নিউ জার্সির সিনেটর বব মেনেনডেজ
নিউ জার্সির সিনেটর বব মেনেনডেজ

দুর্নীতির মামলায় সিনেটর মেনেনডেজ দোষী সাব্যস্ত

ঘুষ নিয়ে বিদেশি সরকারকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগে হওয়া একটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন নিউ জার্সির ডেমোক্রেটিক সিনেটর বব মেনেনডেজ।

তিন দিনে ১২ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে তর্ক–বিতর্কের পর গতকাল মঙ্গলবার একটি জুরি বোর্ড মেনেনডেজের বিরুদ্ধে আনা ১৬টি অভিযোগের সব কটিতে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। ৯  সপ্তাহ ধরে এই মামলার শুনানি চলেছে।

মেনেনডেজ একসময় সিনেটের প্রভাবশালী বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির প্রধান ছিলেন, দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর তিনি পদত্যাগ করেন। দোষী সাব্যস্ত হলেও মেনেনডেজের সাজা এখনো ঘোষণা করা হয়নি। তাঁকে কয়েক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হতে পারে।

দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর ডেমোক্রেটিক আইনপ্রণেতারা মেনেনডেজকে কংগ্রেস থেকে সরে দাঁড়াতে বলেছেন।

মার্কিন সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা চাক শুমার এক বিবৃতিতে বলেন, সিনেটর মেনেনডেজকে এখন তাঁর নির্বাচনী এলাকা, সিনেট এবং আমাদের দেশের জন্য যা সঠিক তা করতে হবে, পদত্যাগ করতে হবে।

তবে বরাবরের মতো গতকালও নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন মেনেনডেজ। দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এই নেতা। এদিনও তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, ‘আমি কখনো আমার শপথ ভঙ্গ করিনি। আমি কখনোই আমার দেশের জন্য একজন দেশপ্রেমিক ছাড়া অন্য কিছু ছিলাম না।’

মেনেনডেজের আইনজীবী অ্যাডাম ফি সাংবাদিকদের বলেন, জুরিরা মেনেনডেজকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেওয়ায় তিনি ‘বিস্মিত ও খুবই হতাশ’ হয়েছেন। তিনি এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কথাও জানিয়েছেন।

অন্যদিকে, কৌঁসুলিদের পক্ষ থেকে বলা হয়, এই মামলা ‘দুর্নীতির হতবাক করা মাত্রা’ দেখিয়েছে।

নিউইয়র্কের সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্টের অ্যাটর্নি ড্যামিয়ান উইলিয়ামস বলেন, ‘এটা সাধারণ রাজনীতি নয়, এটা লাভের রাজনীতি ছিল। এখন আদালত বব মেনেনডেজকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। বছরের পর বছর ধরে সর্বোচ্চ ঘুষদাতার কাছে তিনি নিজের কার্যালয় বিক্রি করে গেছেন, অবশেষে এর সমাপ্তি হচ্ছে।’

মেনেনডেজের বিরুদ্ধে নগদ অর্থ ছাড়া আরও যেসব জিনিসপত্র ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সেগুলোর মধ্যে সোনার বার এবং মার্সিডিজ বেঞ্চ গাড়িও রয়েছে।

তাঁর আইনজীবীদের যুক্তি ছিল, এগুলোর সবই ছিল উপহার। ঘুষ বলতে যা বোঝায়, তার মধ্যে এগুলো পড়ে না। আর এগুলো গ্রহণ করে মেনেনডেজ যে কোনো বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, ‘তেমনটাও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা প্রমাণ করতে পারেনি’ বলে দাবি করেন তিনি।

শুধু মেনেনডেজ নয়, তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধেও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। কিন্তু অসুস্থ হওয়ায় নাডিনে আর্সলানিয়ানের বিচারকাজ কিছুটা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত এবং চিকিৎসা চালানোর জন্য তাঁকে সময় দেওয়া হচ্ছে। তিনিও নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।

মেনেনডেজের আইনজীবীরা ঘুষ গ্রহণের পুরো দায় আর্সলানিয়ানের ওপর চাপানোর চেষ্টা করেছিলেন।

তাঁরা তাঁকে ‘একজন আর্থিকভাবে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি’ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন। বলছিলেন, ‘তিনি যেকোনো উপায় নগদ অর্থ এবং সম্পদ পেতে চাইতেন’।

এর জবাবে কৌঁসুলিরা বিশেষজ্ঞদের সাক্ষ্য, ই–মেইল ও মেনেনডেজের মুঠোফোনের বিভিন্ন বার্তা দেখিয়েছেন। এগুলোকে তাঁরা বিদেশি সরকার থেকে মেনেনডেজের বড় অঙ্কের ঘুষ গ্রহণের প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।

কৌঁসুলিরা বলেছেন, মেনেনডেজ যেসব সোনার বার গ্রহণ করেছেন, সেগুলোর বাজার মূল্য এক লাখ মার্কিন ডলারের বেশি। তাঁরা প্রমাণ হিসেবে জুরিদের সামনে কয়েকটি সোনার বার উপস্থাপনও করেছেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়ন্দা সংস্থা (এফবিআই) মেনেনডেজের বাড়ি থেকে নগদ ৪ লাখা ৮০ হাজার মার্কিন ডলার জব্দ করেছে।