আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় আল-কায়েদা নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরি নিহত হয়েছেন। ২০১১ সালে আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেন নিহত হওয়ার পর সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটির জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে এই মৃত্যুকে। খবর রয়টার্সের।
মার্কিন প্রশাসনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, অনেক বছর ধরে জাওয়াহিরি লুকিয়ে ছিলেন। তাঁকে খুঁজে বের করে হত্যার অভিযানটি ছিল সন্ত্রাস দমন ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ‘সতর্ক সাধনা ও নিরবচ্ছিন্ন’ কাজের ফল।
যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণার আগপর্যন্ত জাওয়াহিরি পাকিস্তানের উপজাতি-অধ্যুষিত এলাকায় কিংবা আফগানিস্তানে আছেন বলে বিভিন্ন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা অভিযানের বিস্তারিত এসব তথ্য দিয়েছেন—
বেশ কয়েক বছর ধরে মার্কিন সরকার একটি চক্র (নেটওয়ার্ক) সম্পর্কে সতর্ক ছিল। তাদের ধারণা ছিল, চক্রটি জাওয়াহিরিকে সমর্থন করে। আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের প্রত্যাহার করে নেওয়া পর এক বছর ধরে কর্মকর্তারা দেশটিতে আল-কায়েদার উপস্থিতির ইঙ্গিত পর্যবেক্ষণ করছিলেন।
চলতি বছর কর্মকর্তারা স্ত্রী-কন্যাসহ জাওয়াহিরির পরিবারের সদস্যদের শনাক্ত করেন। তাঁদের কাবুলে ‘একটি সেফ হাউসে’ স্থানান্তর করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে একই জায়গায় জাওয়াহিরিকেও শনাক্ত করা হয়।
কাবুলের ওই ‘সেফ হাউসে’ তাঁরা সঠিকভাবেই জাওয়াহিরিকে শনাক্ত করতে পেরেছেন—কয়েক মাস ধরে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের এমন আত্মবিশ্বাস আরও বাড়ে। তাঁরা এপ্রিলের শুরুর দিকে প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান এবং পরবর্তী সময়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ব্রিফ করতে শুরু করেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘অভিযানের বিষয়টি জানাতে আমরা একাধিক স্বাধীন উৎসের মাধ্যমে অভিযানের সময় তাদের আচরণ ও চলাফেরা সম্পর্কে জানতে সক্ষম হই।’
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, যখনই একবার জাওয়াহিরি কাবুলের ‘সেফ হাউসে’ আসেন, সেখান থেকে তাঁর চলে যাওয়ার বিষয়টি আর জানতে পারেননি কর্মকর্তারা। পরে তাঁকে কয়েকবার তাঁরা বেলকনিতে দেখতে পান। শেষ পর্যন্ত সেখানেই তাঁর ওপর হামলা চালানো হয়।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘সেফ হাউসটির’ নির্মাণকাঠামো ও এর ধরন খতিয়ে দেখেন কর্মকর্তারা। এর বাসিন্দাদের তথ্যও যাচাই-বাছাই করে দেখেন। এসবের উদ্দেশ্য ছিল ভবনের কাঠামোগত ক্ষতি এড়িয়ে বেসামরিক নাগরিক ও জাওয়াহিরির পরিবারের সদস্যদের ঝুঁকি কমিয়ে রেখে যাতে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে অভিযানটি চালানো যায়, তা নিশ্চিত করা।
গোয়েন্দা তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখা এবং ‘সর্বোত্তম কর্মপন্থা’ পর্যালোচনায় সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় প্রেসিডেন্ট গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা ও মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের ডেকে বৈঠক করেন। সিআইএ পরিচালক উইলিয়াম বার্নসসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা গত ১ জুলাই বাইডেনকে ‘হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমে’ প্রস্তাবিত অভিযানের বিষয়ে জানান।
কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা কী জেনেছি এবং কীভাবে জেনেছি, এসব প্রশ্নের বিস্তারিত জানতে চান বাইডেন।’ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নির্মিত ও বৈঠকে আনা ওই ‘সেফ হাউসের’ একটি মডেল নিবিষ্টভাবে দেখেন তিনি।
ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রেসিডেন্ট আলো, আবহাওয়া, নির্মাণ উপকরণ ও অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে জানতে চান, যেগুলো অভিযানের সফলতাকে প্রভাবিত করতে পারে। প্রেসিডেন্ট কাবুলে হামলার সম্ভাব্য প্রভাব বিশ্লেষণেরও অনুরোধ জানান।
আন্তসংস্থার জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের সুনির্দিষ্ট একটি দল গোয়েন্দা প্রতিবেদন পরীক্ষা করে দেখে। তারা নিশ্চিত করেন, অব্যাহতভাবে আল-কায়েদাকে নেতৃত্ব দিয়ে আসায় জাওয়াহিরি বৈধ লক্ষ্যবস্তু।
ওই কর্মকর্তা বলেন, চূড়ান্ত ব্রিফিং নিতে এবং অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে জাওয়াহিরিকে হত্যা তালেবানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে কী প্রভাব ফেলবে, সে বিষয়ে আলোচনা করতে ২৫ জুলাই মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ও উপদেষ্টাদের নিয়ে বসেন প্রেসিডেন্ট।
অন্যদের কাছ থেকে মতামত নেওয়ার পর বাইডেন বেসামরিক হতাহত হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে আনবে—এমন শর্তে ‘একটি নিখুঁত বিমান হামলার’ অনুমোদন দিয়েছিলেন।
এরপর গত ৩০ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলীয় সময় রাত ৯টা ৪৮ মিনিটে একটি ড্রোন থেকে কথিত ‘হেলফায়ার’ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়।