ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের অভিযান ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতায় নিজ দেশসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক চাপের মধ্যে রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে মধ্যপ্রাচ্যে চলমান এ সংঘাতের মধ্যে প্রথম বড় ধাক্কাটা গতকাল রোববার খেল ওয়াশিংটন। এদিন জর্ডানে মার্কিন বাহিনীর ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় তিনজন সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন। এতে আরও চাপের মধ্যে পড়েছেন বাইডেন। বিষয়টি নিয়ে লিখেছেন বিবিসির আন্তর্জাতিক বিষয়ক প্রধান প্রতিবেদক লিস ডসেট।
জর্ডানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় তিন সেনাসদস্য নিহতের ঘটনা নতুন করে চাপ সৃষ্টি করেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ওপর। গতকাল রোববারের এ হামলার মধ্য দিয়ে হামাস–ইসরায়েল সংঘাত শুরুর পর মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে প্রথমবারের মতো মার্কিন সেনারা শত্রুপক্ষের হামলায় নিহত হলেন।
মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে এ উত্তেজনা বৃদ্ধি বলতে গেলে অনিবার্য ছিল। গত অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় থেকেই ইরাক ও সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক স্থাপনাগুলো বারবার ইরান–সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর হামলার শিকার হচ্ছিল। এতে বেশ কয়েকজন মার্কিন সেনা আহত হয়েছেন। দেশ দুটিতে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়ে পাল্টা জবাব দিচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্রও।
এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। এবারের হামলায় মার্কিন সেনা নিহত হয়েছেন। এর জন্য ইরানকে দায়ী করা হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নিতে হবে ওয়াশিংটনকে। তবে এমন পদক্ষেপের বড় ঝুঁকি রয়েছে। এতে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে। যদিও হামলার পর বাইডেন অনেকটা অস্পষ্ট সুরে বলেছেন, সঠিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের পছন্দের উপায়ে জড়িত সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনা হবে।
যুক্তরাষ্ট্র জানে নিজেদের সামরিক বাহিনীর সদস্যের জীবন রক্ষায় এখন তাদের আরও বেশি কিছু করে দেখাতে হবে। আর বর্তমানে যে সংকট চলছে, সেটিকে বাইডেনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবেন তাঁর সমালোচকেরা। ইরানের প্রতি তাঁর ‘নরম থাকার’ কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগও তুলবেন। তবে বিপৎসীমার দূর থেকেই লড়াই চালিয়ে যেতে চাইছে বাইডেন প্রশাসন। কারণ, হোয়াইট হাউস চাইছে না যুক্তরাষ্ট্রকে আরও বড় কোনো সংঘাতে জড়িয়ে খরচা বাড়াতে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের শত্রুতা দীর্ঘদিনের। তবে মধ্যপ্রাচ্যে বর্তমান সংকটের মধ্যে ওয়াশিংটন ও তেহরান—কেউই চাচ্ছে না নিজেদের মধ্যে সরাসরি সংঘাতে জড়াতে। যেমন ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডস কোরের এক জ্যেষ্ঠ কমান্ডারকে হত্যার দায় ইসরায়েলের ওপর চাপিয়েছে তেহরান। তবে এর প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বড় কোনো হামলা চালায়নি তারা।
যদিও চলতি মাসের শুরুর দিকে ইরাকের কুর্দিস্তানে একটি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায় ইরান। তাদের দাবি, সেখানে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের একটি ঘাঁটি ছিল। তবে সেটিকে ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য কোনো পাল্টা জবাব হিসেবে ধরা হচ্ছে না।
ইরান–সমর্থিত ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে চলমান হামলার নেতৃত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এ অভিযানে দেশটিকে সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাজ্যসহ অন্য মিত্ররা। এরপরও লোহিত সাগরের নৌপথ দিয়ে চলাচলকারী জাহাজগুলোর ওপর হামলা থামায়নি হুতিরা। এখন হুতিদের মতো ইরান–সমর্থিত অন্যান্য গোষ্ঠীর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। তবে এটা এমন এক উপায়ে করতে হবে যেন একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা হয় এবং সংকটে থাকা মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলকে আরও বিপদের দিকে না নিয়ে যায়।