এই রাজ্য একসময় যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজেদের স্বতন্ত্র প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করতে পারে। শুধু টেক্সাস নয়, শ্বেতাঙ্গপ্রধান অনেক রাজ্যেই বিচ্ছিন্নতার হুমকি শোনা যাচ্ছে। ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ার এক জরিপে দেখা গেছে, ২০২০ সালের নির্বাচনে যাঁরা ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছিলেন তাঁদের অর্ধেক বিচ্ছিন্নতার পক্ষে। এরা বলছে, লক্ষ্য অর্জনে যদি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে হয়, সেটা তারা নির্দ্বিধায় তা সমর্থন করবে।

অভ্যন্তরীণ জঙ্গিবাদের এই উত্থানে বিপদঘণ্টি বাজিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রিপাবলিকান সমর্থনে যে অভ্যন্তরীণ উগ্রবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে, তাকে প্রায়-ফ্যাসিবাদী (বা সেমি-ফ্যাসিস্ট) নামে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর কথায়, এদের তৎপরতার ফলে শুধু মার্কিন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নয়, তার ভিত্তিভূমিই আলগা হয়ে পড়বে।

একুশ বছর আগে ৯/১১–এর সন্ত্রাসী হামলায় যুক্তরাষ্ট্র কাবু হয়নি। বিদেশি জঙ্গিরা তার গায়ে বড়জোর আঁচড় লাগাতে পেরেছিল। এত দিনে সে আঁচড় মিলিয়েও গেছে। কিন্তু এখন ভেতর থেকেই যে সন্ত্রাসী হুমকি আসছে, খুব সহজে তা মিটবে বলে মনে হয় না।