জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসসংশ্লিষ্ট পাচারকারীর সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীরা, নড়েচড়ে বসছে বাইডেন প্রশাসন

যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো সীমান্ত
ফাইল ছবি: রয়টার্স

চলতি বছরের শুরুর দিকে মেক্সিকো সীমান্ত থেকে উজবেকিস্তানের বেশ কয়েকজন নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়ের আবেদন করেছিলেন। ওই আবেদন গ্রহণও করেছিল মার্কিন প্রশাসন। এখন তাঁদের নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)। মার্কিন কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য বলছে, উজবেকিস্তানের ওই নাগরিকেরা যে পাচারকারীর সহায়তায় নিজ দেশ থেকে এসেছিলেন, তাঁর সঙ্গে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সম্পর্ক রয়েছে।

এ নিয়ে এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র আদ্রিয়েনে ওয়াটসন বলেছেন, ওই ব্যক্তিদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আইএসের কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে কি না, তা এখনো জানতে পারেনি এফবিআই। তবে তাঁদের শনাক্ত করতে ও খোঁজখবর নিতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। আর দুই মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সম্ভাব্য হুমকি হিসেবে তাঁদের বেশ কয়েকজনকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

এ নিয়ে জরুরিভাবে একটি গোপন গোয়েন্দা প্রতিবেদন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মন্ত্রিসভার শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে পেশ করা হয়েছে। দেশটিতে সন্ত্রাসবাদবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত কয়েকজন কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, গোয়েন্দাদের তদন্তে উঠে আসা তথ্য এটাই সামনে এনেছে যে মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে অভিবাসীদের সঙ্গে সন্ত্রাসীদেরও যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের বড় ঝুঁকি রয়েছে।  

যে পাচারকারীর সহায়তায় উজবেকিস্তানের ওই নাগরিকেরা যুক্তরাষ্ট্র সীমান্ত পর্যন্ত এসেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিল তুরস্ক। তাঁর কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য জোগাড় করে এফবিআই। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই পাচারকারী আইএস সদস্য নন বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে সন্ত্রাসী সংগঠনটির প্রতি তাঁর ব্যক্তিগত সহানুভূতি থাকতে পারে। আর আইএসের নির্দেশে যে তিনি ওই অভিবাসীদের সহায়তা করেছিলেন, আপাতত এমনটাও মনে করেন না গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

এ নিয়ে বিবৃতিতে আদ্রিয়েনে ওয়াটসন বলেন, ‘এই পাচারকারী চক্রের সহায়তা নেওয়া ব্যক্তিদের বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রয়েছে বা তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনায় যুক্ত—এমন কোনো ইঙ্গিত এখনো পাওয়া যায়নি।’ তবে শঙ্কার বিষয়টি হলো উজবেকিস্তানের ওই অভিবাসীদের সবার অবস্থান এখনো শনাক্ত করতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। আর সম্ভাব্য হুমকি হিসেবে ধরে নিয়ে তাঁদের ১৫ জনকে এখনো নজরদারির আওতায় রেখেছে এফবিআই।

এদিকে এ ঘটনা এমন এক সময় সামনে এল যখন সন্ত্রাসবাদ ও সীমান্ত—দুটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে বাইডেন প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডে সন্ত্রাসী হামলা ঠেকানোর বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন বাইডেন। দেশটির গোয়েন্দারা ও সামরিক বাহিনী একসময় সন্ত্রাসবিরোধী ভূমিকায় খুবই তৎপর ছিল। তবে বর্তমানে চীন ও রাশিয়া সৃষ্ট নানা হুমকি সামাল দিতে গিয়ে সেই তৎপরতা কমাতে হয়েছে। অপর দিকে বিগত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনপ্রত্যাশীর সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। ১৫০টির বেশি দেশ থেকে সেখানে অভিবাসী আসছেন। ফলে যাচাই–বাছাইয়ে প্রশাসনের সক্ষমতার ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

গত জুলাইয়ে মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে ১ লাখ ৮৩ হাজারের বেশি অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন বলে জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তাসংক্রান্ত একজন কর্মকর্তার মতে, দক্ষিণে মেক্সিকো সীমান্তে আসা মধ্য এশিয়ার অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আরও যাচাই–বাছাইয়ের আওতায় আনা দরকার। কারণ, তাঁদের এ সীমান্ত পর্যন্ত আসতে অনেক পথ পাড়ি দিতে হয়। খরচ হয় বড় অঙ্কের অর্থ। ফলে একটি প্রশ্ন থেকে যায় যে এত কিছুর পরও কেন তাঁরা এই সীমান্তটি বেছে নিচ্ছেন?