যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলের প্রতি তাঁর দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। হোয়াইট হাউস বলেছে, গতকাল বুধবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনালাপে তিনি এমন সমর্থন জানিয়েছেন।
গাজা উপত্যকা ও লেবাননে ক্রমবর্ধমান সংঘাতময় পরিস্থিতির মধ্যে গতকাল বাইডেন ও নেতানিয়াহুর ফোনালাপ হয়। তাঁরা দুজন ৩০ মিনিট ধরে কথা বলেছেন। গত আগস্ট থেকে এটি দুই নেতার মধ্যে প্রথম কোনো ঘোষিত আলোচনা।
এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস বলেছে, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসও ফোনালাপে যুক্ত হয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের স্থলাভিষিক্ত হতে আগামী মাসে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কমলা।
হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইসরায়েলের নিরাপত্তার প্রতি প্রেসিডেন্ট তাঁর দৃঢ় প্রতিশ্রুতির কথা নিশ্চিত করেছেন। গত ১ অক্টোবর ইসরায়েলে ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনায় তিনি দ্ব্যর্থহীনভাবে নিন্দা জানিয়েছেন।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কারিন জ্যঁ-পিয়েরে এর আগে এ আলোচনাকে ‘সরাসরি’ ও ‘ফলপ্রসূ’ বলে উল্লেখ করেন।
গত সপ্তাহে ইসরায়েলি সামরিক ক্ষেত্রগুলোয় ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাবে ইসরায়েল যখন পাল্টা হামলা চালানোর কথা ভাবছে, তখনই বাইডেন ও নেতানিয়াহুর মধ্যে ফোনালাপ হলো।
জ্যঁ পিয়েরে বলেছেন, ইরানের সঙ্গে দ্বন্দ্বের বিষয়ে বাইডেন ও নেতানিয়াহুর মধ্যে ‘আলোচনা’ হয়েছে। তবে তিনি বিস্তারিত উল্লেখ করেননি।
তেহরানে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়া, বৈরুতে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ এবং এক ইরানি জেনারেলকে হত্যার ঘটনায় জবাব দিতে গত সপ্তাহে ইসরায়েলি ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল ইরান। এ হামলার ঘটনায় ইরানকে সমুচিত জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে মার্কিন প্রশাসন।
ওই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর বাইডেনের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তিনি ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোয় ইসরায়েলি হামলা সমর্থন করেন কি না। বাইডেন এর জবাবে ‘না’ বলেছিলেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও ইঙ্গিত করেছেন যে ওয়াশিংটন ইরানের তেলক্ষেত্রে হামলার বিরুদ্ধে।
গত শুক্রবার সাংবাদিকদের বাইডেন বলেন ‘ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এখনো তাদের করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেনি। এটা আলোচনার মধ্যে আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি যদি তাদের জায়গায় থাকতাম, তবে ইরানের তেলক্ষেত্রে হামলা না চালিয়ে অন্য কোনো বিকল্পের কথা ভাবতাম।’
ইরানে এ ধরনের হামলা হলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে যাবে। আর এতে আগামী ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে কমলা হ্যারিসের জয়ী হওয়াটা কঠিন হবে।
গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের জন্য নিঃশর্তভাবে সামরিক ও কূটনৈতিক সমর্থন জুগিয়ে গেছে। কমলা হ্যারিসও ক্ষমতায় গেলে সে নীতি বজায় রাখার অঙ্গীকার করেছেন।
ওয়াশিংটন একদিকে যুদ্ধের বিস্তার নিয়ে সতর্ক করছে; আবার বাইডেন প্রশাসন বলছে, তারা লেবাননে ইসরায়েলের অভিযানের পক্ষে। লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছে ১০ লাখের বেশি মানুষ।
লেবাননের দক্ষিণে ইসরায়েলের স্থল অভিযানকে সমর্থন দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন।
বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস বলেছে, গতকাল নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনালাপে বাইডেন লেবানন সংকটের ‘কূটনৈতিক সমাধানের’ প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। লেবাননের বেসামরিক নাগরিকদের জন্যও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাইডেন।