হাইড্রোজেন গ্যাস ও ধুলার দৈত্যকার কুণ্ডলী। সেটিতে সোনালি, তামাটে আর বাদামি রঙের অপরূপ মিশেল। এর মধ্যে আবার লক্ষ-কোটি তারার ঝলকানি। মহাজাগতিক এই কুণ্ডলীর নাম ‘পিলার্স অব ক্রিয়েশন’। বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায় ‘সৃষ্টির স্তম্ভ’। এমন নামের কারণ, কুণ্ডলীটির আকৃতি অনেকটা স্তম্ভের মতো।
পিলার্স অব ক্রিয়েশনের এই বর্ণনা উঠে এসেছে বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক ও শক্তিশালী টেলিস্কোপ জেমস ওয়েবে সম্প্রতি তোলা ছবিতে। গত বছরের ডিসেম্বরে টেলিস্কোপটি পৃথিবী থেকে পাঠানো হয়। এ নিয়ে গতকাল বুধবার একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা।
নাসার তথ্য বলছে, পিলার্স অব ক্রিয়েশনের অবস্থান ইগল নীহারিকার কেন্দ্রে। নীহারিকাটি পৃথিবী থেকে ৬ হাজার ৫০০ আলোকবর্ষ দূরে। অর্থাৎ আলোর গতিতে (সেকেন্ডে ৩ লাখ কিলোমিটার) কোনো যান পৃথিবী থেকে রওনা দিলে সেখানে পৌঁছাতে সময় লাগবে ৬ হাজার ৫০০ বছর।
জেমস ওয়েব প্রথম পিলার্স অব ক্রিয়েশনের ছবি তুলল এমনটি নয়। বিশ্বের সব বড় বড় টেলিস্কোপেই আগে এটি ধরা পড়েছে। উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে নাসার বিখ্যাত হাবল টেলিস্কোপের। সেটি ১৯৯৫ ও ২০১৪ সালে দুবার পিলার্স অব ক্রিয়েশনের ছবি তুলেছে।
তবে জেমস ওয়েবের তোলা ছবি আগের চেয়ে অনেক বেশি তথ্য সামনে এনেছে। এটি সম্ভব হয়েছে টেলিস্কোপটির ইনফ্রারেড তরঙ্গ শনাক্ত করার সক্ষমতার কারণে। ফলে সদ্য তোলা ছবিতে ধরা পড়েছে, কয়েকটি তারা সৃষ্টি হওয়ার সময়ের অবস্থা। নাসা বলছে, কয়েক লাখ বছর আগে তারাগুলোর সৃষ্টি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল।
এ বিষয়ে ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা অধ্যাপক মার্ক ম্যাককহরিয়ান বলেন, ‘গত শতকের নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি থেকে আমি ইগল নীহারিকা নিয়ে গবেষণা করছি। হাবলে তোলা ছবির মাধ্যমে পিলার্স অব ক্রিয়েশনের ভেতরে কী আছে তা জানার চেষ্টা করছিলাম; নতুন তারার সন্ধানে ছিলাম। তবে আমি জানতাম, জেমস ওয়েবের তোলা ছবিগুলো তাক লাগানো হবে; হয়েছেও তাই।’
মজার বিষয় হচ্ছে, আজকে যদি কেউ অলৌকিকভাবে পিলার্স অব ক্রিয়েশনের স্থানে যান, তবে সেখানে হয়তো স্তম্ভগুলো দেখতেই পাবেন না। কারণ, পিলার্স অব ক্রিয়েশনের যে অবস্থার ছবি জেমস ওয়েব তুলেছে, তা ৬ হাজার ৫০০ বছর আগের। সেই সময়ে বিকিরণ হওয়া আলোই এত বছর পাড়ি দিয়ে টেলিস্কোপটিতে ধরা পড়েছে।