কমলা হ্যারিস
কমলা হ্যারিস

কমলা হ্যারিসের নাম নিয়ে সত্যিই কি উপহাস করেন ট্রাম্প

নাম দিয়ে কী হয়? কমলা হ্যারিসের ক্ষেত্রে নাম তাঁর কর্তৃত্ব বজায় রাখার, স্পষ্টভাবে নিজের পরিচয় নিয়ে গর্ব করার এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সব আক্রমণ রুখে দেওয়ার একটি উপায়।

পশ্চিমা সংস্কৃতিতে কাউকে নামের প্রথমাংশ ধরে ডাকা অশোভন। কিন্তু সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনী সভা–সমাবেশে বারবার কমলা হ্যারিসের নামের প্রথমাংশ ধরে সম্বোধন করেছেন। তবে জো বাইডেনের ক্ষেত্রে বিষয়টি ছিল উল্টো। ডেমোক্রেটিক দলের সাবেক এই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে কখনো বাইডেন আবার কখনো ‘ঘুমকাতুরে জো’ বলে ডেকেছেন ট্রাম্প।

কমলা হ্যারিসের নাম ভুলভাবে উচ্চারণের পক্ষে একটি যুক্তিও দিয়েছেন ট্রাম্প। গত জুলাইয়ের শেষে এক সমাবেশে ৭৮ বছর বয়সী এই ব্যবসায়ী বলেছেন, ‘অনেকভাবেই তাঁর নাম উচ্চারণ করা যায়।’

ওই সমাবেশে ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমি এ বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন নই। আমি কী বলি, তাতে কিছু যায় আসে না। যদি তাঁর নাম ভুলভাবে উচ্চারণ করি, তাতেও আমার কিছু যায় আসে না।’

তবে মনে হচ্ছে, এটি ট্রাম্পের আরেকটি আক্রমণ। প্রতিপক্ষের ডাকনাম নিয়ে তাচ্ছিল্য করার জন্য সুপরিচিত এই রাজনীতিবিদ।

তবে নারী ও কৃষ্ণাঙ্গ হওয়ায় কমলা হ্যারিসের নামের প্রথমাংশ ধরে ডাকা এবং তা নিয়ে বিদ্রূপ করার বিষয়টি বেশ অস্বস্তিকর।

কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক কারিন ভাসবি অ্যান্ডারসন বলেন, ‘প্রায় সময় নারী নেত্রীদের নামের প্রথমাংশ ধরে ডাকা হয় তাঁদের কর্তৃত্বকে ছোট করার জন্য।’

নামের এই ভুল উচ্চারণের কারণে অনেকে মনে করেন, ট্রাম্প কমলা হ্যারিসকে অন্যদের থেকে আলাদা করার চেষ্টা করছেন। আর তাঁর সমর্থকদের মনে করিয়ে দিতে চান, কমলার বাবা জ্যামাইকার এবং মা ভারত থেকে অভিবাসী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন।

একজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মুখ থেকে বের হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের মনোভাব আরও তীব্র হয়েছে। বিশেষ করে এমন একটি নির্বাচনে, যেটিকে কেন্দ্র করে লিঙ্গবিভেদ বাড়ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায়ই বর্ণবাদী এবং অভিবাসীদের নিয়ে হিংসাত্মক কথাবার্তা বলেন।

অধ্যাপক কারিন ভাসবি বলেন, ‘এটি লক্ষণীয় যে ট্রাম্প প্রায়ই তাচ্ছিল্যের সঙ্গে তাঁর (কমলা হ্যারিস) নামের ভুল উচ্চারণ করেন। এর মাধ্যমে স্পষ্টভাবেই বোঝানোর চেষ্টা করা হয়, কৃষ্ণাঙ্গ ও দক্ষিণ এশিয়ান ঐতিহ্যের কোনো নারী প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য লড়লে তাঁকে উপহাস করাটা স্বাভাবিক।’

এই অধ্যাপক আরও বলেন, ‘মজার বিষয় হলো, তিনি (ট্রাম্প) শুধু ভুল উচ্চারণ করেই ক্ষান্ত হননি। বরং এই দাবিও করেছেন যে কমলা নিজেই তাঁর নামের সঠিক উচ্চারণ করতে পারেন না। এটি চূড়ান্তভাবে একজন পুরুষ হয়ে নারীকে ছোট করারই নজির।’
তবে কমলা হ্যারিস ট্রাম্পের এসব আক্রমণকে আমলেই নিচ্ছেন না। উল্টো তিনি তাঁর নাম নিয়ে গর্ব করছেন এবং কীভাবে উচ্চারণ করতে হবে, তার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন।

জো বাইডেন যখন নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে কমলাকে সমর্থন দিলেন, তখন ডেমোক্রেটিক দলের নির্বাচনী শিবিরের এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টের নাম ‘বাইডেন এইচকিউ’ থেকে পরিবর্তন করে ‘কমলা এইচকিউ’ রাখা হয়।

সব নির্বাচনী সমাবেশে ‘হ্যারিস ওয়ালজ’ লেখা পোস্টারের সঙ্গে ‘কমলা’ লেখা প্ল্যাকার্ড দোলাতে দেখা যায় সমর্থকদের।

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটনে কমলা হ্যারিসের একটি নির্বাচনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে হাজারো মানুষ ‘হ্যারিস’, ‘হ্যারিস’ বলে স্লোগান দেন।

গত আগস্টে ডেমোক্রেটিক দলের জাতীয় সম্মেলনের মঞ্চে কমলার দুই ভাগনি মঞ্চে উঠে উপস্থিত জনতাকে তাঁর নামের উচ্চারণ শেখানোর চেষ্টা করেন। এ সময় তাঁদের সঙ্গে ছিলেন অভিনেত্রী ক্যারি ওয়াশিংটন।

এই তিনজন মিলে সম্মেলনে আগত ব্যক্তিদের দুই ভাগে ভাগ করেন। তাঁদের এক পাশ ‘কমা’ বলে স্লোগান দিচ্ছিলেন আর অন্য পাশ ‘লা’ বলে উত্তর দিচ্ছিলেন।

কমলা হ্যারিসের নির্বাচনী সমাবেশে ‘এলএ’ লেখা বিভিন্ন প্রতীকও দেখা গেছে। এটি তাঁর নামের আদুরে উচ্চারণকে বোঝায়।

কমলা হ্যারিসের নামের প্রথমাংশের আরেকটি সংস্করণ ‘মোমালা’। তাঁর সৎছেলে–মেয়ে তাঁকে এই নামে ডাকে।

জো বাইডেন নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার পর বেশ দেরিতেই নির্বাচনী দৌড়ে আসেন কমলা। এ সময় তিনি অন্যদের সঙ্গে ব্যবধান কমানোর সেতুবন্ধ হিসেবে নামের প্রথমাংশ ব্যবহারের কৌশল নেন।

জনগণের সামনে নিজেদের ব্যক্তিত্বকে তুলে ধরতে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদেরা প্রায়ই এ কৌশল নিয়ে থাকেন।

কমলা হ্যারিসকে উপহাস করার কড়া জবাব দিয়েছেন তাঁর স্বামী ডগলাস এমহফ। আগস্টে এক সমাবেশে ট্রাম্পের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘জনাব ট্রাম্প, আমি জানি, তাঁর (কমলা) নাম উচ্চারণ করতে আপনার অনেক সমস্যা হয়। আপনার জন্য একটি সুখবর আছে। এই নির্বাচনের পর আপনি তাঁকে শুধু “ম্যাডাম প্রেসিডেন্ট” বলে সম্বোধন করলেই চলবে।’