মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের (৮০) বার্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর তাঁর চিকিৎসক ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি শারীরিকভাবে ‘দায়িত্ব পালনে পুরোপুরি উপযুক্ত’। ধারনা করা হচ্ছে, জো বাইডেন ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তখন তাঁর বয়স হবে ৮২ বছর।
বাইডেনের বার্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে অনেকের জানার আগ্রহ ছিল। চিকিৎসক জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্টের শরীরে ছোটখাটো কিছু সমস্যা ছাড়া তেমন কিছু ধরা পড়েনি। তাঁর বড় ধরনের স্নায়ুবিক সমস্যাও নেই।
হোয়াইট হাউস থেকে প্রকাশিত এক চিঠিতে বাইডেনের চিকিৎসক কেভিন ও’কোনর বলেন, ‘৮০ বছর বয়সেও প্রেসিডেন্ট যথেষ্ট সুস্থ ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য তিনি পুরোপুরি উপযুক্ত।’
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বয়সী প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে থাকা বাইডেন গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শরীরের নানা পরীক্ষা করান। ওয়াল্টার রিড ন্যাশনাল মিলিটারি মেডিকেল সেন্টারে গত বছর থেকে তিনি স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাচ্ছেন। এতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি যাবতীয় সুযোগ–সুবিধা পেয়ে থাকেন।
বাইডেন আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন কি না, সে ঘোষণা এখনো দেননি। তবে শিগগিরই ঘোষণা দিতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। রিপাবলিকান পার্টি থেকে বাইডেনের প্রতিপক্ষ হতে পারেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অবশ্য তিনি ছাড়াও জাতিসংঘে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হেলিও রিপাবলিকান দলীয় প্রাথমিক বাছাইয়ে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন।
ইতিমধ্যে বাইডেনের ঝুলিতে বেশ কিছু রাজনৈতিক অর্জন যোগ হয়েছে। ক্ষমতার দুই বছরের মধ্যে করোনা মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাফল্য দেখিয়েছেন, আফগানিস্তান যুদ্ধের ইতি টেনেছেন এবং ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে নিয়ে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন।
অবশ্য বাইডেনের বয়স নিয়েই এখন বড় প্রশ্ন উঠছে এবং রিপাবলিকানরা তাঁর বয়স নিয়ে কটাক্ষ করতেও ছাড়ছেন না। তাঁদের অভিযোগ, মানসিকভাবে তিনি অনুপযুক্ত।
ও’কোনরের চিঠিতে একজন উজ্জ্বল প্রেসিডেন্টের ছবি ফুটে উঠেছে যিনি স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন থেকে ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছেন। তিনি চিঠিতে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট কোনো তামাকজাত পণ্য ব্যবহার করেন না। তিনি মদ্যপান করেন না। তিনি সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন প্রচুর কাজ করেন।’
বাইডেনের উচ্চতা ছয় ফুট (১ দশমিক ৮৩ মিটার) এবং ওজন ১৭৮ পাউন্ড ( প্রায় ৮০ দশমিক ৭ কেজি)। ২০২২ সালে তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তবে তিনি করোনার টিকা নিয়েছেন। বুস্টার ডোজও নিয়েছেন। করোনায় তাঁর শরীরে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে, এমন বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয়নি।
ও’কোনর বলেন, ২০২১ সালের নভেম্বরে প্রেসিডেন্টের বার্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় যে ফলাফল এসেছিল, এবারও অনেকটা তা–ই আছে।
বয়স কী সমস্যা
প্রেসিডেন্ট বাইডেনের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর ডেমোক্র্যাট নেতারা ঘোষণা দিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট আবার প্রার্থী হলে তাঁরা তাঁর সঙ্গেই থাকবেন। তবে নেতারা আগ্রহী হলেও ভোটারদের মধ্যে বাইডেনকে নিয়ে আগ্রহ তুলনামূলক কম।
চলতি ফেব্রুয়ারিতে রয়টার্স/ইপসস পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, অর্ধেকের বেশি ডেমোক্র্যাট সমর্থক মনে করেন, দায়িত্ব পালনের মতো বয়স নেই বাইডেনের। তাঁর বয়স অনেক বেশি।
আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে রিপাবলিকান পার্টির প্রাথমিক বাছাইয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়ে নিকি হেলি (৫১) গত বুধবার বলেছেন, ৭৫ বছরের বেশি বয়সী যে কেউ নির্বাচন করতে চাইলে তাঁকে মানসিক ফিটনেসের পরীক্ষা দিয়ে আসতে হবে। তাঁর এই বক্তব্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
এক সাক্ষাৎকারে বয়স নিয়ে বাইডেনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর অর্জনের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, ‘আমার ওপর দৃষ্টি রাখুন।’