টানা তৃতীয়দিনের মতো মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে স্পিকারের চেয়ারটি ফাঁকা পড়ে থাকতে দেখা যায়
টানা তৃতীয়দিনের মতো মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে স্পিকারের চেয়ারটি ফাঁকা পড়ে থাকতে দেখা যায়

১০০ বছরে এমন সংকটে পড়েনি মার্কিন কংগ্রেস

গভীর সংকটে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ। টানা তিন দিন চেষ্টা করেও একজন স্পিকার নির্বাচন করতে পারেননি আইনপ্রণেতারা। সংখ্যাগরিষ্ঠ দল রিপাবলিকান পার্টির সদস্যরা তাঁদের প্রার্থী কেভিন ম্যাকার্থিকে স্পিকার নির্বাচিত করতে ১১ দফায় ভোটের আয়োজন করেও ব্যর্থ হয়েছেন। কারণ, কট্টর রক্ষণশীল হিসেবে পরিচিত ট্রাম্পপন্থী ২০ রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা ম্যাকার্থির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। এতে করে কংগ্রেসে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। ১৯২৩ সালের পর গত ১০০ বছরে এমন সংকটে পড়েনি মার্কিন কংগ্রেস।

গত নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনে সামান্য ব্যবধানে নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পান রিপাবলিকানরা। উচ্চকক্ষ সিনেটের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখে ডেমোক্র্যাট। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী গত মঙ্গলবার কংগ্রেসের অধিবেশন শুরুর দিনে স্পিকার নির্বাচনপ্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। গতকাল বৃহস্পতিবার মোট পাঁচ দফা ভোটাভুটির আয়োজন করা হয়। প্রতিবারই ব্যর্থ হয়ে স্থানীয় সময় শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত কংগ্রেসের অধিবেশন মুলতবি করতে একমত হন আইনপ্রণেতারা। গৃহযুদ্ধ পরবর্তী যুক্তরাষ্ট্রে স্পিকার নির্বাচনে সর্বোচ্চ ৯ বার ভোট হয়েছিল।

প্রতিনিধি পরিষদের আসনসংখ্যা ৪৩৫। এর মধ্যে রিপাবলিকানদের ২২২ ও ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্য ২১২। স্পিকার হতে ম্যাকার্থির প্রয়োজন ২১৮ ভোট। দলের বিদ্রোহী কট্টরপন্থী আইনপ্রণেতাদের সমর্থন ছাড়া তাঁর পক্ষে স্পিকার হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু ক্যালিফোর্নিয়ার রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাকে স্পিকার পদে সমর্থন দেবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন ম্যাট গায়েৎজের নেতৃত্বে উগ্র ডানপন্থী আইনপ্রণেতারা। ফলে স্পিকার হতে ২১৮ ভোটের ‘ম্যাজিক ফিগার’ নিশ্চিত করতে পারছেন না তিনি।

যেসব আইনপ্রণেতা স্পিকার নির্বাচনের ভোটাভুটিতে ম্যাকার্থির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন তাঁরা উগ্র-রক্ষণশীল ‘ফ্রিডম ককাসের’ সদস্য। আর তাঁদের অনেকে ২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল অস্বীকার করে আসছেন। ২০২০ সালের ওই নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে হেরে যান তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কারচুপির অভিযোগ এনে তখন এই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, নির্বাচনে তাঁর বিজয় ‘ছিনিয়ে’ নেওয়া হয়েছে।

ম্যাকার্থির বিরুদ্ধে ডানপন্থীদের এই বিদ্রোহ ব্যক্তিগত বিরোধ ছাড়িয়ে মতাদর্শিক বিরোধে গড়িয়েছে। বিদ্রোহীরা কেন্দ্রীয় সরকারের আকার, কাজ ও কাজের পরিধিকে ব্যাপকভাবে সীমিত করতে চান। আর কংগ্রেস এই কাজ যাতে সহজভাবে করতে পারে, সেভাবেই কংগ্রেসের কার্যপ্রণালিতে সংস্কার আনতে চান তাঁরা।

স্পিকার হলেন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের সভাপতি। সভাপতিকে ছাড়া কংগ্রেস কোনো কাজ করতে পারে না। অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ আইনপ্রণেতার সমর্থন ছাড়া স্পিকার নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত কংগ্রেস অচল। স্পিকার নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত ভোটাভুটি চলবে।

কট্টরপন্থীদের ভোট পেতে কয়েকটি বিষয়ে ছাড় দিয়েছেন ম্যাকার্থি। এমন কিছু পদক্ষেপের বিষয়ে তিনি সায় দিয়েছেন যাতে স্পিকারের ভূমিকা দুর্বল হয়ে পড়বে। অথচ আগে এ ধরনের পদক্ষেপ সমর্থন করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছিলেন এই রিপাবলিকান নেতা। কিন্তু তাতেও কট্টরপন্থীদের মন গলেনি। এখনো তাঁদের সমর্থন আদায়ে ব৵র্থ ম্যাকার্থি। তাই, স্পিকার নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ভোট নিশ্চিত করতে পারছেন না তিনি।

চতুর্থ দিনের অধিবেশন শুরুর আগে বৃহস্পতিবার ম্যাকার্থি সাংবাদিকদের বলেন, ‘কিছু অগ্রগতি হয়েছে। আমরা সদস্যরা কথা বলেছি। নতুন কিছু হতে পারে।’