সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে গুলি করতে এআর–১৫ মডেলের আধা–স্বয়ংক্রিয় রাইফেল ব্যবহার করেছিলেন হামলাকারী টমাস ম্যাথিউ ক্রুকস। এই বন্দুক যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক জনপ্রিয়। এর আগেও দেশটিতে ভয়াবহ কিছু হামলায় এই বন্দুক ব্যবহার হতে দেখা গেছে।
স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যায় পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের বাটলার এলাকায় এক নির্বাচনী সমাবেশে অংশ নিয়েছিলেন ট্রাম্প। সেখানে তাঁর ওপর গুলি চালানো হয়। হামলায় ট্রাম্প গুরুতর আহত না হলেও নিহত হয়েছেন সমাবেশে অংশ নেওয়া এক ব্যক্তি। সন্দেহভাজন ওই হামলাকারীকেও হত্যা করা হয়েছে। তাঁর পাশেই পড়ে ছিল হামলায় ব্যবহার করা একটি এআর–১৫ রাইফেল।
এআর–১৫ আধা স্বয়ংক্রিয় রাইফেল। এর অর্থ সেটি দিয়ে একটানা একাধিক গুলি ছোড়া যায়। একই ধরনের এম–১৬ রাইফেল ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় থেকে ব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী। মার্কিন সেনাসদস্যরা পুরো স্বয়ংক্রিয় রাইফেলও ব্যবহার করেন। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেগুলো কিনতে পারেন না বেসামরিক লোকজন।
এআর–১৫ রাইফেলের গুলির গতিও অনেক বেশি। সাধারণ পিস্তলের গুলির চেয়ে তিন গুণ গতিতে ছুটতে পারে এই বন্দুকের গুলি। অনেক দূর থেকেও বন্দুকটি দিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা যায়। এর গুলিতে আক্রান্ত ব্যক্তি ত্বক ও শরীরের ভেতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গে মারাত্মক আঘাত পেতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয় পিস্তলের গুলিতে। তবে দেশটিতে বড় কিছু বন্দুক হামলার ঘটনায় এআর–১৫ রাইফেলের ব্যবহার হয়েছে। ২০২২ সালের মে মাসে টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের একটি স্কুলে বন্দুকটি দিয়ে হামলা চালিয়ে ১৯ শিশু ও দুই শিক্ষককে হত্যা করেন এক তরুণ। একই অস্ত্র দিয়ে ২০১৭ সালের অক্টোবরে লাস ভেগাসে হামলা চালিয়ে ৬০ জনকে হত্যা করেন এক ব্যক্তি।
যুক্তরাষ্ট্রে এআর–১৫ কেনা বেশ সহজ। অঙ্গরাজ্যভেদে কোনো নাগরিক বন্দুকের দোকানে গিয়ে বৈধ পরিচয়পত্র দেখিয়ে রাইফেল বা শটগান কিনতে পারেন। তবে এর আগে তাঁকে একটি যাচাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এই প্রক্রিয়ায় অস্ত্রের ক্রেতা আগে কোনো অপরাধ করেছেন কি না বা মানসিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হয়। তবে ব্যক্তিগত পর্যায়ে কেনাবেচার ক্ষেত্রে অনেক সময় এই যাচাই করা হয় না।
যুক্তরাষ্ট্রে বেসামরিক পর্যায়ে বন্দুক বিক্রির পক্ষে কাজ করা সংগঠন ন্যাশনাল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশনের (এনআরএ) ভাষ্যমতে, এই রাইফেলগুলো নিশানা পরীক্ষা ও নিজেদের প্রতিরক্ষার কাজে ব্যবহার করেন ক্রেতারা। তবে সমালোচকদের অনেকে বলছেন, এই বন্দুক এতটাই প্রাণঘাতী যে সেগুলো সাধারণ মানুষের হাতে পড়া উচিত নয়।
২০২৩ সালে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজনের মালিকানায় এআর–১৫ রয়েছে। বন্দুকটি এত জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে বড় একটি কারণ, এই রাইফেলে সহজেই অন্যান্য সরঞ্জাম সংযোজন করা যায়। যেমন বন্দুকটির মালিক চাইলেই এতে টেলিস্কোপ ও বড় আকারের ম্যাগাজিনসহ বাড়তি নানা জিনিস যুক্ত করতে পারেন।
বিল ক্লিনটন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ১৯৯৪ সালে বেসামরিক লোকজনের কাছে এআর–১৫–এর মতো বন্দুকগুলো (অ্যাসল্ট রাইফেল) বিক্রি নিষিদ্ধ ছিল। তবে প্রভাবশালী ন্যাশনাল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশনের চাপের মুখে ২০০৪ সালে ওই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।
বন্দুক আইন সংস্কারে সরকারের চেষ্টা তখন থেকেই থমকে আছে। সংস্কারের বিপক্ষে থাকা অনেকেরই অভিমত—মার্কিন সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনীতে সাধারণ মানুষের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অধিকার দেওয়া হয়েছে। আইন সংস্কার করা হলে সেই অধিকার খর্ব করা হবে।
এরপরও ক্যালিফোর্নিয়া, ইলিনয়, মেরিল্যান্ড, নিউ জার্সি ও ওয়াশিংটনের মতো বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে সাধারণ মানুষের কাছে অ্যাসল্ট রাইফেল বিক্রি নিষিদ্ধ। ক্যালিফোর্নিয়া সরকারের দাবি, বন্দুক নিষিদ্ধ করে আইন জারির কারণে গত এক দশকে ১৯ হাজার মানুষের প্রাণ বেঁচেছে।