এক বছরের বেশি সময় ধরে গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরায়েল। আগ্রাসনের শিকার হচ্ছেন পশ্চিম তীরের বাসিন্দারাও
এক বছরের বেশি সময় ধরে গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরায়েল। আগ্রাসনের শিকার হচ্ছেন পশ্চিম তীরের বাসিন্দারাও

‘কেউই আমাদের কথা ভাবেন না’—মার্কিন নির্বাচন নিয়ে পশ্চিম তীরের বাসিন্দাদের অনুভূতি

ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরে জলপাই তোলার মৌসুম শেষ হয়ে আসছে। সেখানকার ফিলিস্তিনি-মার্কিন উদ্যোক্তা জামাল জাগুলুল তাঁর জলপাই মাড়াইয়ের যন্ত্রটির পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু তাঁর মন পড়ে আছে, হাজার মাইল দূরে যুক্তরাষ্ট্রে মঙ্গলবার অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিনটিতে।

পশ্চিম তীরের তারমাস আয়া অঞ্চলে ফিলিস্তিনি-মার্কিনরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর ওই অঞ্চলের বাসিন্দাদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আসবে কি না, তা নিয়ে স্থানীয় অন্য মার্কিন পাসপোর্টধারীদের মতো তাঁর মনেও সন্দেহ দানা বেঁধেছে।

জাগলুলের বন্ধু বাসিম সাবরি। তিনিও ফিলিস্তিন ও যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টধারী। তিনিও এবার তৃতীয় কোনো দলের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। কারণ, গত আট বছরে যাঁরা সরকারে ছিলেন, তাঁরা দুর্দশা ডেকে এনেছেন বলে মনে করেন বাসিম।

পঞ্চাশোর্ধ্ব এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা এখানে অনেক সমস্যায় আছি। কেউই (যুক্তরাষ্ট্রের) আমাদের নিয়ে ভাবেন না।’

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পশ্চিম তীরেও সহিংসতা বেড়েছে। ১৯৬৭ সালে ইসরায়েল পশ্চিম তীরের ওই অংশের নিয়ন্ত্রণ নেয়।

গত বছরের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায়। এর প্রতিশোধ নিতে সে দিনই গাজায় যুদ্ধ শুরু করেছে ইসরায়েল।

জামাল জাগুলুল পুরোনো আনন্দের অভিব্যক্তি মুখে নিয়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের প্রসঙ্গ টানেন। ক্লিনটন প্রশাসনের অধীন অসলো চুক্তি হয়েছিল। এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন ‘প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)’ ও ইসরায়েল একে অপরকে স্বীকৃতি দেয়।

আমরা যদি এখন ভোট না দিই, তবে বিষয়টি পরবর্তী নির্বাচনগুলোয় আরব, ফিলিস্তিন ও মুসলমানদের গুরুত্ব তুলে ধরবে।
ওদেহ জুমা, ফিলিস্তিনি-মার্কিনি ও ক্যালিফোর্নিয়ার নাগরিক

‘এবার আমরা পরিবর্তন চাই। আমরা আরেকটি দলকে চাই, আরেকটি স্বাধীন ভিন্ন দল। অন্যরা আমাদের সাহায্য করছে না’, বলছিলেন জাগলুল।

জাগলুলের বন্ধু বাসিম সাবরি। তিনিও ফিলিস্তিন ও যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টধারী। তিনিও এবার তৃতীয় কোনো দলের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। কারণ, গত আট বছরে যাঁরা সরকারে ছিলেন, তাঁরা দুর্দশা ডেকে এনেছেন বলে মনে করেন বাসিম।

মার্কিন পাসপোর্টধারী পশ্চিম তীরের এই বাসিন্দা যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান সরকারের কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি জো বাইডেনকে যুদ্ধাপরাধী বলে সম্বোধন করেছেন।

বাইডেনের পূর্বসূরি ও বর্তমান রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পেরও সমালোচনা করেন বাসিম সাবরি। তিনি তাঁকে একজন উন্মাদ ও বর্ণবাদী বলে আখ্যায়িত করেন।

সাবরি বলেন, তিনি এবার জিল স্টেইনকে ভোট দেবেন। বহু বছরের পুরোনো গ্রিন পার্টির হয়ে প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থিতা করছেন জিল। এবারের নির্বাচনে তিনি প্রায় প্রতিটি দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যে ভালো অবস্থানে আছেন।

২০১২ ও ২০১৬ সালেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন জিল। ২০১২ সালে তিনি শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ ও ২০১৬ সালে এক শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন।    

গাজা যুদ্ধ বাসিমের মনে গভীর দাগ কেটেছে। তাঁর আশা, যুক্তরাষ্ট্র সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আরও জোরালোভাবে চেষ্টা করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ক্ষোভ ঝেড়ে বাসিম বলেন, এটি একমাত্র দেশ, যেটি বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষের যুদ্ধ বন্ধের সিদ্ধান্তে বাধা দিচ্ছে। গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর জন্য ইসরায়েলের প্রতি নিন্দাও জানায়নি দেশটি।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, গাজা যুদ্ধে এ পর্যন্ত ৪৩ হাজার ২৫৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু।

ফিলিস্তিনি-মার্কিনি ওদেহ জুমা ক্যালিফোর্নিয়ার নাগরিক। তিনি বছরে বেশ কয়েকবার তারমাস আয়ায় আসেন। তিনি তিক্ততার সঙ্গে ইঙ্গিত করেন, ইসরায়েলকে মার্কিন সামরিক বাহিনী সহায়তা করছে।

ওদেহ বলেন, ফিলিস্তিনি হিসেবে আমাদের দুশ্চিন্তা হয় যে ফিলিস্তিন ও ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ করার বিষয়টি রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের স্বার্থে এড়িয়ে গেছে।

ওদেহ ৫ নভেম্বর নির্বাচনের রাতে এ–সংক্রান্ত খবর দেখার পরিকল্পনা করেছেন। কিন্তু তিনি এবার ভোট দেবেন না।

এই ফিলিস্তিনি-মার্কিনি বলেন, ‘আমরা যদি এখন ভোট না দিই, তবে বিষয়টি পরবর্তী নির্বাচনগুলোয় আরব, ফিলিস্তিন ও মুসলমানদের গুরুত্ব তুলে ধরবে।’

২০২২ সালের এক জনশুমারিতে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১ লাখ ৭২ হাজার ফিলিস্তিনি-মার্কিনি বসবাস করেন। তাঁদের মধ্যে অনেকে মিশিগান ও পেনসিলভানিয়ার মতো দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোর বাসিন্দা।

পশ্চিম তীরেও হাজারো ফিলিস্তিনি-মার্কিনির বসবাস। চলতি বছর সেখানে একজন মার্কিন ও দুজন দ্বৈত নাগরিককে হত্যার ঘটনা এসব মানুষকে নাড়িয়ে দিয়েছে।