বিতর্কের মঞ্চে কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প
বিতর্কের মঞ্চে কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প

‘কমরেড’, ‘উগ্র’সহ আরও যেসব শব্দে কমলার বিরুদ্ধে গলা চড়াচ্ছেন রিপাবলিকানরা

তিনি একজন ‘মার্ক্সবাদী’। তিনি ভীষণ ‘উগ্র’। তিনি আমেরিকাকে ‘ধ্বংস’ করে দিতে চান—এসব তকমা দেওয়া হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে। তিনি এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী। নির্বাচন সামনে রেখে তাঁর বিরুদ্ধে নানা নেতিবাচক প্রচারণা চালাচ্ছেন রিপাবলিকানরা।

আসন্ন নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন লড়তে চেয়েছিলেন। পরে তিনি তাঁর প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে কমলাকে সমর্থন দেন। এরপর দলের চূড়ান্ত মনোনয়ন পান কমলা। প্রার্থী হিসেবে কমলার নাম চূড়ান্ত হওয়ায় প্রতিপক্ষ রিপাবলিকান শিবির তাঁর সমালোচনায় গলা চড়ায়।

বিশ্লেষকদের মতে, কমলার বিরুদ্ধে রিপাবলিকানদের নেতিবাচক ও আগ্রাসী সমালোচনার ভাষা এতটাই তীব্র যে তা বাইডেনের বিরুদ্ধে চলা প্রচারণার চেয়েও কড়া।

ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান—দুই দলের প্রার্থীসহ তাঁদের প্রতিনিধিদের টেলিভিশনে দেওয়া বক্তব্য ও বিভিন্ন মন্তব্যের প্রায় ১২০ মিনিটের রেকর্ড বিশ্লেষণ করেছে এএফপি। গত ১ মে থেকে ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যকার এসব বক্তব্য-মন্তব্যে রিপাবলিকানদের পক্ষ থেকে ডেমোক্রেটিক প্রার্থীর বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ন করার কৌশল উঠে এসেছে।

একসময় রিপাবলিকানদের পক্ষ থেকে বাইডেনের সমালোচনা করতে গিয়ে ‘কুটিল’, ‘খারাপ’, ‘উদ্যমহীন’ শব্দগুলো ব্যবহার করা হতো। এখন কমলাকে বলা হচ্ছে ‘সীমান্ত জার’। অর্থাৎ তিনি এমন একজন সরকারি কর্মকর্তা, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তে অনিবন্ধিত অভিবাসন সমস্যার সমাধানে বাজেভাবে ব্যর্থ হয়েছেন।

রিপাবলিকান সমাবেশগুলোয় কমলার বিরুদ্ধে ‘সীমান্ত জার’ শব্দটা ৮০ বারের বেশি ব্যবহৃত হয়েছে। কমলার বিরুদ্ধে ‘উন্মুক্ত সীমান্ত’ নীতির অভিযোগ তুলে তাঁর কড়া সমালোচনা করে আসছেন রিপাবলিকানরা। তাঁরা বলছেন, এমন উদার নীতির ফলে সীমান্ত দিয়ে লাখ লাখ অবৈধ ‘এলিয়েন’ (অভিবাসী) স্রোতের মতো যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করবে।

প্রচারণায় নেতিবাচক শব্দগুলো এখন বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। এএফপি বলছে, বাইডেনের তুলনায় কমলার বিরুদ্ধে ৩০ শতাংশ বেশি নেতিবাচক ভাষায় প্রচার চলছে।

ট্রাম্প-সমর্থকেরা টেলিভিশনের পর্দায় কমলার বিরুদ্ধে ‘অপরাধ’, ‘ধ্বংস’, ‘খারাপ’—এমন নেতিবাচক শব্দ ব্যবহার করছেন।

একই সময় ডেমোক্র্যাটরা তুলনামূলক ইতিবাচক শব্দ ব্যবহার করছেন। কমলা প্রার্থিতায় আসার পর ‘স্বাধীনতা’, ‘বিজয়’, ‘উচ্ছ্বাস’-এর মতো শব্দগুলো টক শোতে ৩০ শতাংশ বেশি এবং নির্বাচনী সমাবেশ ৭০ শতাংশ বেশি ব্যবহৃত হয়েছে।

ট্রাম্প ও তাঁর সহযোগীরা বাইডেনের তুলনায় কমলাকে আরও বেশি উগ্র হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছেন। এ জন্য তাঁরা কমলাকে ‘বামপন্থী’ ও ‘উগ্র’ হিসেবে বর্ণনা করছেন।

গত ২১ জুলাই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন বাইডেন। এরপর হঠাৎ কমলার ক্ষেত্রে ‘উদারপন্থী’ শব্দের ব্যবহার লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে যায়। সমাবেশে আট গুণ বেশি এবং টক শোতে ছয় গুণ বেশি ব্যবহার করা হয় এই শব্দ।

আগে বাইডেনের ক্ষেত্রে ‘সমাজতন্ত্রী’ ও ‘মার্ক্সবাদী’ বিশেষণ খুব একটা ব্যবহার হতে দেখা যায়নি। কিন্তু পরে রিপাবলিকানদের শব্দভান্ডারে এগুলো খুবই সাধারণ হয়ে ওঠে।

এমনকি ট্রাম্প তাঁর ডেমোক্রেটিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে ‘কমরেড কমলা’ বলেও উল্লেখ করেছেন। বিভিন্ন নির্বাচনী সমাবেশে ট্রাম্প অন্তত ৩০ বার কমলার বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে এই শব্দ ব্যবহার করেছেন।

এএফপির বিশ্লেষণে দেখা যায়, কমলাকে চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে যেসব শব্দ বা শব্দবন্ধনী ব্যবহার হয়, সেগুলোর মধ্যে ‘কমরেড’ সপ্তম অবস্থানে আছে। এর বিপরীতে ডেমোক্র্যাটরা তাঁদের প্রার্থী কমলার ক্ষেত্রে ‘নেতা’, ‘প্রস্তুত’ ইত্যাদি বলেছেন। এখানে ‘প্রস্তুত’ বলতে কমলা পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হতে প্রস্তুত বোঝানো হয়েছে।

কমলাকে চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে ডেমোক্র্যাটরা যেসব শব্দ বা শব্দবন্ধনী ব্যবহার করেছেন, সেগুলোর শীর্ষ ২০টির মধ্যে ‘লড়াই’, স্বাধীনতা’ ও ‘বিশ্বাস’ রয়েছে। এসব শব্দে ডেমোক্র্যাটরা কমলাকে নিয়ে তাঁদের আশার অনুভূতি প্রকাশ করেন।