ইউক্রেনের আকাশে সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনীর একজন সদস্য। বাখমুত, ইউক্রেন, ৬ মার্চ ২০২৪
ইউক্রেনের আকাশে সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনীর একজন সদস্য। বাখমুত, ইউক্রেন, ৬ মার্চ ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন কেন ইউক্রেনের দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে, দেশটির ওপর এ ভোটের সম্ভাব্য প্রভাব কী

নিজ দোকানের বাইরে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা ভাঙা কাচের টুকরাগুলো পরিষ্কার করছিলেন ইননা। তবে তিনি জানেন, তাঁর দেশের ভাগ্য ঝুলছে পাঁচ হাজার মাইলের বেশি দূরের দেশ যুক্তরাষ্ট্রের ভোটারদের হাতে।

ইউক্রেনীয় নারী ইননা বলছিলেন, ‘আমাদের আশা, কমলা হ্যারিস (৫ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় মার্কিন নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী) জিতবেন ও আমাদের সমর্থন করবেন।’

রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধে দেশটির বোমা হামলায় ইননার দোকানের জানালাগুলো ভেঙে চুরমার হয়েছে। ইউক্রেনের জাপোরিঝঝিয়া শহরে তাঁর দোকান। যুদ্ধে তাঁর মতোই অবস্থা এ শহরের আরও অনেকের। বোমার আঘাতে ইননার দোকানের কাছে থাকা সড়কে ১০ মিটার (৩২ ফুট) চওড়া গর্ত তৈরি হয়েছে।

ইননা বলেন, ‘আমরা (মার্কিন নির্বাচনের) ফলাফল নিয়ে চিন্তায় আছি। কেননা, শত্রুকে (রাশিয়া) হারাতে চাই আমরা।’

২০২৩ সালে ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় অন্যতম যুদ্ধক্ষেত্র জাপোরিঝঝিয়ায় রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ চালিয়েছিলেন ইউক্রেনের সেনারা। আশা ছিল, ‘দখলদার’ রুশ সেনাদের হটাতে পারবেন তাঁরা। কিন্তু ইউক্রেনীয় সেনারা সামান্য বা বলতে গেলে কোনো সাফল্যই পাননি। তাতে তাঁদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা টিকিয়ে রাখাই দায় হয়ে পড়ে।

ইননার এমন আশা পূরণ করা তাঁর দেশের একার পক্ষে একরকম অসম্ভব। তাঁর দেশের যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সমর্থন প্রয়োজন।

২০২৩ সালে ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় অন্যতম যুদ্ধক্ষেত্র এ জাপোরিঝঝিয়া শহরে রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ চালিয়েছিলেন ইউক্রেনের সেনারা। আশা ছিল, ‘দখলদার’ রুশ সেনাদের হটাতে পারবেন তাঁরা।

আমাদের আশা, কমলা হ্যারিস (৫ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় মার্কিন নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী) জিতবেন ও আমাদের সমর্থন করবেন।
ইননা, ইউক্রেনের জাপোরিঝঝিয়া শহরের বাসিন্দা

কিন্তু ইউক্রেনীয় সেনারা সামান্য বা বলতে গেলে কোনো সাফল্যই পাননি। তাতে তাঁদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা টিকিয়ে রাখাই দায় হয়ে পড়ে। ইউক্রেনের বিভিন্ন শহর-গ্রামে এখনো প্রতিদিন রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও গ্লাইড বোমা হামলা চলছে, আর অব্যাহত রুশ হামলার শিকার হচ্ছেন ইউক্রেনীয় সেনারা।

এদিকে নির্বাচনে জিতলে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখার ইঙ্গিত দিয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ও বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা। তবে তিনি জিতলেও রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসে তাঁর ক্ষমতা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। আবার রিপাবলিকান প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি জেতেন, সে ক্ষেত্রে ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা এখনকার তুলনায় কমে যেতে পারে। এ মুহূর্তে দেশটিতে এ সহায়তার পরিমাণ ৫০ বিলিয়ন (৫ হাজার কোটি) ডলারের বেশি।

ইউক্রেনের ওপর সম্ভাব্য প্রভাব

কমলা বা ট্রাম্প, যে-ই যুক্তরাষ্ট্রের আগামী প্রেসিডেন্ট হোন না কেন, ইউক্রেন সীমান্তে, এমনকি দেশটিতে বসবাসরত প্রত্যেকের ওপর গভীর প্রভাব পড়বে।

উদাহরণ হিসেবে, যদি তাঁরা (কমলা বা ট্রাম্প) ইউক্রেনকে কিছু ভূখণ্ড রাশিয়ার কাছে ছেড়ে দিতে ও ফ্রন্টলাইন থেকে সরে যেতে বলেন, সে ক্ষেত্রে জাপোরিঝঝিয়ার মতো অঞ্চলগুলো হঠাৎ উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার ন্যায় ভাগ হয়ে পড়তে পারে। যুদ্ধবিরতির মধ্য দিয়ে ১৯৫০–এর দশকে দুই কোরিয়া ও তাদের মিত্রদের লড়াই থামলেও এখনো কোরীয় যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক অবসান ঘটেনি।

ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ইউক্রেন ও রাশিয়ার সংঘাত মেটাতে ‘কিছু একটা বের করবেন’। যুদ্ধ থামাতে রাশিয়ার কাছে ইউক্রেনের কিছু ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়া লাগতে পারে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের তরফে দ্বিতীয় যে বিকল্প গ্রহণ করা হতে পারে সেটি হলো, ইউক্রেনের ওপর থেকে সমর্থন পুরোপুরি প্রত্যাহার। ফলাফল হিসেবে, রুশ বাহিনী ক্রমেই তাদের কাঙ্ক্ষিত এলাকাগুলো, এমনকি একসময় গোটা ইউক্রেন দখল করে নিতে পারে।

ইউক্রেনবাসী নিশ্চিতভাবে কমলাকেই তাঁদের পছন্দের প্রার্থী হিসেবে দেখছেন। ইউক্রেনের সাংবাদিকেরাও তাঁর বিরুদ্ধে ‘রাশিয়ার অপতথ্য’ মোকাবিলার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। অবশ্য ইউক্রেনের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলজুড়ে মানুষের মধ্যে ক্রমেই ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন বাড়তে দেখা যাচ্ছে। তাঁরা চান, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের অনতিবিলম্বে অবসান। এ যুদ্ধ অবসানে ট্রাম্পের জেতা সবচেয়ে বড় সুযোগ বলে ধারণা তাঁদের।

ইউক্রেনের সামনে তৃতীয় একটি দৃশ্যও ধরা দিতে পারে। তা হলো, রাশিয়ার দখল করা সব এলাকা পুনরুদ্ধার। তবে দৃশ্যত এটি কখনোই ঘটবে না।

আন্দ্রিয়া একজন ইউক্রেনীয় সেনা। সম্মুখসমরে মোতায়েন যুক্তরাষ্ট্র-নির্মিত সাঁজোয়া যানের বহরের একটি ইউনিট পরিচালনার দায়িত্বে আছেন তিনি। আন্দ্রিয়া বলছিলেন, ‘যদি সহায়তা (যুক্তরাষ্ট্রের) বন্ধ হয় বা কমে, তবে আমাদের সেনাদের কাঁধে বোঝা এসে পড়বে। আমাদের কাছে যা আছে, আমরা তা নিয়েই লড়ব। কিন্তু সবাই জানে, এটা (রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই) ইউক্রেনের একার পক্ষে সম্ভব নয়।’

বিমানবিধ্বংসী কামানের সামনে ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনীর এক সেনাসদস্য। বাখমুত, ইউক্রেন, ৬ মার্চ ২০২৪

স্বাভাবিকভাবেই আন্দ্রিয়া ও তাঁর সহকর্মী সেনারা ৫ নভেম্বর মার্কিন নির্বাচনের দিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে রয়েছেন। এ নিয়ে অনিশ্চয়তা এরই মধ্যে যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা দমিয়ে দিচ্ছে এবং আরও সামরিক সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রচেষ্টা হতাশাজনক করে তুলছে।

যদি সহায়তা (যুক্তরাষ্ট্রের) বন্ধ হয় বা কমে, তবে আমাদের সেনাদের কাঁধে বোঝা এসে পড়বে। আমাদের কাছে যা আছে, আমরা তা নিয়েই লড়ব। কিন্তু সবাই জানে, এটা (রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই) ইউক্রেনের একার পক্ষে সম্ভব নয়।
আন্দ্রিয়া, ইউক্রেনের সেনাসদস্য

এমন প্রেক্ষাপটে ইউক্রেনবাসী নিশ্চিতভাবে কমলাকেই তাঁদের পছন্দের প্রার্থী হিসেবে দেখছেন। ইউক্রেনের সাংবাদিকেরাও তাঁর বিরুদ্ধে ‘রাশিয়ার অপতথ্য’ মোকাবিলার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। অবশ্য ইউক্রেনের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলজুড়ে মানুষের মধ্যে ক্রমেই ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন বাড়তে দেখা যাচ্ছে। তাঁরা চান, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের অনতিবিলম্বে অবসান। এ যুদ্ধ অবসানে ট্রাম্পের জেতা সবচেয়ে বড় সুযোগ বলে ধারণা তাঁদের।