হোয়াইট হাউসে মোদিকে লালগালিচা সংবর্ধনা

হোয়াইট হাউসে করমর্দন করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে স্বাগত জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন
ছবি: রয়টার্স

লাল কার্পেটের প্রান্তে দাঁড়িয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গাড়ি থেকে নামলে করমর্দন করে তাঁকে স্বাগত জানান তিনি। আজ বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সকালে হোয়াইট হাউসে এ চিত্র দেখা গেল। আজ সকালে সেখানে মোদিকে দেওয়া হলো লালগালিচা সংবর্ধনা।

বিশেষ আমন্ত্রণে সর্বোচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক প্রটোকল নিয়ে নরেন্দ্র মোদি এই রাষ্ট্রীয় সফর করছেন। আজ সেখানে পৌঁছালে জো বাইডেন ও ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন তাঁকে স্বাগত জানান। এ সময় সেখানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে দেখা যায়।

নরেন্দ্র মোদি যাবেন, এটা জেনেই আজ সকাল থেকে হোয়াইট হাউসের বাইরে ভারতীয়দের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। ভারতের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে, হাতে ভারতের জাতীয় পতাকা নিয়ে সেখানে অনেকেই হাজির হয়েছিলেন।

ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো এ অভ্যর্থনার সরাসরি সম্প্রচার করেছে। এতে দেখা যায়, আনুষ্ঠানিকতা শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন নরেন্দ্র মোদি ও বাইডেন।

মোদি সেখানে বলেন, ‘আমি তিন দশক আগে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলাম এবং বাইরে থেকে হোয়াইট হাউস দেখেছিলাম। এই প্রথম ভারতীয়-আমেরিকানদের জন্য হোয়াইট হাউসের এই বিশাল ফটক খুলে দওয়া হলো।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের বৈচিত্র্য নিয়ে গর্ব করি। বিশ্বাস করি সবার মঙ্গলে, সবার সমৃদ্ধিতে।’

হোয়াইট হাউসের ব্যালকনি থেকে লোকজনের উদ্দেশে হাত নাড়ান নরেন্দ্র মোদি ও জো বাইডেন

এদিকে নরেন্দ্র মোদিকে স্বাগত জানিয়ে জো বাইডেন বলেন, ‘আপনাকে হোয়াইট হাউসে স্বাগত। সর্বোচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক প্রটোকল দিয়ে আপনাকে এই সফরে আনতে পেরে আমি গর্বিত। একবিংশ শতাব্দীতে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক সবচেয়ে সুদৃঢ় সম্পর্ক।’ ‘উই দ্য পিপল’—এই শব্দবন্ধ দিয়ে দুটি জাতি (ভারতীয় ও মার্কিন) একে অপরের সঙ্গে জুড়ে আছে।

স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে দুই দেশ ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন জো বাইডেন। এ সময় তিনি কোয়াড জোটের প্রসঙ্গ টেনে আনেন তিনি। নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশে জো বাইডেন বলেন, ‘আপনার সহাযোগিতার কারণে ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে নিরাপদ, মুক্ত ও সমৃদ্ধ অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে।’ তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন রোধ, স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন ও ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার কারণে সৃষ্ট বিভিন্ন সংকট সমাধানে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে কাজ করছে।

এদিকে দুই দেশের মধ্যকার বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে মোদি বলেন, ‘আমি ও প্রেসিডেন্ট দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করব। আমি আত্মবিশ্বাসী, এই আলোচনা ইতিবাচক হবে।’ সেখানে আঞ্চলিক, বৈশ্বিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়েও আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। বৈশ্বিক পর্যায়ে শান্তি, স্থিতিশীলতা আনতে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত একসঙ্গে কাজ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন নরেন্দ্র মোদি।

আজ হোয়াইট হাউসেই নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে জো বাইডেনের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এ বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর। এ ছাড়া ভারতীয়-আমেরিকানদের এক সভায়ও কথা বলবেন তিনি। রাষ্ট্রীয় নৈশভোজেও অংশ নেবেন নরেন্দ্র মোদি। একসময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে যাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা দেওয়া হয়নি, তাঁকেই সর্বোচ্চ কূটনৈতিক সম্মাননা দিচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। যুক্তরাষ্ট্র এখন ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে অতিগুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে দেখছে।

হোয়াইট হাউসে হেঁটে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি ও জো বাইডেন

গুরুত্বপূর্ণ দুই চুক্তি

এদিকে মোদি হোয়াইট হাউসে যাওয়ার আগেই আজ সামরিক চুক্তির ঘোষণা আসে। যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ইলেকট্রিকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের অ্যারোস্পেস ইউনিটের সঙ্গে ভারতের হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকস লিমিটেড’-এর (হ্যাল) চুক্তি হয়েছে। এ চুক্তির ফলে যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন তৈরি করবে তারা। এ চুক্তির আওতায় জেনারেল ইলেকট্রিকের তৈরি ই-৪১৪ ইঞ্জিন এখন ভারতে তৈরি হবে।

ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ‘হ্যাল’-এ সম্পূর্ণ ভারতীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ‘তেজস মার্ক-২’ হালকা যুদ্ধবিমানের ‘জিই-এফ ৪১৪’ টার্বোফ্যান ইঞ্জিন তৈরির চেষ্টা ভারত অনেক দিন ধরেই করছে। প্রধানমন্ত্রী মোদির ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচি সফল করতে এ প্রকল্প যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। নতুন এ চুক্তির ফলে মোদির এ কর্মসূচি আরও বেগবান হতে যাচ্ছে।

এদিকে গুরুত্বপর্ণ আরেকটি চুক্তি সই হয়েছে গতকাল। এ চুক্তির ফলে যুক্তরাষ্ট্রের মেমোরি চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মাইক্রন টেকনোলজি ভারতে ৮২ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে। ভারতের গুজরাটে নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে। সেখানে চিপ সংযোজন, পরীক্ষা করা হবে।

মাইক্রন জানিয়েছে, এই বিনিয়োগে সহযোগিতা করছে গুজরাট সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকার। এর ফলে মোট বিনিয়োগ গিয়ে ঠেকবে ২৭৫ কোটি মার্কিন ডলারে। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ আসবে কেন্দ্রীয় সরকার থেকে। ২০ শতাংশ আসবে গুজরাট সরকার থেকে। আর বাকি অর্থ দেবে তারা।