যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত নারী নিপীড়নকারী জেফরি এপস্টেইনসংক্রান্ত মার্কিন আদালতের নথিপত্রে পদার্থবিদ স্টিফেন হকিংয়েরও নাম উঠে এসেছে। এ নথিতে দেখা গেছে, হকিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ ভুল প্রমাণ করতে এপস্টেইন পুরস্কার প্রস্তাব করেছিলেন।
২০১৫ সালে এপস্টেইনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ভার্জিনিয়া গুইফরি নামের এক নারী। তাঁর অভিযোগ, যৌন ব্যবসায় কাজে লাগানোর জন্য আরও কয়েকজন অল্প বয়সী নারীর সঙ্গে তাঁকেও পাচার করেছিলেন জেফরি এপস্টেইন ও তাঁর সহযোগী জিসলেন ম্যাক্সওয়েল। ওই সময় তিনি কিশোরী ছিলেন বলে জানান ভার্জিনিয়া।
২০১৯ সালে যৌন ব্যবসার নানা অভিযোগের বিচার শুরুর আগে কারাগারে আত্মহত্যা করেন এপস্টেইন। গত ডিসেম্বরে নিউইয়র্কের একটি আদালতের বিচারক এপস্টেইনের মামলার নথিগুলো প্রকাশের অনুমতি দেন। এ নথিতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, যুক্তরাজ্যের প্রিন্স অ্যান্ড্রুসহ খ্যাতনামা ব্যক্তিদের নাম আসায় শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, বিশ্বজুড়ে শোরগোল পড়ে যায়।
পিপল সাময়িকীতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নথিতে পদার্থবিদ স্টিফেন হকিংয়ের নামও এসেছে। নথি অনুযায়ী, এপস্টেইন ২০১৫ সালে তাঁর সহযোগী জিসলেন ম্যাক্সওয়েলকে একটি ই–মেইল পাঠিয়েছিলেন। তিনি তাতে লিখেছিলেন, কেউ যদি হকিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ ভুল প্রমাণ করতে পারে, তবে তাকে পুরস্কার দেওয়া হবে।
ই–মেইল থেকে জানা গেছে, হকিংয়ের বিরুদ্ধে এপস্টেইনের ব্যক্তিগত দ্বীপে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। এ অভিযোগকে ভুল প্রমাণের চেষ্টা করছিলেন এপস্টেইন।
এটা উল্লেখ করা জরুরি, সুনির্দিষ্ট করে হকিংকে নিয়ে ভার্জিনিয়া গুইফরি কখনো সরাসরি অভিযোগ করেননি। তা ছাড়া হকিংকে কখনো কোনো যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনায় অভিযুক্ত করা হয়নি।
২০০৬ সালের মার্চে একটি বিজ্ঞান বিষয়ক সম্মেলনে যোগ দিতে হকিং এপস্টেইনের ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ক্যারিবীয় দ্বীপ সফর করেছিলেন। তখন অনুষ্ঠানের নানা ছবিতে দেখা গেছে, এপস্টেইনের দ্বীপে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন হকিং। তার কিছুদিন আগেই এপস্টেইনের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো অভিযোগ উঠেছিল। তবে নতুন প্রকাশিত ই–মেইলে এমন কোনো আলামত নেই, যার ভিত্তিতে হকিংকে দোষী বলা যাবে।
একই ই–মেইলে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের বিরুদ্ধে ওঠা আলাদা একটি অভিযোগের প্রসঙ্গও উল্লেখ করা হয়েছিল। সেখানেও এপস্টেইন দাবি করেছেন, ক্লিনটনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে।
ভার্জিনিয়া গুইফরি অভিযোগ করেছিলেন, জেফরি এপস্টেইনের নির্দেশে বিভিন্ন সময় তাঁকে কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে একান্তে সময় কাটাতে হয়েছিল। তাঁদেরই একজন ব্রিটিশ প্রিন্স অ্যান্ড্রু। নিউইয়র্কের অভিজাত এলাকা ম্যানহাটানে এপস্টেইনের একটি বাসায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিন আইল্যান্ডে এপস্টেইনের ব্যক্তিগত দ্বীপে কিশোরী বয়সে প্রিন্স অ্যান্ড্রু তাঁকে নিপীড়ন করেছেন, এমনটাই অভিযোগ ভার্জিনিয়ার।
যদিও প্রিন্স অ্যান্ড্রু তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ বরাবর অস্বীকার করেছেন। জানিয়েছেন, ভার্জিনিয়া গুইফরির সঙ্গে কোনো ‘ভুল কাজ’ করেননি তিনি। এমনকি ভার্জিনিয়ার সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্কও ছিল না।
২০২২ সালে নারী পাচার ও যৌন ব্যবসার অভিযোগে জেফরি এপস্টেইনের সহযোগী জিসলেন ম্যাক্সওয়েলের ২০ বছরের কারাদণ্ড হয়।