যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর নতুন প্রশাসনে নিয়োগ দিতে আরও কয়েকজনের নাম ঘোষণা করেছেন। তবে বিভিন্ন শীর্ষ পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য ট্রাম্প যাঁদের বেছে নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে কয়েকজনকে নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেতে যাওয়া টেলিভিশন সংবাদ উপস্থাপক পিট হেগসেথ ও অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পেতে যাওয়া ম্যাট গেটজ অন্যতম।
রিপাবলিকান নেতা ট্রাম্প ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হন। আগামী জানুয়ারি মাসে তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন। তাঁর আগে নিজ প্রশাসনে কাকে কাকে নিয়োগ দেবেন, তা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি।
শুরুর দিকে ট্রাম্প তাঁর প্রশাসনের জন্য ফ্লোরিডা সিনেটর মার্কো রুবিওসহ যাঁদের নাম ঘোষণা করেছেন, সেগুলো প্রশংসা কুড়িয়েছিল। তবে পরের দিকে ট্রাম্প–ঘোষিত নামগুলো নিয়ে ডেমোক্র্যাটরা, এমনকি রিপাবলিকানদের কেউ কেউও হতাশা প্রকাশ করেছেন। ট্রাম্প পরের দিকে দক্ষতা বা যোগ্যতার চেয়ে কে কত অনুগত, তাঁকে নিয়োগ দেওয়াকে প্রাধান্য দিচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
সবচেয়ে বড় হতাশা দেখা দিয়েছে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে ম্যাট গেটজের নাম ঘোষণা নিয়ে। কট্টর এই রিপাবলিকান নেতার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আছে। নারী পাচারের অভিযোগে কয়েক বছর ধরে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত চলেছে। গেটজ অবশ্য নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করে থাকেন। তাঁর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করা হয়নি। গেটজের বিরুদ্ধে এখনো তদন্ত চলছে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেতে যাওয়া হেগসেথকে নিয়ে হতাশার কারণ হলো, তাঁর বড় প্রতিষ্ঠান চালানোর মতো অভিজ্ঞতা নেই। তিনি ফক্স নিউজ নেটওয়ার্কের সঞ্চালক।
ট্রাম্প ও তাঁর সহযোগীরা চাইছেন ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে যেসব কেন্দ্রীয় কর্মকর্তা তাঁর জনতুষ্টিবাদী ডানপন্থী এজেন্ডাকে বাধাগ্রস্ত করেছিলেন, তাঁদের এ মেয়াদে আর দায়িত্বে রাখবেন না।
নিয়োগ পাওয়ার মধ্য দিয়ে গেটজ অপরাধের তদন্ত থেকে মুক্তি পাবেন বলে মনে করা হচ্ছে। বিচার বিভাগের শীর্ষে গেটজের মতো নিজস্ব লোক বসানোর মধ্য দিয়ে ট্রাম্পও সুবিধা নিতে পারেন। ট্রাম্প বারবারই বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।
আসন্ন সিনেটে রিপাবলিকানদের তিনটি আসনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও গেটজকে নিয়ে ব্যাপক বিরোধিতা থাকবে। অর্থাৎ সিনেটে তাঁর নিয়োগ চূড়ান্ত করার কাজটি অতটা সহজ হয়তো হবে না।
গতকাল বৃহস্পতিবার টিকাবিরোধী ও চিকিৎসাশাস্ত্রে ষড়যন্ত্রের তাত্ত্বিক হিসেবে পরিচিত রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়রকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিয়েছেন ট্রাম্প।
কেনেডিকে নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক বিরোধিতা হতে পারে। কারণ, চিকিৎসা–সংক্রান্ত বিভিন্ন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব দেওয়ার ইতিহাস আছে কেনেডির। তিনি টিকার বিরোধিতা করে থাকেন। তাঁর দাবি, শৈশবে দেওয়া টিকাগুলো শিশুদের প্রতিবন্ধী করে দেয়। তবে এর সপক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি তিনি। কোভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকাকে প্রাণঘাতী বলে উল্লেখ করেন কেনেডি জুনিয়র।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, মনোনীত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি পোস্ট দিয়েছেন কেনেডি জুনিয়র। সেখানে তিনি তাঁকে মনোনীত করায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। কেনেডি জুনিয়র লিখেছেন, দীর্ঘস্থায়ী রোগের মহামারির অবসানে বিজ্ঞান, ওষুধ, শিল্পকারখানা এবং সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোকে একত্র করার মতো সুযোগ আছে।
বিভিন্ন সময়ে কেনেডির আলাপে উঠে আসে এমন কিছু কথা প্রতিধ্বনিত করে ট্রাম্প বলেন, ‘শিল্পজাত খাদ্যজনিত জটিলতা এবং ওষুধ কোম্পানিগুলোর ধোঁকাবাজি, অপতথ্য ও অপপ্রচার মার্কিন নাগরিকদের ধসিয়ে দিচ্ছে।’
ট্রাম্পের আশা, কেনেডি এসব সংস্থাকে পুনরুদ্ধার করতে পারবেন।
জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাওয়া তুলসী গ্যাবার্ডের মনোনয়ন নিয়েও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তাঁর বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিপক্ষ রাশিয়ার পক্ষে যাওয়া সমালোচনা হচ্ছে। গ্যাবার্ড বলেছেন, ‘নিরাপত্তাজনিত বৈধ উদ্বেগ’ থেকে ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া।
গতকাল ট্রাম্প আরও ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর ব্যক্তিগত আইনজীবী টড ব্লেঞ্চ এবং অ্যামিল বোভ ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে কাজ করবেন। পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে চুপ রাখতে ঘুষ দেওয়ার মামলায় চলতি বছর বিচার চলাকালে ট্রাম্পের পক্ষে লড়েছেন ওই দুই আইনজীবী।