ঘড়ি তৈরির প্রতিযোগিতায় উত্তরাধিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যে কোম্পানি যত পুরোনো, তাদের ভান্ডারে ঘড়ি তৈরির তত বেশি কারুকৌশল রয়েছে, এমনটা ধরে নেওয়া হয়। ইউরোপের পুরোনো ঘড়ি কোম্পানিগুলো যখন নিজেদের বনেদি প্রথা নিয়ে একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত, ঠিক তখন সম্পূর্ণ ভিন্ন এক নকশা নিয়ে হাজির হয় টলেদানো অ্যান্ড চ্যান নামের একটি নতুন কোম্পানি।
নিউইয়র্কভিত্তিক শিল্পী ফিলিপ টলেদানো ও হংকংভিত্তিক ঘড়ি নির্মাণকারী আলফ্রেড চ্যানের মধ্যে ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে পরিচয়। ২০২১ সালে তাঁরা যৌথভাবে একটি ঘড়ি প্রস্তুতকারী কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করতে সম্মত হন। কোম্পানিটির নাম দেন টলেদানো অ্যান্ড চ্যান।
টলেদানো অ্যান্ড চ্যান কোম্পানি প্রথাগত ঘড়ির বাইরে গিয়ে একটি বিশেষ ধরনের হাতঘড়ি তৈরির পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা মিওয়ানিয়ালাস্তা উল্কার ধ্বংসাবশেষ ব্যবহার করে একটি হাত ঘড়ি তৈরির জন্য সিদ্ধান্ত নেয়।
মিওয়ানিয়ালাস্তা উল্কার ধ্বংসাবশেষ ১৯০৬ সালে প্রথম পাওয়া যায় সুইডেনের কিতকিয়ুজাভি গ্রামে। পরবর্তী সময়ে উত্তর ইউরোপের স্ক্যান্ডিনেভিয়া অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় এই উল্কার ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। ঘড়ি তৈরিতে এ উল্কার ধ্বংসাবশেষ ব্যবহারের ইতিহাস পুরোনো। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো একটি ঘড়ির সবকিছু এই উল্কার উপাদান থেকে তৈরি করা হয়েছে, এমন নজির নেই।
টলেদানো সিএনএনকে নিউইয়র্ক থেকে জুমের মাধ্যমে বলেন, উল্কার উপাদান থেকে ঘড়ি তৈরি করাটা নতুন কিছু নয়। কিন্তু কোনো ঘড়ির সবকিছু উল্কার উপাদান দিয়ে তৈরি করাটা একেবারে অস্বাভাবিক বিষয়।
‘বি/১এম’ নামের ঘড়িটি তৈরি করতে কত অর্থ ব্যয় হয়েছে, তা স্পষ্ট করেননি টলেদানো। তবে তিনি বলেছেন, উল্কার উপাদানের প্রতি গ্রাম কাঁচামালের দাম সোনার চেয়ে বেশি।
স্থানীয় সময় শনিবার এ ঘড়িটি নিউইয়র্কে টাইমফরআর্টের নিলামে তোলার কথা রয়েছে। শিল্পবস্তু হিসেবেই ঘড়িটি সেখানে নিলামে তোলা হবে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ঘড়িটি ৮ থেকে ১৬ হাজার ডলারে বিক্রি হতে পারে।
ঘড়িটির নকশায় আধুনিকতাবাদী স্থপতি মার্সেল ব্রুর কাজের ছাপ স্পষ্ট। বিশেষ করে নিউইয়র্কের ব্রুয়ার ভবনের কৌণিক জানালার আদল এই ঘড়ির নকশায় সহজে চোখে পড়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এ ধরনের নকশা জনপ্রিয় হয়। অন্যদিকে ব্রুটালিজম বা নৃশংসতা নামের শৈলীও ঘড়িটির নকশায় ছাপ ফেলেছে।