যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন (ডানে) ফাইল
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন (ডানে) ফাইল

বাইডেনের নাজেহাল অবস্থা দেখেও চুপ কেন ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে দুর্বল প্রমাণের জন্য কোনো সুযোগই হাতছাড়া করতে চান না ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর দাবি, বাইডেন এতটাই দুর্বল যে নভেম্বরে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতেই তাঁকে হিমশিম খেতে হবে, আরও চার বছর থাকা তো দূরের কথা।

সে বাইডেনই সম্প্রতি নাজেহাল অবস্থার মধ্যে পড়েছেন। গত ২৭ জুন রাতে আটলান্টায় সিএনএনের স্টুডিওতে ট্রাম্প ও বাইডেনের মধ্যে বিতর্কে মার্কিন ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়সী প্রেসিডেন্ট বাইডেন ছিলেন বেশ নিষ্প্রভ। ট্রাম্পের বাক্যবাণে প্রথম দিকে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েন তিনি। এই বিতর্কের পর থেকে ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে পড়েন বাইডেন।

এমন অবস্থায় বাইডেনকে আরও নাজেহাল করার সুযোগ ট্রাম্পের হাতছাড়া করার কথা নয়। ট্রাম্প জনসমাবেশ করে বাইডেনের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়ে যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু ট্রাম্পকে এখন পর্যন্ত এ নিয়ে তেমন কিছু বলতে শোনা যায়নি।

এর মধ্যেই আজ মঙ্গলবার ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের ডোরালে ট্রাম্প সমাবেশ করবেন। গত ১১ দিনের মধ্যে এটি হবে তাঁর প্রথম জনসমাবেশ। আর বাইডেনের সঙ্গে টেলিভিশন বিতর্ক হওয়ার পর এটি তাঁর দ্বিতীয় সমাবেশ। এই সমাবেশ তাঁর নির্বাচনী প্রচারেরই অংশ।  

এমনিতেই ক্রীড়া মঞ্চ, কোর্ট হাউসের আশপাশ এবং রক্ষণশীলদের সংবাদ স্টুডিওগুলো থেকে ট্রাম্পের প্রচারণার ডামাডোলে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন মার্কিন নাগরিকেরা। বরং এটি থেমে গেলেই তাঁদের মনে হয়, এতক্ষণ কিছু চলছিল।

হোয়াইট হাউসে ডেমোক্রেটিক পার্টির সাবেক উপদেষ্টা ডেভিড অ্যাক্সেলরড সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে বলেন, ‘বিতর্কে বাইডেনের খারাপ করা নিয়ে ট্রাম্প খুব বেশি কথা বলছেন না। ট্রাম্পের প্রচার শিবির থেকে এ নিয়ে রগরগে বিজ্ঞাপনও প্রচার করা হচ্ছে না। আর লারা ট্রাম্প (রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটির কো চেয়ার) গত সপ্তাহে বলেছেন, বাইডেন মনোনীত না হলে তা গণতন্ত্রের প্রতি অবমাননা হবে। এখন প্রশ্ন হলো কেন আপনারা ভাবছেন যে তারা তাদের কাজে দেরি করছে?’  

উত্তরটা খুব সহজ। যৌন নিপীড়ন এবং ব্যাপক জালিয়াতির জন্য আদালতের বিচারের মুখোমুখি হওয়া ট্রাম্প এটা বোঝেন যে কখনো কখনো অল্প থেকেই অনেক কিছু হয়ে যেতে পারে।

লেখক, জনসংযোগবিষয়ক পরামর্শক এবং হোয়াইট হাউসের সাবেক প্রতিনিধি রন ফোরনিয়ার বলেন, ‘আপনার প্রতিপক্ষ যখন আত্মঘাতী কর্মকাণ্ড করে, তখন তার পথ থেকে দূরে থাকাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।’

বিতর্কের পর নিজের শাসনক্ষমতা পরিচালনার সক্ষমতা নিয়ে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তা থামাতে পারছেন না ৮১ বছর বয়সী বাইডেন। ডেমোক্রেটিক আইনপ্রণেতাদের কেউ কেউও তাঁকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার জন্য চাপ দিচ্ছেন। এ সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। তবে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, একমাত্র ‘ঈশ্বরই’ তাঁকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে আটকাতে পারেন।

এদিকে বাইডেনের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা না–করা নিয়ে ট্রাম্প মাথা ঘামাচ্ছেন না। বাইডেনকে নাজেহাল করার চেয়ে তাঁকে নিউ জার্সিতে গলফ খেলায় বেশি আগ্রহী হতে দেখা যাচ্ছে। এমনকি ট্রাম্প এখন পর্যন্ত তাঁর রানিংমেটের (ভাইস প্রেসিডেন্ট) নামও ঘোষণা করেননি।

নিউইয়র্কে ডেমোক্রেটিক পার্টির সাবেক গভর্নর ডেভিড প্যাটারসন রোববার স্থানীয় রেডিও স্টেশন ডব্লিউএবিসি ৭৭০-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেক হট্টগোল করেন এবং অনেক লোককে উসকে দেন, সেটা একটা দিক। তবে আমি মনে করি, বিশেষ করে এ ক্ষেত্রে ট্রাম্পের নীরব থাকার কারণ হলো যখন সবকিছু নিজের মনমতোই সব চলছে, তখন শুধু শুধু কথা বাড়ানোর কী দরকার? যা করার তা ডেমোক্র্যাটরাই করে দিচ্ছেন।’

তবে এগুলোর মানে এই নয় যে ট্রাম্প একেবারেই হাত–পা গুটিয়ে বসে আছেন। বিতর্কের কয়েক দিন পরই সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাঁর নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে বেশ কিছু পোস্ট দিয়েছেন। বাইডেনের যোগ্যতা ও সক্ষমতা নিয়ে মিত্রদের বক্তব্য এবং বিভিন্ন সংবাদপত্রের নিবন্ধ রিপোস্ট করেছেন তিনি। কিছু ভিডিও রিপোস্ট করেছেন।

বিকল্প যখন কমলা হ্যারিস

ডেমোক্র্যাটদের অনেকেই চান, বাইডেন যদি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন, তবে তাঁর বিকল্প হিসেবে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে বেছে নেওয়া যেতে পারে। যদিও ২৩ অঙ্গরাজ্যে দলটির গভর্নরদের কেউ কেউ এ ব্যাপারে ভিন্ন মত পোষণ করেন।

বিতর্কের কয়েক দিন পর সিএনএন প্রকাশিত এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, ট্রাম্পের বিপরীতে যদি কমলা হ্যারিস প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তবে বাইডেনের তুলনায় ব্যবধান কমবে। ট্রাম্প ৪৭ শতাংশের সমর্থন পাচ্ছেন আর কমলা পাচ্ছেন ৪৫ শতাংশের সমর্থন। অন্যদিকে ট্রাম্প ও বাইডেনের ব্যবধান আরও বেশি। এ ক্ষেত্রে জনমত জরিপে ট্রাম্প পাচ্ছেন ৪৯ শতাংশ সমর্থন আর বাইডেন পাচ্ছেন ৪৩ শতাংশের সমর্থন।

আজকের জনসমাবেশে ট্রাম্প দুই ধরনের সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন। একটি হলো টিভি ক্যামেরার সামনে প্রতিদ্বন্দ্বী বাইডেনকে আরও ঘায়েল করা অথবা ইতিমধ্যে ধরাশায়ী হওয়া প্রার্থীকে নভেম্বরের নির্বাচনে সহজেই পরাজিত করা যাবে—এমন আশা নিয়ে কম আক্রমণাত্মক হওয়া।