যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গণতন্ত্রের জন্য হুমকি। শত্রু দেশ রাশিয়ার প্রতি তিনি অনুগত। যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন সমস্যা সমাধানে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন তিনি।
গতকাল বৃস্পতিবার স্টেট অব দ্য ইউনিয়নের ভাষণে এভাবেই নিজের পূর্বসূরি ও আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্পের সমালোচনায় মুখর ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বার্ষিক এ ভাষণে ট্রাম্পের কঠোর সমালোচনার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নানা বিষয়, গাজা সংঘাত ও রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গেও কথা বলেন তিনি।
মার্কিন কংগ্রেসে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ৬৮ মিনিট ভাষণ দেন বাইডেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি ছিল তাঁর তৃতীয় স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণ। সেখানে সরাসরি ট্রাম্পের নাম উল্লেখ না করে বাইডেন অভিযোগ করেন, ট্রাম্প ও তাঁর দল রিপাবলিকান দলের সমর্থকেরা ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি মার্কিন ইতিহাস বদলে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাইডেনের জয়ের পর সেদিন যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটলে হামলা–ভাঙচুর চালান ট্রাম্পের সমর্থকেরা।
ভাষণে ৮১ বছর বয়সী বাইডেন বলেন, ‘৬ জানুয়ারি যা ঘটেছিল, তা আমার পূর্বসূরি ও এখানে আপনাদের কয়েকজন ধামাচাপা দিতে চেয়েছিলেন। তবে আমি সেটা করব না। আপনি যখন নির্বাচনে জিতবেন, তখনই শুধু দেশকে ভালোবাসবেন, তা হতে পারে না।’
যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির বাইরে গণতন্ত্র হুমকির মধ্যে রয়েছে বলে ভাষণের শুরুতেই উল্লেখ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি অভিযোগ করেন, পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যরা নিজেদের প্রতিরক্ষায় আরও ব্যয় না করলে দেশগুলোর ওপর হামলা চালাতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্প। বাইডেনের ভাষায়, ‘আমি মনে করি, এটা আপত্তিকর, বিপজ্জনক ও অগ্রহণযোগ্য।’
বাইডেনের এসব সমালোচনার জবাবে অবশ্য চুপ থাকেননি ট্রাম্প। নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লিখেছেন, ‘তিনি (বাইডেন) বলেছেন, আমি নাকি রুশ প্রেসিডেন্টের কাছে নতি স্বীকার করেছি। তিনি তো তাঁকে (পুতিন) ইউক্রেনসহ সবকিছুই দিয়ে দিয়েছেন।’
ট্রাম্প আরও লিখেছেন, ‘তিনি (বাইডেন) যেভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং চিৎকার–চেঁচামেচি করেছেন, তা দেশকে একই ছাতার নিচে আনতে সাহায্য করবে না।’
আগামী নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তাতে বাইডেন যে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে এবারও প্রার্থী হচ্ছেন, তা নিশ্চিতই বলা চলে।
রিপাবলিকান পার্টি থেকে প্রাথমিক বাছাইয়ে ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পথে। ফলে এ দুজনই হয়তো নির্বাচনের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন। জনমত জরিপে দেখা গেছে, চার বছর আগের মতো আবার ট্রাম্প–বাইডেনের লড়াই দেখতে পারেন মার্কিন জনগণ।
ফিলিস্তিনের গাজায় নির্বিচার হামলার শুরুর প্রথম থেকেই ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে পেয়েছে ইসরায়েল। এ নিয়ে ঘরে–বাইরে কম সমালোচনার মুখে পড়তে হয়নি জো বাইডেনকে। এরই মধ্যে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ জোরদার করতে উপত্যকাটির উপকূলে একটি অস্থায়ী বন্দর নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণে এ ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, এই বন্দরের মাধ্যমে গাজায় খাবার, পানি, ওষুধ ও অস্থায়ী আশ্রয়ের সরঞ্জাম পাঠানো হবে।
গাজায় ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে বাইডেন বলেন, ‘ইসরায়েলি নেতৃত্বের উদ্দেশে আমি বলব, মানবিক সহায়তার বিষয়টিকে গৌণ হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না। এটি নিয়ে দর–কষাকষিও করা যাবে না। নির্দোষ মানুষকে রক্ষা ও তাঁদের জীবন বাঁচানোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।’
ভাষণে ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গও তুলেছেন বাইডেন। ইউক্রেনকে সহায়তার জন্য নতুন তহবিলের ছাড় দিতে কংগ্রেস সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। কিয়েভকে নতুন করে সহায়তার বিরোধিতা করে আসছেন কংগ্রেসে রিপাবলিকান দলের অনেক সদস্য। বাইডেন বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট পুতিনকে আমি বহুদিন ধরে চিনি। তাঁর প্রতি আমি একটি সরল বার্তা দিতে চাই। সেটি হলো, আমরা পিছু হটব না। আমরা নতি স্বীকার করব না।’
বাইডেনের বক্তব্যের বেশির ভাগ অংশজুড়েই ছিল যুক্তরাষ্টের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি। তিনি বলেন, তিনি ক্ষমতায় বসার পর দেশের অর্থনীতি করোনা মহামারির কারণে বিপর্যস্ত ছিল। নিজের কৌশলে সেই অর্থনীতিকে টেনে তুলেছেন তিনি। বর্তমানে মার্কিন অর্থনীতি বিশ্বের কাছে ঈর্ষার কারণ। তিন বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে দেড় কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হয়েছে।
ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিক সংগঠন ও মধ্যবিত্তদের প্রতি ইতিবাচক কথা বলেন বাইডেন। আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যেন যথাযথ পরিমাণ কর দেয়, তা নিশ্চিত করার বিষয়টিও তুলে ধরেন। বাইডেন বলেন, ‘আপনারা কি লাখ লাখ ডলার আয় করতে চান? এটা অসাধারণ। শুধু যথাযথ পরিমাণ কর দিয়ে যান। এটা আমাদের দেশকে মহান করে তুলবে।’