যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফ্লোরিডার বাসায় তল্লাশি চালিয়ে ১১ সেট অতি গোপন নথি পেয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এফবিআই)। জব্দ করা নথির বিষয়ে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি কোনো অপরাধ করেননি। নথিগুলোতে গোপন কিছু নেই এবং নিরাপদ। মার্কিন সংবাদ মাধ্যমগুলোর বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, সাবেক প্রেসিডেন্টের পাম বিচের মার-এ-লাগো রিসোর্ট থেকে নথি উদ্ধারে এ অভিযান চালানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ তল্লাশি পরোয়ানার বিষয়বস্তু প্রকাশ করতে গত বৃহস্পতিবার বিচারককে অনুরোধ জানান। ওই পরোয়ানার ভিত্তিতেই গত সোমবার মার-এ-লাগোতে তল্লাশি চালিয়েছিল এফবিআই। এই পরোয়ানার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলা হয়নি। তবে মার্কিন সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, তারা পরোয়ানাটি দেখেছে। রিপাবলিকান পার্টির নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প এই তল্লাশি অভিযানকে রাজনৈতিক প্রতিশোধ হিসেবে দেখছেন।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্পের বাড়ি থেকে এফবিআইয়ের উদ্ধার করা জিনিসের মধ্যে রয়েছে ২০টি বাক্স, ফটো বাইন্ডার এবং ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের মিত্র রাজনৈতিক পরামর্শদাতা রজার স্টোনের পক্ষে লেখা একটি চিঠি। এ ছাড়া ‘ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট’ সম্পর্কে লেখা একটি নথি উদ্ধার করা হয়েছে। যদিও ওই নথিতে কী বলা হয়েছে তা স্পষ্ট জানা যায়নি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নথিগুলো কয়েকটি শ্রেণিতে আলাদা করা হয়েছে। একটি তালিকায় দেখা যায়, এর একটি‘টিএস/এসসিআই’ বা অতি গোপন/সংবেদনশীল তথ্যের জন্য সংরক্ষিত। যা মার্কিন নিরাপত্তার জন্য ‘ব্যাপক গুরুতর’ ক্ষতির কারণ হতে পারে। এ ছাড়া তালিকায় ‘অতি গোপন নথির চার সেট’, ‘গোপন নথির তিনটি সেট’ এবং ‘গোপনীয়’ নথির তিনটি সেট অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া নথিগুলোর বিষয়ে এর চেয়ে বেশি বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি।
ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে এক বিবৃতিতে বলেছেন, উদ্ধারকৃত আইটেমগুলো ‘সব ডিক্লাসিফাইড’ এবং নিরাপদে সংরক্ষণ করা হয়েছিল। তিনি বলেন, তল্লাশি পরোয়ানা চালানোর আগেই তিনি আইটেমগুলো হস্তান্তর করতেন। তারা চাইলে যেকোনো সময় এটি পেতে পারত। অবশ্য তল্লাশির সময় ফ্লোরিডায় ছিলেন না ট্রাম্প।
গত বছরের জানুয়ারিতে দায়িত্ব শেষে হোয়াইট হাউস ছাড়ার সময় ট্রাম্প অবৈধভাবে নথিপত্র সরিয়ে নিয়েছেন কি না, সেই তদন্তেরই অংশ হিসেবে এই তল্লাশি চালানো হয়। বিচার বিভাগ মনে করছে, এসবের মধ্যে রাষ্ট্রীয় কিছু অতি গোপনীয় নথি রয়েছে।
রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মেরিক গ্যারল্যান্ড এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে এই তল্লাশি অভিযানের অনুমোদন দিয়েছেন। গারল্যান্ড ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নিয়োগ দেওয়া একজন কর্মকর্তা। তল্লাশিকালে জব্দ করা সামগ্রীগুলোর একটি সম্পাদিত রসিদও প্রকাশ করতে চান বিচার বিভাগ।
তদন্তের ঘটনা প্রকাশ্যে নিশ্চিত করার এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রে একেবারেই বিরল। ব্যক্তি অধিকার সুরক্ষায় চলমান তদন্তের বিষয়ে আলোচনা করেন না যুক্তরাষ্ট্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা। অবশ্য এ ঘটনায় সোমবার রাতে ট্রাম্প নিজেই এক বিবৃতি দিয়ে তল্লাশির বিষয়টি জানিয়েছেন।
গ্যারল্যান্ড বলেন, তল্লাশির বিষয়টি সাবেক প্রেসিডেন্ট কর্তৃক জনসমক্ষে নিশ্চিত করা, পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি এবং এ বিষয়ে যথেষ্ট জনস্বার্থের প্রেক্ষাপটে পরোয়ানাটি প্রকাশ করার অনুরোধ জানিয়েছেন বিচার বিভাগ।
রয়টার্স জানায়, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তল্লাশির বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করেছেন। তিনি ওয়াশিংটন পোস্ট-এর প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় পারমাণবিক অস্ত্রের অতি গোপনীয় নথির বিষয়ে তল্লাশির বিষয়টি হোক্স বা ভুয়া খবর হিসেবে মন্তব্য করেন।
ট্রাম্পের বাসভবনে এফবিআইয়ের অভিযান ঘিরে ইতিমধ্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে ঝড় উঠেছে। ২০২৪ সালে তিনি আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়বেন, এমন আলোচনার মধ্যেই তাঁর বাসভবনে এ ধরনের অভিযান চালানো হলো। বৃহস্পতিবার নিজের তৈরি ট্রুথ সোশ্যাল নামের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, তাঁর অ্যাটর্নিরা পুরোপুরি সহযোগিতা করছেন। সরকার যা চাইছে, তা তাঁদের কাছে থাকলে সহজেই পেতে পারত। কিন্তু তা না করে কোনো কিছু না জানিয়ে সকাল সাড়ে ছয়টার সময় মার-এ-লাগোতে অভিযান চালানো হলো। এফবিআই এজেন্টরা ফার্স্ট লেডির বাথরুমসহ পোশাক-পরিচ্ছদ ও ব্যক্তগত সামগ্রীও পরীক্ষা করেন। এদিকে রিপাবলিকান পার্টির শীর্ষ নেতারা বিচার বিভাগ ও এফবিআইয়ের কঠোর নিন্দা করেছেন।