যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ায় নির্বাচনী সমাবেশে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় দেশটির কেন্দ্রীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সিক্রেট সার্ভিসের ভূমিকা নিয়ে কয়েকটি বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
ওই ঘটনায় এখন মুখ্য তদন্তকারীর ভূমিকায় মার্কিন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই। গুলিবর্ষণের ঘটনায় এক ব্যক্তি নিহত ও দুজন গুরুতর আহত হন। আর কানে মারাত্মকভাবে জখম হন ট্রাম্প।
হামলার ঘটনায় ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) যখন পাঁচ প্রশ্নের জবাব খুঁজছে, তখন সিক্রেট সার্ভিস বলছে, ‘কী ঘটেছিল, কীভাবে ঘটেছিল, এমন ঘটনা ভবিষ্যতে কীভাবে এড়ানো যায়’ সেসব নিয়ে কাজ করছে তারা।
ইতিমধ্যে সিক্রেট সার্ভিসের প্রধান কিম্বার্লি চিটলকে আগামী ২২ জুলাই মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের একটি কমিটির সামনে সাক্ষ্য দিতে তলব করা হয়েছে। ট্রাম্পের ওপর হামলা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের তোলা প্রশ্নের কয়েকটি:
এ মুহূর্তে ট্রাম্প কিংবা প্রেসিডেন্ট বাইডেনের চেয়ে বেশি হুমকিতে আর কেউ নেই। অথচ পেনসিলভানিয়ার সমাবেশের নিরাপত্তাব্যবস্থায় সেটির প্রতিফলন ঘটেনি।জেসন চ্যাফেজ, মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের সাবেক সদস্য
সমাবেশের অদূরে যে ভবনের ছাদ থেকে গুলি করা হয়, সেটি ছিল মঞ্চে থাকা ট্রাম্পের কাছ থেকে মাত্র ১৩০ মিটারের (৪৩০ ফুট) মতো দূরে। সন্দেহভাজন বন্দুকধারী থমাস ম্যাথু ক্রুকস কীভাবে ওই ছাদে যাওয়ার সুযোগ পেলেন, তা এখনো অস্পষ্ট।
সিক্রেট সার্ভিসের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে পরিচিত দুটি সূত্রের বরাতে এনবিসি নিউজ বলেছে, সমাবেশের আগেই ওই ভবনের ছাদ ঝুঁকিপূর্ণ থাকা ছিল একটি জানা বিষয়। একটি সূত্র বলেছে, ‘কেউ যাতে ভবনটির ছাদে উঠতে না পারে, সে জন্য সেখানে কাউকে উপস্থিত রাখা বা ভবনটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা উচিত ছিল।’
এর বাইরে, উচিত ছিল, ছাদ থেকে ট্রাম্পের মঞ্চ দেখার সুযোগ বন্ধ করা। যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী আলেজান্দ্রো মেয়োর্কাস গতকাল সোমবার এবিসি নিউজকে বলেন, ক্রুকসকে মঞ্চে থাকা ট্রাম্পকে সরাসরি দেখার সুযোগ দেওয়া ঠিক হয়নি।
ট্রাম্পের ওপর হামলার ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী বিবিসিকে বলেছেন, ক্রুকসকে তিনি ও আরও কয়েকজন বন্দুক নিয়ে ছাদে হামাগুড়ি দিতে দেখেছেন। তাঁরা এ ব্যাপারে পুলিশকে সতর্ক করেন। কিন্তু সন্দেহভাজন ব্যক্তি গুলি করার আগে হামাগুড়ি দিয়ে কয়েক মিনিট ধরে এগোতে থাকেন। পরে তাঁকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়।
ট্রাম্পের ওপর হামলার ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী বিবিসিকে বলেছেন, ক্রুকসকে তিনি ও আরও কয়েকজন বন্দুক নিয়ে ছাদে হামাগুড়ি দিতে দেখেছেন। তাঁরা এ ব্যাপারে পুলিশকে সতর্ক করেন। কিন্তু সন্দেহভাজন ব্যক্তি গুলি করার আগে হামাগুড়ি দিয়ে কয়েক মিনিট ধরে এগোতে থাকেন। পরে তাঁকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়।
এফবিআইয়ের স্পেশাল এজেন্ট কেভিন রোজেক বলেন, ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে হামলাকারীর গুলি ছুড়তে পারাটা ‘বিস্ময়ের’।
কাউন্টির শেরিফ নিশ্চিত করেছেন, ক্রুকসকে স্থানীয় একজন পুলিশ সদস্য শনাক্ত করেছিলেন। তবে ওই সময় তাঁকে গুলি ছোড়া থেকে নিবৃত্ত করতে ব্যর্থ হন তিনি। হামলাকারীর ব্যাপারে তথ্য ট্রাম্পের চারপাশে থাকা এজেন্টদের কাছে পৌঁছেছিল কি না, সেটি এখনো পরিষ্কার নয়।
বন্দুকধারী যেখান থেকে গুলি চালিয়েছিলেন, পুলিশের বর্ণনা অনুযায়ী তা ছিল ‘দ্বিতীয় স্তরের’ নিরাপত্তা বলয়ভুক্ত স্থান। সেখানে সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা নন, স্থানীয় ও রাজ্যপর্যায়ের পুলিশ ছিল টহলের দায়িত্বে।
সিক্রেট সার্ভিসের সাবেক একজন সদস্য বলেন, এ ধরনের ব্যবস্থাপনা শুধু তখনই কাজ করে, যখন বিপদের আশঙ্কা চিহ্নিত করার পর করণীয় বিষয় সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট পরিকল্পনা থাকে।
জোনাথন ওয়্যাকরো ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, ‘আপনি যখন স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অংশীদারদের ওপর নির্ভর করবেন, তখন আপনার আরও বেশি যত্নশীল পরিকল্পনা থাকবে এবং তাঁদের বলতে পারবেন, আপনি কোনো হুমকির ক্ষেত্রে তাঁদের কাছে আসলে কী আশা করেন।’
কাউন্টি শেরিফ স্বীকার করেন, এ ক্ষেত্রে একধরনের ‘ব্যর্থতা’ ছিল। কিন্তু কোনো এক পক্ষকে দোষ দেওয়া যাবে না।
প্রতিনিধি পরিষদের ওভারসাইট কমিটির একজন সাবেক চেয়ার ইঙ্গিত দেন, সমাবেশস্থলে সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা ছিলেন ‘অনেকটাই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে’। এ কারণেই শনিবারের ওই সমাবেশের মতো কোনো আয়োজনের নিরাপত্তায় স্থানীয় পুলিশকে প্রশিক্ষিত করা হয়েছিল কি না, তা নিয়ে কথা উঠছে।
এর আগেও সিক্রেট সার্ভিসের ব্যর্থতা সম্পর্কে তুলে ধরেছেন প্রতিনিধি পরিষদের সাবেক সদস্য জেসন চ্যাফেজ। ওয়াশিংটন পোস্টকে তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে ট্রাম্প কিংবা প্রেসিডেন্ট বাইডেনের চেয়ে বেশি হুমকিতে আর কেউ নেই। অথচ পেনসিলভানিয়ার সমাবেশের নিরাপত্তাব্যবস্থায় সেটির প্রতিফলন ঘটেনি।’
অবশ্য সমাবেশের আগে ট্রাম্পশিবিরের পক্ষ থেকে জানানো নিরাপত্তাকর্মী বৃদ্ধির আহ্বান প্রত্যাখ্যানের ইঙ্গিত নাকচ করে দিয়েছে সিক্রেট সার্ভিস।
হামলার পর সিক্রেট সার্ভিসের যেসব সদস্য ট্রাম্পকে ঘিরে নিরাপত্তাবেষ্টনী গড়ে তুলেছিলেন তাঁরা প্রশংসা কুড়াচ্ছেন। প্রশংসাকারীদের একজন এ সার্ভিসের সাবেক সদস্য রবার্ট ম্যাকডোনাল্ড বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতিতে কী করতে হবে, সে বিষয়ে ঠিক পরিকল্পনা না থাকার পরও তাঁরা ‘খুব ভালো তৎপরতা’ দেখিয়েছেন।
তবে এ প্রশ্নও উঠছে, হামলার পর ট্রাম্পকে কি দ্রুততার সঙ্গে সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা মঞ্চ থেকে তাঁর গাড়ির দিকে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন?
ঘটনার ওপর প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, গুলির ঘটনার পর সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা দ্রুতই ট্রাম্পকে ঘিরে নিরাপত্তাবেষ্টনী গড়ে তোলেন। কিন্তু পরক্ষণেই ট্রাম্পকে মঞ্চ থেকে সরিয়ে নিতে কিছুটা সময় নেন তাঁরা। কেননা তখন ট্রাম্প তাঁর জুতা এগিয়ে দিতে বলছিলেন। সেই সঙ্গে ট্রাম্প তাঁর সমর্থকদের উদ্দেশে মুষ্টিবদ্ধ করে কিছু বলেন।
সিক্রেট সার্ভিসের একজন প্রবীণ সদস্য নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, এ রকম পরিস্থিতিতে ট্রাম্পকে সরিয়ে নিতে তিনি কালক্ষেপণ করতেন না। বলেন, ‘আমি থাকলে, তাঁকে নতুন জুতো কিনে দেওয়ার চিন্তা করতাম।’