যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার জন্য ‘ইনজেনুইটি মার্স হেলিকপ্টার’ একটি বড় সাফল্য। পৃথিবীর বাইরে অন্য কোনো গ্রহে ওড়া প্রথম হেলিকপ্টার এটি। রক্তিম গ্রহ মঙ্গলে তিন বছর ধরে অভিযান চালিয়েছে এটি। গতকাল বৃহস্পতিবার নাসা জানিয়েছে, সম্প্রতি হেলিকপ্টারটির পাখা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেটি আর কাজ করছে না।
ইনজেনুইটির আকার একটি টিস্যুর বাক্সের মতো। ওজন মোটামুটি দুই কেজি। হেলিকপ্টারটি মঙ্গলে পাঠানো হয়েছিল নাসার ‘পারসিভারেন্স’ রোভারের সঙ্গে। সেখানে সেটি প্রথম আকাশে উড়েছিল ২০২১ সালের ১৯ এপ্রিল। নাসার প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল, হেলিকপ্টারটি মঙ্গলে পাঁচবার ওড়ানো। এর মাধ্যমে প্রমাণ করা—গ্রহটির কম ঘনত্বের বায়ুমণ্ডলেও আকাশযান চলাচল করতে সক্ষম। তবে শেষ পর্যন্ত সফলভাবে ইনজেনুইটিকে ৭২ বার ওড়াতে পেরেছে নাসা। সব মিলিয়ে হেলিকপ্টারটি বায়ুমণ্ডলে ভেসে থেকেছে দুই ঘণ্টার বেশি।
ইনজেনুইটিকে সবশেষ আকাশে ওড়ানো হয়েছিল ১৮ জানুয়ারি। সেবার পরিকল্পনামতো ৪০ ফুট উঁচুতে উঠেছিল সেটি। ভেসে থেকেছিল সাড়ে চার সেকেন্ড। অবতরণের আগে ভূমি থেকে প্রায় তিন ফুট ওপরে হঠাৎ সেটির সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে আবার সংযোগ স্থাপন করে দেখা যায়, হেলিকপ্টারটির ‘এক বা একাধিক’ পাখা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তবে এর আগে সবাইকে হতবাক করে দিয়ে দীর্ঘ সময় টিকে ছিল ইনজেনুইটি। প্রাথমিকভাবে মঙ্গলের আকাশে ওড়ার পরীক্ষার জন্য পাঠানো হলেও পরে সেটি পারসিভারেন্স রোভারকে গবেষণার কাজে সহায়তা করেছিল। শত শত কোটি বছর আগে মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব ছিল কি না, তা জানার চেষ্টা করছে পারসিভারেন্স।
এক ভিডিও বার্তায় নাসার কর্মকর্তা বিল নেলসন বলেন, ‘ভবিষ্যতে সৌরজগতের গ্রহগুলোর আকাশে ওড়ার পথ তৈরি করেছে ইনজেনুইটি। এটি মঙ্গল ও অন্যান্য গ্রহে আরও নিরাপদে ও সুচারুভাবে অভিযান চালানোর সুযোগ তৈরি করছে। গত শতকের শুরুর দিকে পৃথিবীতে একই কাজ করেছিলেন রাইট ভাইয়েরা (উড়োজাহাজের আবিষ্কারক)।’
এদিকে ইনজেনুইটির পর আরেকটি হেলিকপ্টার মহাকাশে পাঠাতে যাচ্ছে নাসা। সেটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ড্রাগনফ্লাই’। সবকিছু ঠিকঠাক থাকতে ২০২৮ সালে পারমাণবিক শক্তিচালিত এই হেলিকপ্টারটি পাঠানো হবে শনি গ্রহের সবচেয়ে বড় উপগ্রহ টাইটানে।