যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে প্রথম মুখোমুখি বিতর্কে অংশ নিচ্ছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাতের এই বিতর্ক একধরনের পুনর্মিলনীও বটে, যদিও সেটা ঠিক বন্ধুত্বপূর্ণ নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বর্তমান প্রেসিডেন্টকে তাঁর পূর্বসূরির সঙ্গে বিতর্কে অংশ নিতে হয়নি। সিএনএনের আটলান্টা স্টুডিওতে পূর্বাঞ্চলীয় সময় রাত ৯টার দিকে এই বিতর্কে দুজনের তিক্ত সম্পর্ক আরও দৃশ্যমান হবে।
ট্রাম্প কখনোই ২০২০ সালের নির্বাচনে বাইডেনের কাছে পরাজয় স্বীকার করেননি। ডেমোক্র্যাটদলীয় এই প্রেসিডেন্টের জয় অনুমোদনের দিন মার্কিন কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলে নজিরবিহীন হামলা চালিয়েছিলেন ট্রাম্পের সমর্থকেরা। প্রতিদ্বন্দ্বীর শপথ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের ঐতিহ্যও ভাঙেন রিপাবলিকানদলীয় বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মুখোমুখি হচ্ছেন দুজন। এই নির্বাচনের প্রচার শুরুর পর প্রথমবারের মতো লাখো আমেরিকান টেলিভিশনের সামনে বসছেন এবং নির্বাচনী বিতর্কের ওপর নজর রাখতে যাচ্ছেন।
এই বিতর্কের গুরুত্ব অনেক বেশি এবং স্টুডিওতে অতীতের পাল্টাপাল্টি যুক্তির চেয়েও উত্তাপ বেশি থাকবে। কারণ, দুই প্রার্থীই মার্কিন জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন, নভেম্বরে তাঁদের ভোটটি পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন তাঁরা।
চার বছর পর বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো মুখোমুখি বিতর্কে অংশ নিতে যাচ্ছেন বাইডেন ও ট্রাম্প। ২০২০ সালের প্রথম বিতর্কে অনেক উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল। বক্তব্যের মাঝপথে বারবার কথা বলায় হতাশ হয়ে একপর্যায়ে ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে বাইডেন বলেন, ‘আপনি কি মুখটা বন্ধ রাখবেন?’
ট্রাম্প করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হওয়ায় ওই বছরের দ্বিতীয় বিতর্কটি পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ওই বিতর্কের শুরুতে দুজন করমর্দন পর্যন্ত করেননি।
এরপর দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের বিতর্ক অংশ নিতে দেখা যায়নি দুজনকে। গত প্রায় চার বছরে তাঁরা কোনো ধরনের বিতর্কে অংশ নেননি। এ বছরের শুরুতে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী বাছাইয়ের (প্রাইমারি) বিতর্কেও অংশ নেননি ট্রাম্প।
এবার টেলিভিশন স্টুডিওতে বিতর্কটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আগের বিতর্কগুলোতে দর্শকদের উপস্থিতি থাকলেও এবার তেমনটা হচ্ছে না। ফলে দর্শকদের উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা সরাসরি দেখার সুযোগ নেই। বাইডেনের প্রচার দলের অনুরোধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কারণ, গত বছর সিএনএন আয়োজিত ট্রাম্পের এক অনুষ্ঠানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল।
এ ছাড়া এবারের বিতর্কে একজনের বক্তব্য দেওয়ার জন্য বরাদ্দ সময়ে অন্যজনের মাইক্রোফোন বন্ধ থাকবে। এতে সম্ভাব্য বিশৃঙ্খলা এড়ানো যাবে। ২০২০ সালে বাইডেন ও ট্রাম্পের প্রথম বিতর্কের সময় এ নিয়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিল। তবে এসব কারণে এবারের বিতর্ক অনেকটা কম স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
গত নির্বাচনের মতো এবারও ভোটারদের অন্যতম আগ্রহের বিষয় অর্থনীতি ও অভিবাসন। বিতর্কের আগমুহূর্তে হওয়া জরিপে দুই বিষয়েই বাইডেনের চেয়ে ট্রাম্পকে বেশি নম্বর দিয়েছেন ভোটাররা। অন্যদিকে গর্ভপাত অধিকার, স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবেশের মতো বিষয়গুলোর ওপর জোর দিচ্ছেন বাইডেন।
দুর্বলতাগুলোর বিষয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করে যেসব বিষয়ে নিজের শক্ত অবস্থান রয়েছে, তা জোরালোভাবে যে প্রার্থী তুলে ধরতে পারবেন, বৃহস্পতিবার রাতের এ বিতর্কে তিনি বিজয়ী হবেন।
বাইডেন কি অভিবাসী বেড়ে যাওয়া নিয়ে ভোটারদের বোঝাতে পারবেন যে তিনি তাঁদের উদ্বেগ আমলে নিয়েছেন, কিন্তু রিপাবলিকানরা এতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন? আর ট্রাম্প কি ভোটারদের এটা বোঝানোর কোনো পথ খুঁজে বের করবেন, ক্ষমতায় এলে গর্ভপাত অধিকারের বিষয়ে বড় ধরনের কড়াকড়ি আরোপের পথে যাবে না তাঁর দপ্তর?
এক বছরের বেশি সময় ধরে বাইডেন আমেরিকার জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন, তাঁরা যেমনটা মনে করছেন, দেশের অর্থনীতি তার চেয়েও ভালো। বিষয়টি লাখ লাখ ভোটারের সামনে তিনি আবার তুলে ধরার সুযোগ পাচ্ছেন।
অবশ্য বাইডেনকে কাজটি করতে হবে প্রতিপক্ষের নিশ্চিত আক্রমণের মুখে। লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি আর মূল্যস্ফীতির যে কশাঘাত কয়েক বছর ধরে আমেরিকানদের সইতে হচ্ছে, বিতর্কে ট্রাম্প সেটা তুলে ধরতে পারেন।
গত মঙ্গলবার ট্রাম্পের প্রচার দলের মুখপাত্র জেসন মিলার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা জানি, বাইডেন সবকিছুর দায় ট্রাম্পের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘ট্রাম্প আর বাইডেনের আমলের অর্থনীতির পার্থক্য আমেরিকানরা জানেন। ট্রাম্পের অর্থনীতি ছিল সেরা, সেখানে সবাই ভালোভাবে জীবন যাপন করেছিলেন।’