স্ট্যাসি উইলিয়ামস নব্বইয়ের দশকের একজন মার্কিন মডেল। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এবার যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন তিনি। সম্প্রতি বলেছেন, ট্রাম্প অনুমতি না নিয়েই তাঁকে যৌন হয়রানি করেছেন। অযাচিতভাবে তাঁর শরীর স্পর্শ করেছিলেন।
ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৯৩ সালে নিউইয়র্কের ম্যানহাটানের ট্রাম্প টাওয়ারে। ওই সময় চুটিয়ে মডেলিং করছিলেন স্ট্যাসি। তিনি জানান, কুখ্যাত যৌন নিপীড়ক ও নারী পাচারকারী জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ছিল। জেফরির সূত্রেই তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করেছিলেন।
ট্রাম্পের সঙ্গে ১৯৯২ সালে প্রথম দেখা হয়েছিল পেশাদার মডেল স্ট্যাসির। সেটা ছিল বড়দিনের একটি পার্টি। জেফরি এপস্টেইন ওই পার্টিতে স্ট্যাসিকে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং ট্রাম্পের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন।
সাবেক এই মডেল জানান, জেফরি এপস্টেইন তাঁর প্রতি আগ্রহী ছিলেন। তাঁরা দুজনে কয়েক মাস দেখাসাক্ষাৎ ও প্রেম করেছিলেন। তাই যখন জেফরি এপস্টেইন তাঁকে ট্রাম্পের সঙ্গে পরিচয় করে দিয়েছিলেন, তখন তাঁর মনে হয়েছিল তিনি দুজন পুরুষের মধ্যকার ‘প্রতিযোগিতামূলক খেলার’ মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেন।
এরও কয়েক মাস পর ১৯৯৩ সালের শীতের শেষের দিকে কিংবা বসন্তের শুরুতে একদিন হাঁটতে বেরিয়ে স্ট্যাসিকে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ট্রাম্পের সঙ্গে আবার দেখা করিয়ে দেওয়ার কথা তোলেন এপস্টেইন। এরপর একদিন তাঁরা ট্রাম্প টাওয়ারে যান। এমনটাই জানিয়েছেন স্ট্যাসি।
ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা হওয়ার দিনের স্মৃতি হাতড়ে স্ট্যাসি বলেন, ‘তিনি (ট্রাম্প) তাঁকে স্বাগত জানালেন। জড়িয়ে ধরে নিজের দিকে টেনে নিলেন এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় অযাচিত স্পর্শ করতে শুরু করলেন।’
ওই পরিস্থিতিতে ‘একদম স্থির’ হয়ে গিয়েছিলেন জানিয়ে স্ট্যাসি বলেন, ঘটনার পরম্পরায় আমি ‘হতভম্ব’ হয়ে গিয়েছিলাম। তবে এটাও দেখছিলাম, দুজন পুরুষ (ট্রাম্প ও এপস্টেইন) একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসছেন।
স্ট্যাসির বয়স এখন ৫৬ বছর। এর আগে বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে অভিযোগের বিষয়ে কথা বলেছিলেন। তবে সর্বশেষ তিনি বিস্তারিত তুলে ধরেছেন একটি গ্রুপ কলে। গত সোমবার কমলা হ্যারিসের সমর্থক হিসেবে পরিচিত ‘সারভাইভার্স ফর কমলা’ নামের একটি গোষ্ঠীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সাবেক এই মডেল ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন।
আগামী ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। নির্বাচনে রিপাবলিকান দল থেকে লড়ছেন ট্রাম্প। নির্বাচনের এতটা কাছাকাছি সময়ে এসে প্রভাবশালী প্রার্থী ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সাবেক মডেলের যৌন হয়রানির অভিযোগ বেশ আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে।
তবে ট্রাম্পের প্রচারশিবিরের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে স্ট্যাসির অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। ট্রাম্পের প্রচারশিবিরের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিত বিবৃতিতে বলেন, ‘নির্বাচনের সপ্তাহ দুয়েক আগে এসে বারাক ওবামার এক সাবেক কর্মীর মাধ্যমে কমলা হ্যারিসের প্রচারে তোলা এমন অভিযোগ দ্ব্যর্থহীনভাবে মিথ্যা। এটা স্পষ্ট যে কমলার প্রচারে এসব কল্পিত গল্প বানানো হয়েছে।’
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌনতা ঘিরে অভিযোগ কিংবা কেলেঙ্কারি অবশ্য নতুন নয়। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের লেখিকা ই জিন ক্যারলকে যৌন হয়রানি ও মানহানি করায় ট্রাম্পকে ৫০ লাখ ডলার ক্ষতিপূরণের সাজা দেন জুরিরা। সাবেক মডেল অ্যামি ডরিসও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছিলেন।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বেশ সাহসিকতার সঙ্গেই আইনি লড়াই চালিয়েছেন সাবেক পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলস। শারীরিক সম্পর্কের বিষয়ে মুখ বন্ধ রাখতে তাঁকে অর্থ দিয়েছিলেন ট্রাম্প। আর ব্যবসায়িক নথিতে এই অর্থ লেনদেনের বিষয়টি গোপন রাখায় জালিয়াতির অভিযোগে নিউইয়র্কের আদালতে মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন তিনি।