সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অবৈধ অভিববাসীদের বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যের স্প্রিংফিল্ড শহরে প্রচারে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন। হাইতির অভিবাসীরা স্থানীয় বাসিন্দাদের ‘পোষা বিড়ালসহ অন্যান্য পোষা প্রাণী খেয়ে ফেলছেন’, এমন গুঞ্জন রটার পর সেখানে জাতিগত উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এ ধরনের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব রটানো হয়েছে ট্রাম্পের প্রচারশিবির থেকেই। ট্রাম্প নিজেই গত বুধবার নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডে এক নির্বাচনী সমাবেশে স্প্রিংফিল্ড সফরে যাওয়ার কথা জানান। অন্যদিকে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস সংখ্যালঘু (লাতিন অভিবাসী) ভোটারদের আস্থা জেতার জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। এর প্রভাব পড়েছে নির্বাচনী জরিপেও। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য পেনিসলভানিয়া ও মিশিগানে ট্রাম্পের চেয়ে ব্যবধান বাড়িয়েছেন কমলা।
রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ট্রাম্পের কট্টর অভিবাসীবিরোধী বক্তব্য নির্বাচনী প্রচারের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। বুধবার সমাবেশে আসা উচ্ছ্বসিত সমর্থকদের তিনি বলেন, ‘আমি স্প্রিংফিল্ডে যাচ্ছি এবং আমি অরোরা যাচ্ছি।’ আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে তিনি স্প্রিংফিল্ড যাবেন বলেও জানিয়েছেন।
অরোরা শহরটি কলোরাডো অঙ্গরাজ্যে। সেখানে ভেনেজুয়েলার গ্যাং সদস্যরা হামলা চালিয়ে একটি অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের দখল নিয়েছে বলে বারবার বলেছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প যেখানে এ কথা বলেছেন, সেই লং আইল্যান্ডে অবৈধ অভিবাসীদের ওপর একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটছে। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে অভিবাসীদের ‘পশু’, ‘সন্ত্রাসী’, ‘অপরাধী’, ‘গ্যাং সদস্য’ বলে গালি দেওয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, অভিবাসীরা মার্কিনদের জীবনধারণকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকেই অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কট্টর এবং আক্রমণাত্মক কথাবার্তা বলে যাচ্ছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের বিরুদ্ধে এটাকে তিনি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছেন। তিনি এটা প্রমাণ করতে চাইছেন, অভিবাসন বিষয়ে কমলার মনোভাব নরম। লাখ লাখ মানুষকে অবৈধ পথে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেওয়ার দায়ও তিনি কমলার ওপর চাপাতে চাইছেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের দেশে বিপুল সংখ্যায় সন্ত্রাসীরা আসছে। আমরা সেই সব হিংস্র লোকজনকে ধরে তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে চলেছি। আর যদি তারা আবারও আসে, তবে তাদের চরম মূল্য দিতে হবে।’
আগামী ৫ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে কমলা ও ট্রাম্পের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যেই ইউএস ফেডারেল রিজার্ভ বুধবার যে খবর দিয়েছে, তাতে নির্বাচনের ওপর প্রভাব পড়তে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, তারা মূল ঋণের হার অর্ধশতাংশ পয়েন্ট কমিয়েছে।
কমলা হ্যারিস একে বাইডেন প্রসাশনের সফলতা হিসেবে দেখাতে চাইছেন। তবে তাঁর জন্য দুঃসংবাদ হয়ে এসেছে টিমস্টার্স ইউনিয়নের সমর্থন না পাওয়া। গ্রুপটি এর আগে ডেমোক্র্যাটদের প্রতিবার সমর্থন দিয়ে এসেছে।
এদিকে নিউইয়র্কের সমাবেশে কমলা হ্যারিসকে তীব্র আক্রমণ করেন ট্রাম্প। তিনি অভিযোগ করেন, কমলা কাগজপত্র ছাড়া অভিবাসীদের আসা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছেন। কমলা হবেন আক্রমণের প্রেসিডেন্ট।
ট্রাম্প আরও বলেন, তিনি একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করছেন। যদি তিনি প্রেসিডেন্ট হতে পারেন, তবে মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের বিপরীতে তিনি পাল্টা শুল্ক আরোপ করবেন।
এদিকে কুইননিপিয়াক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, কমলা ও ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বিতর্কের পর কমলার সমর্থন বেড়েছে। পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যে কমলার সমর্থন ৫১ শতাংশ আর ট্রাম্পের ৪৫ শতাংশ। মিশিগানে কমলার সমর্থন ৫০ শতাংশ আর ট্রাম্পের ৪৫ শতাংশ। উইসকনসিনেও ১ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন কমলা। অন্যদিকে অ্যারিজোনা, জর্জিয়া ও নর্থ ক্যারোলাইনায় ট্রাম্প সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন বলে এক জরিপে দেখা গেছে।