হাফপোস্টের প্রতিবেদন

কখনো অনুশোচনা করেননি কিসিঞ্জার

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার
ফাইল ছবি: এএফপি

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারকে ‘আমেরিকার সবচেয়ে কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী’ হিসেবে অভিহিত করেছে দেশটির প্রগতিশীল সংবাদ ওয়েবসাইট হাফপোস্ট।

গতকাল বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের কানেটিকাট অঙ্গরাজ্যের নিজ বাড়িতে কিসিঞ্জার মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ১০০ বছর। তাঁর মৃত্যুর কারণ তাৎক্ষণিকভাবে জানানো হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মৃত্যুর সংবাদটি ‘হেনরি কিসিঞ্জার, আমেরিকার সবচেয়ে কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী, ১০০ বছর বয়সে মারা গেছেন’ শিরোনামে করেছে হাফপোস্ট।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির একসময়কার প্রতাপশালী ব্যক্তি কিসিঞ্জারের ভূমিকা ছিল। কিন্তু তিনি তাঁর সিদ্ধান্তের জন্য কখনো অনুশোচনা প্রকাশ করেননি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ও জেরাল্ড ফোর্ডের প্রশাসনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। এ অবস্থান তাঁকে ভিয়েতনাম যুদ্ধ ও সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে দীর্ঘ ও বিস্তৃত স্নায়ুযুদ্ধ পরিচালনার সুযোগ করে দেয়। তিনি একটি কঠোর পন্থা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সম্ভাব্য নৃশংসতার চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থসহ দেশটির তৎকালীন অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সাফল্যের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেন।

কিসিঞ্জার সম্ভবত সবচেয়ে কুখ্যাত অপরাধ সংঘটনে যুক্তরাষ্ট্রকে পরিচালিত করেছিলেন। আর তা হলো—কম্বোডিয়ায় চার বছর ধরে গোপন বোমা হামলা। এ হামলায় অগণিত বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছিলেন। যদিও কম্বোডিয়া নিরপেক্ষ দেশ ছিল; যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কম্বোডিয়ার কোনো যুদ্ধ ছিল না।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির দায়িত্বে থাকাকালে কিসিঞ্জার পাকিস্তানের কাছে অবৈধ অস্ত্র বিক্রির নির্দেশ দিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে বাঙালির বিরুদ্ধে নৃশংস দমন-পীড়নে এই অস্ত্র ব্যবহার করেছিল পাকিস্তান।

কিসিঞ্জার ১৯৭৩ সালে চিলিতে সামরিক অভ্যুত্থানে সমর্থন দিয়েছিলেন। এই অভ্যুত্থানে চিলির গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সমাজতান্ত্রিক সরকার উৎখাত হয়েছিল। ১৯৭৫ সালে পূর্ব তিমুরে ইন্দোনেশীয় আগ্রাসনে সমর্থন দিয়েছিলেন তিনি। আর্জেন্টিনার দমনমূলক সামরিক একনায়কত্বকে সমর্থন দিয়েছিলেন কিসিঞ্জার। এই সামরিক শাসকেরা ১৯৭৬ সালে আর্জেন্টিনার ভিন্নমতাবলম্বী ও বামপন্থীদের বিরুদ্ধে ‘নোংরা (অপ্রচলিত) যুদ্ধ’ শুরু করেছিল। ফোর্ড প্রশাসনের সময় কিসিঞ্জারের নীতি আফ্রিকা, বিশেষ করে অ্যাঙ্গোলায় গৃহযুদ্ধে ইন্ধন জুগিয়েছিল।

আট বছর মার্কিন সরকারে দায়িত্ব পালন করেছিলেন কিসিঞ্জার। তাঁর ব্যাপারে সবচেয়ে উদার যেসব ভাষ্য, সেগুলোর তথ্য আমলে নিলেও কিসিঞ্জার যেসব হন্তারক শাসকদের সমর্থন করেছিলেন, তারা যেসব সংঘাত পরিচালনা করেছিল, তাতে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এ ছাড়া অসংখ্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও ঘটেছিল।

কিসিঞ্জার সেই অপকর্মের জন্য কখনো অনুশোচনা করেননি। অপকর্মের জন্য তাঁকে সত্যিকার অর্থে কোনো মূল্য চোকাতে হয়নি।

উল্টো কিসিঞ্জার সারা জীবন তাঁর মানবাধিকার রেকর্ডের সমালোচকদের প্রতি উপহাসমূলক সুর বজায় রেখেছিলেন। মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি ওয়াশিংটনের অভিজাত রাজনৈতিক সমাজের একজন সদস্য হিসেবে ভালো অবস্থানে ছিলেন।