গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের এক নেতা তাঁর বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। গতকাল শুক্রবার খিমানি জেমস নামের ২০ বছর বয়সী ওই ছাত্রনেতা বলেছেন, তিনি যুদ্ধপরিস্থিতি নিয়ে অত্যন্ত মর্মাহত ছিলেন এবং উত্তেজনাবশত জায়নবাদীদের হত্যা-সংক্রান্ত মন্তব্য করেছিলেন, যা ঠিক হয়নি।
গাজায় ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে প্রথম নিউইয়র্ক সিটিতে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন শুরু হয়। এরপর তা যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে।
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছেন জেমস। গত জানুয়ারিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে এক ভিডিও পোস্ট করেন। সেই ভিডিওতে তিনি জায়নবাদীদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘জায়নবাদীদের বেঁচে থাকার যোগ্য নয়।।’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘শুকরিয়া আদায় করুন যে আমি এখনো ক্ষেপে গিয়ে জায়নবাদীদের হত্যা করা শুরু করিনি।’
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শৃঙ্খলা ভঙ্গ-সংক্রান্ত এক শুনানিতে অংশ নেওয়ার আগে ও পরে তিনি এ ধরনের মন্তব্য করেছিলেন। এক পোস্টে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি আহত হতে লড়াই করি না, হার-জিতের জন্য লড়ি না। আমি লড়াই করছি হত্যা করার জন্য।’
সম্প্রতি ইসরায়েলপন্থী অ্যাকটিভিস্টরা তাঁর এসব মন্তব্য অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়। গতকাল কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় খিমানি জেমসকে ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
গতকাল ক্ষমা চেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি পোস্ট দিয়েছেন খিমানি জেমস। তিনি লিখেছেন, ‘আমি সবার জীবনের নিরাপত্তার ও মুক্তভাবে চলাচলের কাজ করার অঙ্গীকার করছি। সব মানুষেরই শারীরিক আক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকার অধিকার আছে।’
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ধর্ম, জাতিগত পরিচয় কিংবা জাতীয়তার ভিত্তিতে কোনো ব্যক্তিকে আক্রমণ করে বক্তব্য দেওয়া এবং আঘাত করার আহ্বান জানানো অগ্রহণযোগ্য। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালাবিরোধী।’
এদিকে হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্রও জেমসের জায়নবাদবিরোধী বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভরতদের কারও কারও বিরুদ্ধে ইহুদিবিদ্বেষের অভিযোগ উঠছে।
কিছুসংখ্যক ইহুদি শিক্ষার্থী বলেছেন, কলাম্বিয়াসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁরা অনিরাপদ বোধ করছেন। আবার কোনো কোনো ইহুদি শিক্ষার্থী ফিলিস্তিনের পক্ষে আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন।
বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকার কারণে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট নেমাত মিনোশে শফিকের ওপর পদত্যাগের চাপ জোরালো হচ্ছে।
গত ১৮ এপ্রিল কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে অবস্থানকারী বিক্ষোভকারীদের সরাতে পুলিশকে খবর দেয়। শতাধিক বিক্ষোভকারীকে তখন গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর বিক্ষোভ আরও জোরালো হয়ে ওঠে।