সালমান রুশদির ওপর হামলার নিন্দায় রাজনীতিক সাহিত্যিক সাংবাদিকেরা

ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক সালমান রুশদি
 ফাইল ছবি: রয়টার্স

ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক সালমান রুশদির ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছেন বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান, লেখক-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, অধিকারকর্মী ও রাজনীতিবিদেরা।

সালমান রুশদির আরোগ্য কামনা করে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, ‘রুশদিকে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় আমি আতঙ্কিত। তখন তিনি এমন একটি অধিকার নিয়ে কাজ করছিলেন, যেটা রক্ষা করায় আমাদের পিছপা হওয়া উচিত নয়।’ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ বলেছেন, ‘সালমান রুশদি বিদ্বেষী ও বর্বর শক্তির হাতে কাপুরুষোচিত হামলার শিকার হয়েছেন। তিনি যে লড়াইটা করছেন, সেটা আমাদেরও লড়াই, বিশ্বের সবার লড়াই।’

৭৫ বছর বয়সী এই সাহিত্যিকের ওপর হামলার পর নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রে নিরাপদ মনে করছেন না ইরানের নির্বাসিত সাংবাদিক ও অধিকারকর্মী মাসিহ আলিনেজাদ। তিনি বলেন, ‘নিউইয়র্কে একবার অপহরণের পর বেঁচে ফিরেছি আমি। হত্যার চক্রান্তও এড়িয়েছি। এরপর যতক্ষণ না যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে, ততক্ষণ আমি এখানে নিজেকে নিরাপদ মনে করি না।’

হামলাকারীর উদ্দেশে মাসিহ আলিনেজাদ বলেন, ‘আপনি আমাদের হত্যা করতে পারবেন, কিন্তু লেখালেখির চিন্তাভাবনা ও নিজেদের মর্যাদা রক্ষার লড়াইকে হত্যা করতে পারবেন না।’

হামলার নিন্দা জানিয়ে আফগান বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের লেখক খালেদ হোসেইনি বলেছেন, ‘সালমান রুশদির ওপর এই কাপুরুষোচিত হামলায় আমি খুবই আতঙ্কিত। তাঁর সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করি।’

এ ঘটনায় দুঃখ ও ক্ষোভে অনেকটা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বলে জানান ভারতের বুকারজয়ী লেখক অরুন্ধতী রায়। তিনি বলেন, ‘তিনি (সালমান রুশদি) বিশ্বজুড়ে নানা ধরনের চাপে থাকা লেখকদের সহযোগিতা করেছেন। রুশদির মতো একজন ব্যক্তির ওপর এ ধরনের ঘটনা আমাদের অনেককে সত্যিই অস্থির করে তুলেছে।’ নির্বাসিত বাংলাদেশি লেখক তসলিমা নাসরিনও নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

রুশদির ওপর হামলাকে ‘ভয়াবহ’ আখ্যায়িত করেছেন ‘হ্যারি পটার’ সিরিজের রচয়িতা জনপ্রিয় ব্রিটিশ লেখক জে কে রাউলিং। মার্কিন লেখক স্টিফেন কিং বলেছেন, ‘আশা করি সালমান রুশদি ঠিকঠাক আছেন।’

সালমান রুশদির ওপর হামলার পর যাঁরা প্রথম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান। তিনি বলেন, ‘তাঁর (রুশদি) দ্রুত আরোগ্যের জন্য আমরা সবাই প্রার্থনা করছি। তাঁকে দ্রুত সহায়তা করার জন্য যাঁরা প্রথম এগিয়ে গিয়েছিলেন, সেসব ভালো মানুষের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।’ এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের সংস্কৃতি বিষয়কমন্ত্রী নন্দী ডরিসও।

গত শুক্রবার নিউইয়র্কের শিটোকোয়া ইনস্টিটিউটে সাহিত্যবিষয়ক একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার আগে আক্রান্ত হন সালমান রুশদি। তাঁর পেট ও ঘাড়ে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। আহত রুশদিকে হেলিকপ্টারে করে পেনসিলভানিয়ার একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়। রুশদির এজেন্ট অ্যান্ড্রু ওয়াইলি গতকাল শনিবার বলেন, খবর ভালো নয়। সালমান রুশদি একটি চোখ হারাতে পারেন। তাঁর হাতের নার্ভগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ছুরিকাঘাতে লিভারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাঁকে কৃত্রিমভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস (ভেন্টিলেশন) দেওয়া হচ্ছে।

৭৫ বছর বয়সী সালমান রুশদির জন্ম ভারতের মুম্বাইয়ে। ১৪ বছর বয়সে তিনি যুক্তরাজ্যে যান। সেখানে পড়াশোনা শেষে লেখালেখি শুরু করেন। মিডনাইট চিলড্রেন উপন্যাসের জন্য ১৯৮১ সালে বুকার পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৮ সালে তাঁর চতুর্থ উপন্যাস দ্য স্যাটানিক ভার্সেস প্রকাশিত হয়। তাতে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে পরের বছর ইরানের ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এই লেখককে হত্যার ফতোয়া দেন। এরপর দীর্ঘ দিন যুক্তরাজ্যে অনেকটা লোকচক্ষুর আড়ালে ছিলেন সালমান রুশদি।

২০২০ সাল থেকে সালমান রুশদি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। ইরানের ফতোয়ার তিন দশক পার হওয়ায় অনেক স্বাভাবিক জীবনযাপন করছিলেন তিনি। এর মধ্যে তাঁর ওপর এই হামলা হলো।

সালমান রুশদির ওপর হামলায় লেবানিজ বংশোদ্ভূত এক মার্কিন নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। হাদি মাতার (২৪) নামের ওই তরুণের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। তাঁর ২৫ বছর পর্যন্ত সাজা হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা হাদি একাই এ হামলা চালিয়েছেন বলে ধারণা করছে পুলিশ। তাঁর বিষয়ে তদন্ত চলছে। তবে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউইয়র্ক বলেছে, হাদি মাতারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পর্যালোচনায় দেখা গেছে, কট্টরপন্থী শিয়া মতাবলম্বী এবং ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের প্রতি তাঁর আসক্তি রয়েছে।