টুইটার না কিনে আর উপায় নেই মাস্কের

টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক।
রয়টার্স ফাইল ছবি

টুইটার কেনার প্রক্রিয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে চেয়েছিলেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক। কিন্তু সামনে তাঁর জন্য ফেরার সব পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। টুইটার কিনতে শুরুতে যে ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রস্তাব তিনি দিয়েছিলেন, সে দামেই তাঁকে কিনে নিতে হচ্ছে খুদে বার্তা পোস্টের এই প্ল্যাটফর্মটিকে। দ্য ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারী হিসেবে পরিচিত। টুইটার কেনা না কেনা নিয়ে ঘটনার শুরু গত এপ্রিলে। ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো নয় মাস্কের। তিনি কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিনতে পারেন এমন গুঞ্জন ছিল। এ বছরের এপ্রিলেই দীর্ঘদিন ধরে চলা গুঞ্জনকে সত্যি করে টুইটার কেনার আগ্রহের কথা জানালেন ইলন মাস্ক। তড়িঘড়ি করে টুইটার কেনার জন্য প্রতি শেয়ারের দাম দিতে চাইলেন ৫৪ দশমিক ২০ মার্কিন ডলার করে। অর্থাৎ, টুইটার কিনতে তিনি ৪৪ বিলিয়ন ডলার খরচ করতে রাজি হয়ে গেলেন। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই আবার মন টলে গেল তাঁর। জানালেন, টুইটারে যে কতগুলো ভুয়া অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তার প্রকৃত তথ্য তাঁকে দেওয়া হচ্ছে না। তিনি এ তথ্য না পেলে টুইটার কিনবেন না। এ নিয়ে টুইটার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শুরু হলো বাদানুবাদ। এরপর কয়েক মাস ধরে টুইটারের চুক্তি থেকে বের হওয়ার নানা চেষ্টা চালালেন তিনি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে টুইটার কর্তৃপক্ষ দ্বারস্থ হলো আদালতের। ঠুকে দিল মামলা। ইলন মাস্ক নানা আইনি মারপ্যাঁচে মামলার কার্যক্রম দেরি করানো থেকে শুরু করে নানা কৌশল নিলেন। কিন্তু তাতে কাজ হলো না।

ইলন মাস্ক

টুইটার কর্তৃপক্ষ দাবি করে, ভুয়া অ্যাকাউন্ট থাকার দাবি করে মাস্ক বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন। তিনি ৫৪ দশমিক ২০ মার্কিন ডলার মূল্যের শেয়ারে টুইটার কেনার চুক্তি করতে বাধ্য। এরপর ২৯ জুলাই টুইটারের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করেন মাস্ক। টুইটারের মামলায় ১৭ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়ারের চ্যান্সেরি আদালতে টুইটার কর্তৃপক্ষের মুখোমুখি হতে হবে তাঁকে। বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন, আদালতে গেলে হেরে যাবেন ইলন মাস্ক। তাই আগেভাগেই গত মঙ্গলবার আগের দামেই টুইটার কিনতে সম্মতির কথা বলেছেন মাস্ক। কিন্তু এর আগে প্রকৃত দামের চেয়ে শেয়ারপ্রতি ৪ ডলার কম দিতে চেয়ে কয়েক দিন আলোচনা চালান মাস্কের আইনজীবীরা। কিন্তু তাঁরা অন্য শর্তে একমত হতে পারেননি।

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ও বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক

ইলন মাস্কের ওপর টুইটার কেনার চাপ বাড়ছিল। তাই ৩ অক্টোবর তিনি প্রস্তাবিত দামেই টুইটার কেনার প্রক্রিয়ায় ফেরার কথা জানান। টুইটার কেনার প্রস্তাব দিয়ে একটি চিঠি কর্তৃপক্ষকে পাঠিয়েছেন ইলন মাস্ক। কিন্তু বিষয়টি গোপনীয় হওয়ায় এ বিষয়ে কেউ মুখ খোলেননি। এর উদ্দেশ্য অবশ্য ১৭ অক্টোবর আদালতের লড়াইয়ে মুখোমুখি হওয়া ঠেকানো। অবশ্য টুইটার কেনার ঘোষণা দেওয়ায় ইলন মাস্কের কিছুটা লাভ হয়েছে। বেড়ে গেছে তাঁর কোম্পানি টেসলার শেয়ারদর। একই সঙ্গে টুইটারের শেয়ারের দামও বেড়েছে। তবে এখন বিনিয়োগকারীরা বলছেন, টুইটার কেনা না কেনার যে নাটক, তা অন্তিম মুহূর্তে এসে পৌঁছেছে। কিন্তু টুইটারের আইনজীবীরা মাস্কের ওই চিঠি নিয়ে সন্দিহান। তাঁরা চিঠি খতিয়ে দেখছেন। যদি মামলা তুলে নেওয়ার প্রসঙ্গ তাতে থাকে, তবে তাঁদের চোখে এটি মাস্কের আরও ‘দুষ্টুমি’ হিসেবে চিহ্নিত হবে।

ইলন মাস্ক অবশ্য এরই মধ্যে টুইটার কেনা প্রসঙ্গে টুইট করে বলেছেন, ‘প্লট টুইস্ট!’ অর্থাৎ, পরিকল্পনায় অনাকাঙ্ক্ষিত মোড় এসে গেছে। অবশ্য পর্দার আড়ালে চলছে অন্য খেলা। টুইটারের আইনজীবীরা চুক্তির জন্য মাস্কের নতুন করে ফিরে আসার বিষয়টিকে যাচাই করে দেখছেন। তিনি প্রকৃতপক্ষে ঋণদাতাদের কাছে টুইটার কিনতে অর্থ নিচ্ছেন কি না, তা পরীক্ষা করে দেখেছেন। ৬ অক্টোবর রাতে ইলন মাস্ক অবশ্য তাঁর আকাঙ্ক্ষিত বিষয়টি পেয়ে গেছেন। আর তা হচ্ছে সময়। টুইটার মামলার বিচার পেছানো হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে বিচারক জনসাধারণ এবং গণমাধ্যমের দৃষ্টিভঙ্গিতে চুক্তি থেকে পিছিয়ে যাওয়ার জন্য ইলন মাস্কের সব কারণ যাচাই করবেন। এর মধ্যে মাস্ককে তাঁর চুক্তির জন্য বা প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত নতুন সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন আদালত। এ সময়ের মধ্যে ইলন মাস্ক ও টুইটার কর্তৃপক্ষ যদি টুইটার কেনাবেচায় সম্মত না হতে পারে, তবে নভেম্বর মাসে ইলন মাস্ককে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।

এ সময়টুকু মাস্কের জন্য কিছুটা বাড়তি সুবিধা করে দিয়েছে। তিনি যদি আদালতে ছুটতে না চান, তবে তাঁকে এর মধ্যে টুইটার কিনতে হবে। টুইটারের শেয়ারধারীরাও টুইটার বিক্রির জন্য সম্মত হবেন এর মধ্যেই। টুইটারে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান স্ট্যাডলার ক্যাপিটালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কেভিন স্ট্যাডলার বলেন, ‘৫৪ দশমিক ২০ মার্কিন ডলার শেয়ারপ্রতি নগদে চুক্তির বিষয়টি টুইটারের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষার পর ভালো চুক্তি।’

লুপ ভেঞ্চার্স নামের বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা সহযোগী হিন মুনস্টার সংশয় প্রকাশ করে বলেন, ‘টুইটারের চুক্তি থেকে কৌশলে ইলন মাস্কের বেরিয়ে যাওয়ার এখনো ১০ শতাংশ সম্ভাবনা থাকছে।’ ইলন মাস্কের কৌশলের সঙ্গে পরিচিত এক ব্যক্তি বলেন, ইলন মাস্ক চুক্তির জন্য দাম কমানোর একটা চেষ্টা করতে পারেন। কিন্তু মাস্কের লক্ষ্য অন্য কিছুও হতে পারে। অন্তত তাঁর এখনকার টুইটগুলো তাই বলে।

টুইটারের ভেতরেও কর্মীদের মধ্যে ইলন মাস্কের মনোভাব পরিবর্তন ও তাঁর লক্ষ্য নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়েছে। অনেকে মনে করছেন, এটা তাঁর সময় পাওয়ার জন্য একটা খেলা। তিনি মামলায় জিতবেন না বলে অন্য কোনো উপায় খুঁজছেন, যাতে তিনি যথেষ্ট সময় পান। টুইটারের সাবেক কর্মীদের অনেকেই অবশ্য মাস্কের কর্তৃত্ব আসার আগেই টুইটার ছাড়তে পেরে স্বস্তির কথা বলেছেন। অনেকেই আবার চাকরি হারানোর ভয়ও করছেন। তাঁদের ধারণা, টুইটার কিনে নেওয়ার পর ইলন মাস্ক কর্মী ছাঁটাইয়ে মনোযোগী হবেন।