যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় নিজ বাড়ি মার-আ-লাগোর পাশে পাম বিচ এলাকায় গলফ মাঠের কাছে ঝোপের ভেতর প্রায় ১২ ঘণ্টা লুকিয়ে ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের সন্দেহভাজন হত্যাচেষ্টাকারী। কয়েক মাসের মধ্যে সাবেক এই প্রেসিডেন্টকে দ্বিতীয়বারের মতো হত্যাচেষ্টার এ ঘটনা নিয়ে কর্তৃপক্ষের এমন বক্তব্যে বিস্মিত স্থানীয়রা।
ট্রাম্প তাঁর কাছের বন্ধু আবাসন ব্যবসায়ী স্টিভ উইটকফকে নিয়ে ওয়েস্ট পাম বিচের ট্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল গলফ ক্লাবে গত রোববার দুপুরের পর যান। এ সময় আবহাওয়া ছিল গরম, আকাশ মেঘলা।
যুক্তরাষ্ট্রে নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প ওই দিন বেলা ১টা ৩১ মিনিটে পাম বিচ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের কাছে ব্যস্ত সড়ক লাগোয়া ফিফথ ফেয়ারওয়েতে (গলফ মাঠের একটি অংশ) অবস্থান করছিলেন। ওই মুহূর্তে ট্রাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিক্রেট সার্ভিস সদস্যদের একজন মাঠের কাছে ঝোপের ভেতরে বন্দুকের নল দেখতে পান।
ট্রাম্পকে তাৎক্ষণিকভাবে নিরাপদে সরিয়ে নেন সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা। তাঁকে হত্যাচেষ্টার এ ঘটনা স্মরণ করে পরদিন গতকাল সোমবার রাতে ট্রাম্প বলেন, গলফ খেলার সময় কাছাকাছি দূরত্বে ‘সম্ভবত চার বা পাঁচটি’ গুলির শব্দ শুনেছেন তিনি।
সন্দেহভাজন ব্যক্তির সঙ্গে ছিল দুটি ডিজিটাল ক্যামেরা, একটি কালো রঙের প্লাস্টিকের খাবারের ব্যাগ ও একটি আধা-স্বয়ংক্রিয় বন্দুক। বন্দুকটি থেকে প্রায় ৪৪০ গজ দূরে গুলি ছোড়া সম্ভব।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা বলেন, ৩০০ থেকে ৫০০ গজ দূরে থাকা সন্দেহভাজন বন্দুকধারীকে লক্ষ্য করে সিক্রেট সার্ভিসের করিৎকর্মা একজন সদস্য গুলি ছোড়েন। সন্দেহভাজন বন্দুকধারী যেখানে ওৎ পেতে ছিলেন, সেখান থেকে ট্রাম্পকে পরিষ্কারভাবে দেখার সুযোগ ছিল না।
মার–এ–লাগো অবকাশকেন্দ্র থেকে সামাজিকমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) সরাসরি সম্প্রচারে এসে ট্রাম্প বলেন, ‘গুলি ছোড়ার আশঙ্কা তাৎক্ষণিকভাবে আঁচ করতে পেরেছিলেন সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা এবং তাঁরা আমাকে জাপটে ধরেন।’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমরা গাড়িতে উঠলাম এবং বেশ ভালোভাবেই চলে এলাম। আমি নিরাপত্তাকর্মীর সঙ্গে ছিলাম এবং তিনি চমত্কার কাজ করেছেন।’
তদন্তকারীরা বলছেন, বন্দুকধারী কোনো গুলি ছোড়েননি। গলফ মাঠ ঘিরে রাখা নিপুণভাবে সাজানো ঝোপ ও লম্বা পাম গাছের আড়ালে লুকিয়ে ছিলেন তিনি।
ফেডারেল কর্মকর্তারা বলেন, মোবাইল ফোনের রেকর্ড অনুযায়ী, বন্দুকধারী রোববার দিবাগত রাত ১টা ৫৯ মিনিট থেকে গলফ মাঠের একটি বেষ্টনির কাছে ওত পেতে ছিলেন। আর সিক্রেট সার্ভিসের একজন সদস্য বেলা ১টা ৩১ মিনিটে তাঁর অবস্থান করার বিষয়টি টের পান।
গুলি ছোড়ার আশঙ্কা তাৎক্ষণিকভাবে আঁচ করতে পেরেছিলেন সিক্রেট সার্ভিস সদস্যরা এবং তাঁরা আমাকে জাপটে ধরেন।—ডোনাল্ড ট্রাম্প, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী
সন্দেহভাজন ব্যক্তির সঙ্গে ছিল দুটি ডিজিটাল ক্যামেরা, একটি কালো রঙের প্লাস্টিকের খাবারের ব্যাগ ও একটি আধা–স্বয়ংক্রিয় বন্দুক। বন্দুকটি থেকে প্রায় ৪৪০ গজ দূরে গুলি ছোড়া সম্ভব।
রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিকতম নির্বাচনী প্রচার কর্মসূচিটি ছিল তাঁকে হত্যাচেষ্টার আগের দিন গত শনিবার সকালে ইউটাহ অঙ্গরাজ্যে।
ফ্লোরিডার বাসিন্দারা বলেন, নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত না থাকলে অধিকাংশ সময় ট্রাম্প রোববার দিনটি ওয়েস্ট পাম বিচের গলফ ক্লাবে কাটান।
তবে সিক্রেট সার্ভিসের পরিচালক রোনাল্ড রো গতকাল বলেন, গত রোববার গলফ মাঠে সাবেক প্রেসিডেন্টের যাওয়ার কথা ছিল না। তাই ট্রাম্পের জন্য শেষ মুহূর্তে তাঁদের নিরাপত্তা পরিকল্পনা তৈরি করতে হয়।
এদিকে, রোববার ট্রাম্পের পাম বিচে গলফ খেলতে যাওয়ার কথা না থাকলেও বন্দুকধারী কীভাবে জানলেন, সাবেক এই প্রেসিডেন্ট সেদিন সেখানে আসছেন বা তাঁর আসার বিষয়টি কি তাঁর (বন্দুকধারীর) অনুমানের সঙ্গে কাকতালীয়ভাবে মিলে গেছে—এমন নানা প্রশ্নের উদয় হয়েছে অনেকের মনেই। সন্দেহভাজন ব্যক্তি কীভাবেইবা এত দীর্ঘসময় বন্দুক নিয়ে ঝোপে লুকিয়ে ছিলেন—উঠেছে সেই প্রশ্নও।
উল্লেখ্য, সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা ঝোপের ভেতরে বন্দুকের নল দেখতে পেয়ে অন্তত চারটি গুলি চালান। তখন ওই ব্যক্তি বন্দুক ফেলে গাড়িতে করে পালিয়ে যান।
মার্কিন কর্মকর্তারা আরও জানান, প্রত্যক্ষদর্শী এক ব্যক্তি বন্দুকধারীর গাড়ি ও লাইসেন্স প্লেটের ছবি তুলে রাখেন। পরে ফ্লোরিডার বিভিন্ন সংস্থার কাছে গাড়ির তথ্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সে তথ্যের ভিত্তিতে পাশের মার্টিন এলাকায় গাড়িটি থামানো হয়। গ্রেপ্তার করা হয় সন্দেহভাজন রায়ান ওয়েসলি রুথকে (৫৮)।
গতকাল রায়ান রুথকে জনাকীর্ণ পাম বিচের আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে তিনি তাঁর আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তাঁকে হাসতেও দেখা গেছে। প্রাথমিকভাবে তাঁর বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ আনা হয়েছে। পরে আরও অভিযোগ আনা হতে পারে।
নিউইয়র্ক টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, অভিযুক্ত রুথের বাড়ি নর্থ ক্যারোলাইনায়। এক সময় নির্মাণশ্রমিক ছিলেন তিনি। সামরিক বাহিনীতে কাজ করার কোনো অভিজ্ঞতা তাঁর নেই। তবে একাধিকবার তিনি সশস্ত্র লড়াইয়ে অংশ নেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। বিশেষ করে ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়া সামরিক অভিযান শুরু করার পর এ যুদ্ধে অংশ নিতে ইউক্রেন যাওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছিলন তিনি।
এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ইউক্রেন যুদ্ধে অংশগ্রহণ ও প্রয়োজনে প্রাণ বিসর্জনের ইচ্ছার কথাও জানিয়েছিলেন ওয়েসলি রুথ। পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, ‘আমি ইউক্রেনে গিয়ে স্বেচ্ছায় যুদ্ধে অংশ নিতে চাই। প্রয়োজন হলে প্রাণও দেব।’
গত বছর নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওয়েসলি রুথ জানিয়েছিলেন, যুদ্ধে অংশ নিতে তিনি ইউক্রেন গিয়েছিলেন। তবে বয়সের কারণে তাঁকে যুদ্ধে অংশ নিতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল।
বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, ২০২২ সালের এপ্রিলে কিয়েভের স্বাধীনতা চত্বরে এক বিক্ষোভে দেখা গিয়েছিল রুথকে। সে ঘটনার একটি ভিডিও চিত্র রয়েছে তাদের কাছে।
এর আগেও অপরাধমূলক ঘটনায় জড়িয়েছিলেন ওয়েসলি রুথ। ২০২২ সালে নর্থ ক্যারোলাইনার বাড়িতে একটি স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রসহ তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।