যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার জন্য নতুন নতুন অবকাঠামো নির্মাণ করেছে। নির্মাণ করেছে নতুন সুড়ঙ্গ।
বিশ্বের যে দেশগুলো পরাশক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন। এই তিন দেশই পারমাণবিক কর্মসূচি জোরদার করেছে। স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবি বিশ্লেষণে এমনটা দেখা গেছে। দেশগুলো পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার জন্য নতুন নতুন অবকাঠামো নির্মাণ করেছে। নির্মাণ করেছে নতুন সুড়ঙ্গ।
ইউক্রেন যুদ্ধকে ঘিরে রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বিরোধ বাড়ছে। এই বিরোধের একদিকে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো। আরেক মেরুতে রয়েছে চীন ও রাশিয়া। যুদ্ধকে ঘিরে উত্তেজনা বৃদ্ধির মধ্যেই এমন তথ্য সামনে এল।
এই তিন দেশ শিগগির মাটির নিচে অস্ত্রের পরীক্ষা চালাবে, এমন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। তবে বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণে এটা উঠে এসেছে, কয়েক বছর আগের তুলনায় তারা পারমাণবিক কর্মসূচি জোরদার করেছে। উত্তর মহাসাগরের দ্বীপপুঞ্জে যে পারমাণবিক স্থাপনা রয়েছে, সেখানে কর্মকাণ্ড জোরদার করেছে রাশিয়া। জিনজিয়াং প্রদেশে চীন এবং নেভাদার মরুভূমিতে এমন কার্যক্রম চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
পারমাণবিক কর্মসূচি বিশ্লেষণের জন্য তিনটি দেশের তিন থেকে পাঁচ বছর ব্যবধানে স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এ নিয়ে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার মিডলবেরি ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের জেমস মার্টিন সেন্টার ফর নন–প্রোলিফারেশন স্টাডিজের অধ্যাপক জেফ্রি লুইস। বিশ্বজুড়ে সামরিক কর্মকাণ্ড যাতে কমে, তা নিয়ে কাজ করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, এই তিন দেশের তিন এলাকার যে স্যাটেলাইট ছবি পাওয়া যাচ্ছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, সব কটিতেই নতুন সুড়ঙ্গ নির্মাণ করা হচ্ছে। নতুন রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া নতুন অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে গুদাম হিসেবে ব্যবহারের জন্য। এ ছাড়া তিনটি পারমাণবিক স্থাপনাতেই যানবাহনের চলাচল বেড়েছে।
অধ্যাপক জেফ্রি লুইস অবশ্য আরও বড় ধরনের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র হয়তো নতুন করে পারমাণবিক পরীক্ষা চালানো শুরু করেছে। এসব পরীক্ষা চালানো হচ্ছে, এর সপক্ষে অনেক ধরনের ইঙ্গিতই পাওয়া যাচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে ১৩ হাজার পারমাণবিক অস্ত্র মজুত রয়েছে। দেশগুলো তাদের পারমাণবিক অস্ত্র আধুনিকায়নে আরও কাজ করে যাচ্ছে, যা বিশ্ব ধ্বংসের একটি রেসিপি।আন্তোনিও গুতেরেস, মহাসচিব, জাতিসংঘ
পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে আন্দোলন শুরু হয়েছিল ১৯৪৫ সালে। এরপর ১৯৯৬ সালের কমপ্রিহেনসিভ নিউক্লিয়ার টেস্ট ব্যান ট্রিটি নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই চুক্তিতে বলা হয়েছিল, সামরিক কিংবা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে পারমাণবিক পরীক্ষা চালানো যাবে না। ওই চুক্তিতে যে দেশগুলো স্বাক্ষর করেছে, এর মধ্যে এই তিন দেশও রয়েছে। তবে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেও এই চুক্তি বাস্তবায়নে এখনো পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে পারমাণবিক পরীক্ষা চালানোর ঝুঁকি এখনো রয়েই গেছে।
যাহোক, স্যাটেলাইট থেকে যেসব ছবি পাওয়া গেছে, সেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর এক সাবেক কর্মকর্তা ও বিশ্লেষককে দেখানো হয়েছিল। সেড্রিক লেইটন নামের এই কর্মকর্তাও অধ্যাপক লুইসের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। তিনিও বলেন, ছবি থেকে এটা পরিষ্কার যে রাশিয়া, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র শুধু তাদের পারমাণবিক অস্ত্র আধুনিকায়নের জন্যই কাজ করছে না, নতুন করে পারমাণবিক পরীক্ষা চালানোর জন্যও কাজ করছে।
পারমাণবিক অস্ত্র ও এর ঝুঁকি নিয়ে গত মাসে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেছিলেন, ‘চলতি বছর আমরা ভয়ংকর অবিশ্বাস ও বিভক্তির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। ঠিক এই সময়ে বিশ্বজুড়ে ১৩ হাজার পারমাণবিক অস্ত্র মজুত রয়েছে। দেশগুলো তাদের পারমাণবিক অস্ত্র আধুনিকায়নে আরও কাজ করে যাচ্ছে, যা বিশ্ব ধ্বংসের একটি রেসিপি।’