মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আগে প্রথমবারের মতো বিতর্কে মুখোমুখি হচ্ছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ায় স্থানীয় সময় আজ মঙ্গলবার (বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল) এবিসি নিউজের বিতর্কে কমলা হ্যারিস মুখোমুখি হচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের। আগামী নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে এ বিতর্কের মঞ্চে ট্রাম্পের বিপক্ষে কমলা হ্যারিস কেমন করেন, তা দেখতে চোখ রাখবেন কোটি কোটি দর্শক। বিতর্কের মঞ্চে কমলা কি আদৌ তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্পকে ঘায়েল করতে পারবেন, নাকি প্রতিদ্বন্দ্বীর আক্রমণাত্মক বক্তব্যে নিজেই ধরাশায়ী হবেন, এ নিয়ে আলোচনা চলছে। রিপাবলিকান সমর্থকেরা বলছেন, মঞ্চে কথা বলতে পারবেন না কমলা। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাট সমর্থকেরা বলছেন, কমলার প্রস্তুতি যথেষ্ট ভালো। তিনি মঞ্চে প্রতিপক্ষকে ধসিয়ে দিতে প্রস্তুত।
বিপুলসংখ্যক দর্শক টেলিভিশনে কমলা ও ট্রাম্পের এ বিতর্ক অনুষ্ঠান দেখবেন বলে মনে করা হচ্ছে। বিতর্ক সামনে রেখে সম্প্রতি এএফপির প্রতিনিধিরা কয়েকজন মার্কিন ভোটারের সঙ্গে কথা বলেছেন। দেখা গেছে, দুই দলের সমর্থকেরাই তাঁদের প্রার্থীকে নিয়ে আশাবাদী। তাঁদের ধারণা, মুখোমুখি বিতর্কে তাঁদের নেতাই ভালো করবেন। বিতর্কে কমলা ও ট্রাম্প নীতিমালা ও মূল্যবোধ নিয়ে কী আলোচনা করবেন, তার পাশাপাশি তাঁদের অঙ্গভঙ্গি, সংযম ও পারদর্শিতা নিয়েও ভাবছেন তাঁরা।
পেনসিলভানিয়ায় সম্প্রতি ট্রাম্পের একটি সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন ৭৩ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফ্লো এবারহার্ট। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, ট্রাম্প সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন।’ এবারহার্ট মনে করেন, যা কিছু চলছে কমলা হ্যারিস মূলত তার কোনো কিছুই জানেন না। তিনি কথা বলতে পারেন না।’
যদিও বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা একসময় ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল ও মার্কিন সিনেটর ছিলেন। তিনি একজন পাকা বিতার্কিক।
গত চার বছরে এ ধরনের বড় আয়োজনে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা যদিও তাঁর নেই, তবে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নের দৌড়ে থাকার সময় প্রতিদ্বন্দ্বীকে ঘায়েল করার ক্ষমতার জন্য প্রশংসিত হয়েছিলেন তিনি। ওই সময়ে প্রার্থিতা পাওয়ার দৌড়ে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। তাঁকে নিয়েও তখন আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়েছিলেন কমলা।
বিতর্কে ট্রাম্পের অবস্থা কেমন হতে পারে, এ প্রসঙ্গে এবারহার্ট বলেন, ‘তিনি একেবারে ঠিকঠাক থাকবেন। এমন একটি বিষয়ও নেই, যেটা সম্পর্কে ট্রাম্প জানেন না।’
কমলা ভালো করবেন। তিনি খুব ভালোভাবেই ট্রাম্পকে ঘায়েল করবেন। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এ এক অসাধারণ দিন হতে যাচ্ছে।জ্যামিলা স্কেলস, নিউ হ্যাম্পশায়ারে কমলা হ্যারিসের তরুণ-সমর্থক
কমলা হ্যারিসের তরুণ-সমর্থক জ্যামিলা স্কেলস নিউ হ্যাম্পশায়ার অঙ্গরাজ্যের নাশুয়া শহরের বাসিন্দা। গত বুধবার নর্থ হাম্পটনে ডেমোক্র্যাটদের এক সমাবেশে তাঁর সঙ্গে এএফপির প্রতিনিধির কথা হয়। স্কেলসের বিশ্বাস, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নিজের শক্ত অবস্থান দেখাতে পারবেন কমলা।
স্কেলস হেসে বলেন, ‘কমলা ভালো করবেন। তিনি খুব ভালোভাবেই ট্রাম্পকে ঘায়েল করবেন। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এ এক অসাধারণ দিন হতে যাচ্ছে।’
বিতর্ক সম্পর্কে স্কেলস বলেন, ‘আমার আর তর সইছে না। সত্যিই আমি পারছি না।’
বিতর্কের মঞ্চে ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক বক্তব্য ও দম্ভোক্তির বিষয়টি অপরিচিত নয়। তবে ট্রাম্পের সমর্থক জিমি ট্যাগার্ট মনে করেন, কমলা হ্যারিসকে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে ট্রাম্পকে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হবে।
ট্যাগার্ট বলেছেন, ‘তাঁকে (ট্রাম্প) চুপ থাকতে হবে। তিনি (কমলা) নিজেই ধরা খাবেন। কারণ, তিনি (কমলা) কিছুই করতে পারবেন না।
ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে গত সাড়ে তিন বছরে তিনি কিছুই করেননি।’
চুপচাপ থাকা ট্রাম্পের ধরন নয়। ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটনের বিপক্ষে বিতর্কে তিনি তাঁর অবস্থান শক্ত রাখতে পেরেছিলেন।
যা কিছু চলছে কমলা হ্যারিস মূলত তার কোনো কিছুই জানেন না। তিনি কথা বলতে পারেন না।ফ্লো এবারহার্ট, পেনসিলভানিয়ায় ৭৩ বছর বয়সী ট্রাম্প সমর্থক
নিউ হ্যাম্পশায়ারের সমাবেশে হাজির হওয়া সাবেক কৌঁসুলি কেট থম্পসন মনে করেন, কমলা হ্যারিসকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে ট্রাম্প সফল হবেন না। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, মূল্যবোধ ও অবস্থানকে প্রকাশ করার মতো প্রস্তুতি নিয়েই হাজির হবেন কমলা। আমি মনে করি না, তিনি (কমলা) তাঁকে (ট্রাম্প) কোণঠাসা করার সুযোগ দেবেন।’
পেনসিলভানিয়ার ৫৪ বছর বয়সী সাবেক সেনা কার্ক ম্যাককেন্ড্রি বলেন, তিনি চান, ‘ট্রাম্প শৃঙ্খলার মধ্যে থাকুন এবং বাইডেন ক্ষমতা নেওয়ার আগের চার বছর তাঁরা ভালো ছিলেন কি না, সে প্রশ্ন ভাবার সুযোগ করে দেন। ট্রাম্প বলতে পারেন, আমরা আগে আরও ভালো ছিলাম।’
ম্যাককেন্ড্রি আরও বলেন, ‘বাইডেনের চেয়ে এক প্রজন্মের ছোট ও আরও কর্মঠ হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে হুমকি হিসেবে মনে করি না আমি।’
ট্রাম্পের উগ্রপন্থাকে লক্ষ্যবস্তু করতে পারেন কমলা
আজকের বিতর্ক ঘিরে ডোনাল্ড ট্রাম্প আগেই হুমকি দিয়ে রেখেছেন। তিনি নির্বাচনে প্রতারিত হলে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের কারাগারে বন্দী করবেন বলে মন্তব্য করেছেন। কমলা হ্যারিসের পক্ষ থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এ নিয়ে আক্রমণ করা হতে পারে। তিনি আগে থেকেই ট্রাম্পকে অসংবেদনশীল ব্যক্তি বলে আসছেন, যিনি কোনো কিছুকেই পাত্তা দেন না। ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফিরলে তা মারাত্মক বিপদ তৈরি করবে বলে দাবি করে আসছেন তিনি।
এ ছাড়া ট্রাম্প সাম্প্রতিক সময়ে যেসব উগ্র মন্তব্য করেছেন, যেমন পেনসিলভানিয়ার ভোটিং সিস্টেম জালিয়াতি, ৬ জানুয়ারির দাঙ্গাকারীদের ক্ষমা করে দেওয়া, ট্রাম্পের মানসিক পরিস্থিতি নিয়ে আক্রমণ করতে পারেন কমলা। তবে বিভিন্ন দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যে দুই প্রার্থীর মধ্যে যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে, তাতে আগে থেকে কাউকেই এগিয়ে রাখা যাচ্ছে না।