চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লি শাংফু প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে নিখোঁজ। মার্কিন সরকারের ধারণা, বেইজিং তাঁকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
মার্কিন কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে।
জাপানে নিযুক্ত মার্কিন কূটনীতিক রাহম ইমানুয়েল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দেওয়ার আগে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস। ওই স্ট্যাটাসে মার্কিন কূটনীতিক বলেছিলেন, চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী শাংফুকে প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে দেখা যাচ্ছে না বা এ সময়ের মধ্যে তাঁর কোনো বক্তব্য শোনা যায়নি।
মার্কিন কূটনীতিক আরও বলেছিলেন, চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে গৃহবন্দী করা হয়ে থাকতে পারে। এর আগে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং ব্যাখ্যাতীতভাবে নিখোঁজ হয়েছিলেন। পরে গত জুলাইয়ে তাঁকে পদচ্যুত করা হয়। বেইজিংয়ের টালমাটাল অবস্থার সর্বশেষ লক্ষণ হচ্ছে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর জনসমক্ষের আড়ালে চলে যাওয়া।
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সম্প্রতি তাঁর সরকারে বড় ধরনের রদবদল আনেন। দুই রকেট ফোর্স জেনারেলকে সরিয়ে দেন। তাঁরা হলেন পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) রকেট ফোর্স ইউনিটের প্রধান লি ইউচাও ও তাঁর ডেপুটি লিউ গুয়াংবিন। তাঁরা দেশটির পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা তদারকের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁদেরও কয়েক মাস ধরে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছিল না।
রকেট ফোর্সে নতুন জেনারেল নিয়োগের এক সপ্তাহ পর সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের খবরে বলা হয়, দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে এই রদবদল আনা হয়েছে।ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের খবরে বলা হয়, তিন মার্কিন কর্মকর্তা ও দুই ব্যক্তিকে গোয়েন্দা তথ্য জানানো হয়। এতে তাঁদের বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত, লি শাংফুকে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
শাংফুর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, বিষয়টি জো বাইডেনের প্রশাসন কীভাবে নিশ্চিত হয়েছে, সে বিষয়ে পরিষ্কার কিছু বলা হয়নি। হোয়াইট হাউস থেকেও বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলা হয়নি।
শাংফু গত আগস্টে একটি নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দিতে মস্কোয় যান। এর দুদিন পর বেলারুশ একটি ছবি প্রকাশ করে, যাতে দেখা যায়—শাংফু মিনস্কে সে দেশের প্রেসিডেন্ট আলেকসান্দার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে বৈঠক করছেন।
শাংফু মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুলে না নেওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। রুশ সামরিক প্রযুক্তি ক্রয় নিয়ে ২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকার শাংফুর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
চীনের অভিজাত কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেওয়া নিয়ে মার্কিন কূটনীতিক ইমানুয়েল ৭ সেপ্টেম্বর এক বক্তব্য দেওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে জল্পনাকল্পনা শুরু হয়। এক সপ্তাহ পর বিষয়টি আবার সামনে চলে এল। সি চিন পিংয়ের প্রকাশ্য সমালোচক হিসেবে বেশ পরিচিত ইমানুয়েল।
গত সপ্তাহে ইমানুয়েল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে #মিসটারিইনবেইজিংবিল্ডিং হ্যাশট্যাগে লিখেছিলেন, ‘প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের মন্ত্রিসভা এখন আগাথা ক্রিস্টির উপন্যাস “অ্যান্ড দেন দেয়ার ওয়্যার নান”-এর সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং নিখোঁজ, এরপর রকেট ফোর্স কমান্ডাররা নিখোঁজ এবং এখন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লি শিংফুকে দুই সপ্তাহ ধরে দেখা যাচ্ছে না।’
গতকাল বৃহস্পতিবার আবার ইমানুয়েল সি সরকারকে টিপ্পনী কেটে জাপানের মার্কিন দূতাবাসের পেজে আরেকটি পোস্ট দেন। এতে তিনি প্রশ্ন তোলেন, বেইজিং কর্তৃপক্ষ শাংফুর চলাফেরায় বিধিনিষেধ আরোপ করল কি না।
ইমানুয়েল পোস্টে লেখেন, ‘প্রথমত, তিন সপ্তাহ ধরে প্রতিরক্ষামন্ত্রী লি শাংফুকে দেখা যাচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, তাঁকে তাঁর নির্ধারিত ভিয়েতনাম সফরে দেখা যায়নি।’
ইমানুয়েল আরও লেখেন, ‘এখন শাংফু সিঙ্গাপুরের নৌবাহিনীর প্রধানের সঙ্গে তাঁর পূর্বনির্ধারিত বৈঠকেও অনুপস্থিত। তাহলে তিনি কি গৃহবন্দী?’
হোয়াইট হাউসের সাবেক প্রধান কর্মকর্তা তাঁর বুনো আচরণ আর হার্ডবল রাজনীতির জন্য বেশ সুপরিচিত। তিনি এমন এক সময় এ মন্তব্য করলেন, যখন বাণিজ্য ও ভূরাজনীতি নিয়ে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।