ফিলিস্তিন–ইসরায়েলের সংঘাত দুই সপ্তাহ ধরে চলছে। এখন মূলত দুটি ফ্রন্টে বা এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনী নিয়মিত হামলা চালাচ্ছে। এক. গাজা উপত্যকায় হামাসের বিরুদ্ধে। দুই. ইসরায়েল–লেবানন সীমান্তে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে। সেই তুলনায় ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর অনেকটা শান্ত, কিন্তু ঝুঁকিমুক্ত নয়। সংঘাত শুরুর পর সেখানে প্রতিবাদ, ধড়পাকড়, অভিযান—সবই ধীরে ধীরে বাড়ছে। তাই প্রশ্ন উঠেছে, চলমান সংঘাতে পশ্চিম তীর কি তৃতীয় ফ্রন্ট হতে চলেছে।
ইতিমধ্যে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনী ও বসতি স্থাপনকারীদের সঙ্গে সংঘাতে ৭০ জনের বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণ গেছে। ইসরায়েলি বাহিনী ৮০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে। ৭ অক্টোবরে গাজায় সংঘাত শুরুর পর থেকে এসব ঘটনা ঘটেছে।
১৯৬৭ সালে ৬ দিনের আরব–ইসরায়েল যুদ্ধের সময় গাজা ও পশ্চিম তীর দখলে নিয়েছিল ইসরায়েল। ২০০৫ সালে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমঝোতার ভিত্তিতে ইসরায়েলি সেনা ও বসতি স্থাপনকারীদের গাজা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। ওই সময় থেকে গাজা ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে পশ্চিম তীরে এখনো ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণ বিদ্যমান।
৭ অক্টোবর হামাস আকস্মিকভাবে ইসরায়েলে হামলা চালায়। এতে প্রাণ যায় ১ হাজার ৪০০ মানুষের। আটক করা হয় শ দুয়েক ইসরায়েলিকে। শুরুতে কিছুটা হতবাক হলেও ওই দিনই গাজায় পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। অবরুদ্ধ গাজায় গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩ হাজার ৭৮৫ জনের প্রাণ গেছে। গাজায় সর্বাত্মক যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী।
গাজা ছাড়াও লেবানন সীমান্তে ইরান–সমর্থিত হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কার পরও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানিসহ পশ্চিমা দেশগুলো ইসরায়েলকে নিরঙ্কুশ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ইসরায়েলি গণমাধ্যম পশ্চিম তীরকে সম্ভাব্য তৃতীয় ফ্রন্ট হিসেবে উল্লেখ করছে।
ইতিমধ্যে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনী ও বসতি স্থাপনকারীদের সঙ্গে সংঘাতে ৭০ জনের বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণ গেছে। ইসরায়েলি বাহিনী ৮০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে। ৭ অক্টোবর গাজায় সংঘাত শুরুর পর থেকে এসব ঘটনা ঘটেছে।
পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে গতকালও অভিযান ও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। নিহত হয়েছেন অন্তত ১২ জন। ইসরায়েলি পুলিশ জানিয়েছে, অভিযানে তাদের এক সদস্যের প্রাণ গেছে। এসব সংঘাত ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। কেননা, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া একমাত্র ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সদর দপ্তর এই পশ্চিম তীরে।
হামাস যাতে পশ্চিম তীরেও সক্রিয় হতে না পারে, হামলা চালাতে না পারে, সেই বিষয়ে সতর্ক রয়েছে তারা। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল জোনাথন কনরিকাস বলেন, ইসরায়েলি বাহিনীকে লেবানন সীমান্ত–পশ্চিম তীরসহ দুই থেকে তিনটি ফ্রন্টে যুদ্ধে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করছে হামাস। এ ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, হামাস যাতে পশ্চিম তীরেও সক্রিয় হতে না পারে, হামলা চালাতে না পারে, সেই বিষয়ে সতর্ক রয়েছে তারা। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল জোনাথন কনরিকাস বলেন, ইসরায়েলি বাহিনীকে লেবানন সীমান্ত–পশ্চিম তীরসহ দুই থেকে তিনটি ফ্রন্টে যুদ্ধে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করছে হামাস। এই ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে।
পশ্চিম তীরের রামাল্লার বাসিন্দা সালাহ। চলমান সংঘাতে ২০ বছর বয়সী এই তরুণ হামাসকে সমর্থন করছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের অস্ত্র দিন। যুদ্ধ করতে দিন। এরপর দেখবেন, আমরা কী করতে পারি।’
তবে ভিন্নমত নিজার মুঘারাবির। পশ্চিম তীরে একটি স্থাপত্য ফার্মের মালিক তিনি। গাজায় ইসরায়েলি হামলায় বিরক্ত তিনি। তবে এর প্রতিবাদে হাতে অস্ত্র তুলে নিতে নারাজ তিনি। ক্ষুব্ধ নিজার বলেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু লড়াই চান। হামাসের নেতা ইসমাইল হানিয়া লড়াই চান। বন্দুক হাতে দিয়ে তাঁদের মরুভূমিতে ছেড়ে দিন। তাঁদের একে অপরের সঙ্গে লড়াই করতে দিন।
৫২ বছর বয়সী ব্যবসায়ী মুস্তাফা আল–খাওয়াজা বলেন, গাজায় সামরিকভাবে সংগঠিত হতে হামাসের পর্যাপ্ত সময় ও সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এখানে (পশ্চিম তীর) তেমন সুযোগ নেই। ইসরায়েল সেই সুযোগ দেবে না।
আমাদের অস্ত্র দিন। যুদ্ধ করতে দিন। এরপর দেখবেন, আমরা কী করতে পারি।সালাহ, পশ্চিম তীরের রামাল্লার বাসিন্দা।
রামাল্লাসহ পশ্চিম তীরের তুলনামূলক দরিদ্র ও প্রান্তিক এলাকাগুলোয় ফিলিস্তিনিদের বসতি সীমিত করে রেখেছে ইসরায়েল। এসব এলাকার শরণার্থী শিবিরে থাকা ফিলিস্তিনি তরুণেরা লড়াই করতে মুখিয়ে আছেন। তবে এসব এলাকার ব্যবসায়ী ও জ্যেষ্ঠ ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা উত্তেজনা বাড়তে দিতে নারাজ।
ব্যবসায়ী মুস্তাফা বলেন, ‘অস্থিতিশীলতার কারণে ইতিমধ্যে আমার ব্যবসা ধুঁকতে শুরু করেছে। তাই আরও অস্থির সময় আমি আর দেখতে চাই না।’
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চায়। কিন্তু তাদের ভয় হলো, ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে শত শত মানুষের মিছিলে যেকোনো সময় হাজারো মানুষ যুক্ত হতে পারে।হাদি আল–মাসরি, ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
পশ্চিম তীরে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়া না পড়ার ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ একক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের ভূমিকা। তাঁর বয়স ৮৭ বছর চলছে। এই বয়সেও পরিস্থিতির ওপর কড়া নিয়ন্ত্রণ রেখেছেন তিনি। গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের নিন্দা জানিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক বিশ্লেষক হাদি আল–মাসরি বলেন, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চায়। কিন্তু তাদের ভয় হলো, ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে শত শত মানুষের মিছিলে যেকোনো সময় হাজারো মানুষ যুক্ত হতে পারে। তখন বয়সজনিত কারণে আব্বাস দুর্বল হয়ে পড়লে পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।