ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারেন, এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে জনমত জরিপগুলোতে
ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারেন, এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে জনমত জরিপগুলোতে

২০২৪–এ গণতন্ত্র কোন পথে, ট্রাম্পই হতে পারেন শেষ কথা

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অন্তত ২০৩০ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকছেন বলেই দেখা যাচ্ছে। ভারতের নরেন্দ্র মোদিও ২০২৯ সাল পর্যন্ত তাঁর শাসনকাল টেনে নেবেন বলে মনে হচ্ছে। সেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার হোয়াইট হাউসে ফিরতে পারেন, যদিও তাঁর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র ‘ধ্বংসের চেষ্টার’ অভিযোগ রয়েছে।
কর্তৃত্ববাদী শাসকেরা উদার গণতন্ত্রমনস্কদের ওপরে উঠে আসছেন বলে যাঁরা দুশ্চিন্তা করেন, ২০২৪ সালে তাঁদের বিচলিত হওয়ার কারণ রয়েছে।

এ বছর সব মিলিয়ে বিশ্বের বাসিন্দাদের এক–চতুর্থাংশের বেশি তাঁদের নেতা নির্বাচনে ভূমিকা রাখবেন। এর মধ্যে চলতি মাসেই তাইওয়ানে, মার্চে রাশিয়ায়, ভারতে মে মাস নাগাদ এবং যুক্তরাষ্ট্রে নভেম্বরে ভোট হবে।

চলতি বছরের শেষ নাগাদ ব্রিটেনেও নতুন পার্লামেন্ট নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। অবশ্য তা ২০২৫ সালের জানুয়ারিতেও চলে যেতে পারে।

তবে এসব নির্বাচনের কোনোটিই গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিতর্কে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মতো আলোচনা তৈরি করবে না।

কী কারণে এটা গুরুত্বপূর্ণ

ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো ২০২০ সালের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজয় স্বীকার করেননি। ওই ভোটে জালিয়াতি হয়েছিল বলে ভুয়া অভিযোগ করে আসছেন তিনি। আবার ক্ষমতায় ফিরতে পারলে বিরোধীদের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন তিনি। তাঁর বিরোধীদের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ, কেন্দ্রীয় আমলাতন্ত্র ও প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রয়েছেন।

এটাই এ আশঙ্কাকে জোরালো করছে যে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক বৈরিতা উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে এবং তার থেকে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বর্তমানে বেশ কয়েকটি ফৌজদারি মামলার মুখোমুখি হলেও জনমত জরিপগুলোতে তিনিই এগিয়ে রয়েছেন।

১৩ জানুয়ারি তাইওয়ানে প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনের ফল চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের চাওয়া অনুযায়ীই হতে পারে। চীনের শাসকগোষ্ঠী মনে করে, এই নির্বাচনের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টির শীর্ষ নেতা লাই চিং–তে বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাব নিয়ে আছেন। মার্কিন সামরিক কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, ২০২৭ সাল নাগাদ তাইওয়ানে হামলা করার জন্য প্রস্তুতি নিতে চীনের সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট সি।

রাশিয়ায় পুতিনের প্রেসিডেন্ট পদে পুনর্নির্বাচিত হওয়াটা অনেকটাই নিশ্চিত বলে ধরে নেওয়া যায়। দেশটিতে কয়েক বছর ধরে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর দমন–পীড়ন চালানো হচ্ছে। পুতিন ক্ষমতায় থাকার অর্থ হচ্ছে ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধও চলতে থাকবে। তাতে ইউক্রেনের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের ধৈর্যের পরীক্ষাও হবে। এখানে লক্ষণীয় হচ্ছে, ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের এত বেশি মাত্রায় সামরিক সহায়তার সমালোচনা করে আসছেন ট্রাম্প।

ভারতে নিজস্ব কায়দায় শক্তিশালী হয়ে ওঠা মোদিও পুনরায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে। অনেকটা আপসহীন নেতৃত্বের ধাঁচে এগিয়ে চলা মোদি অনেক ভোটার ও বিদেশি বিনিয়োগকারীর কাছে প্রশংসিত হচ্ছেন। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো তাঁর সমালোচনায় সোচ্চার রয়েছে।  

মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপি আবার ক্ষমতায় থাকতে পারলে মানবাধিকারের চেয়ে অর্থনৈতিক অগ্রগতিতেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে সহজেই অনুমেয়।

২০২৪ সালে এর অর্থ কী

উদার গণতন্ত্র কি কর্তৃত্ববাদ ও স্বৈরতন্ত্রের কাছে হেরে যাচ্ছে, এই বিতর্কে আফ্রিকারও একটি জোরালো বক্তব্য আছে। গেল বছর নাইজার ও গ্যাবনে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকায় গণতন্ত্রকে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে ২০২০ সাল থেকে আটটি সেনা অভ্যুত্থান হয়েছে। তবে দক্ষিণে এ বছর বড় ধরনের রাজনৈতিক লড়াই হওয়ার সম্ভাবনাই রয়েছে।

তিন দশক পর এবারই প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকার আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে। বর্ণবাদের অবসান ঘটার পর নেলসন ম্যান্ডেলার নেতৃত্বে ১৯৯৪ সালে দেশটির ক্ষমতায় বসেছিল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস। তারপর এবারই প্রথম তারা এই ঝুঁকিতে পড়েছে।  

তেমনটি হলে এনসির ক্ষমতা ধরে রাখতে হলে জোট করার দরকার হবে। সে ক্ষেত্রে হয় শ্বেতাঙ্গদের কাছে জনপ্রিয় দল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স অথবা দরিদ্র কৃষ্ণাঙ্গদের কাছে জনপ্রিয় মার্ক্সবাদী দল ইকোনমিক ফ্রিডম ফাইটার্সের যেকোনো একটিকে বেছে নিতে হবে তাদের। এর যেকোনোটি হলেই দক্ষিণ আফ্রিকার গণতন্ত্রও কোণঠাসা হয়ে পড়বে।

আগামী মে বা আগস্টের মধ্যের কোনো এক সময় এ নির্বাচন হতে পারে।
সার্বিকভাবে ২০২৪ সালে গণতন্ত্র কি পিছু হটবে?

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণতন্ত্রপন্থী প্রতিষ্ঠান ফ্রিডম হাউস বলছে, ১৭ বছর ধরে গণতন্ত্রের অবস্থা খারাপের দিকে গেছে। তবে এর সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, গণতন্ত্র আবার ফিরে আসছে।

২০২২ সালে গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে ৩৪টি দেশ উন্নতি করেছে। আর খারাপের দিকে যাওয়া দেশের তালিকায় এসেছে ৩৫টি দেশের নাম। এই সংখ্যার সাম্প্রতিক বছরগুলোর সংখ্যার তুলনায় কম।