এফ-২২ যুদ্ধবিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে চীনা গোয়েন্দা বেলুন ধ্বংস করেছে যুক্তরাষ্ট্র
এফ-২২ যুদ্ধবিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে চীনা গোয়েন্দা বেলুন ধ্বংস করেছে যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার আকাশে একের পর এক ‘রহস্যময় বস্তু’ সম্পর্কে যা জানা গেল

উত্তর আমেরিকার আকাশনিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। কেননা, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার আকাশে একের পর এক ‘রহস্যময় বস্তু’ শনাক্ত হচ্ছে।

দেশ দুটির সরকার এখনো নিশ্চিত করে বলতে পারছে না, এসব বস্তু আসলে কী। তবে নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে এসব রহস্যময় বস্তু তারা ভূপাতিত করেছে।

একাধিক রহস্যময় বস্তু শনাক্ত-ভূপাতিত করার আগে যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে একটি বড় চীনা ‘গোয়েন্দা’ বেলুন শনাক্ত হয়েছিল। পরে বেলুনটি ধ্বংস করে যুক্তরাষ্ট্র। প্রথমে বেলুনকাণ্ড, পরে রহস্যময় বস্তুর ওড়াউড়ি নিয়ে ওয়াশিংটন-বেইজিংয়ের মধ্যকার সম্পর্কে নতুন উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

বেলুনকাণ্ড
গত জানুয়ারির শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে একটি চীনা ‘গোয়েন্দা’ বেলুন শনাক্ত হয়। ৪ ফেব্রুয়ারি এফ-২২ যুদ্ধবিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে বেলুনটি ধ্বংস করে মার্কিন সামরিক বাহিনী। বেলুনটির ধ্বংসাবশেষ আটলান্টিক মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের জলসীমায় পড়ে। যুক্তরাষ্ট্র জানায়, তারা বেলুনের ধ্বংসাবশেষ চীনকে ফেরত দেবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিশাল আকৃতির বেলুনটিতে একাধিক অ্যানটেনা ছিল। ছিল সৌরপ্যানেল। এই প্যানেল গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে সক্ষম একাধিক সেন্সর চালানোর ক্ষমতা রাখে। বেলুনটি ৪০টির বেশি দেশের ওপর দিয়ে উড়ে এসেছে। প্রতিটি দেশের প্রতিরক্ষাসংক্রান্ত তথ্য বেলুনটি সংগ্রহ করেছে বলে সন্দেহ যুক্তরাষ্ট্রের।

যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও অন্য দেশের আকাশে সন্দেহজনক চীনা ‘গোয়েন্দা’ বেলুন উড়তে দেখা গেছে।

চীনের দুঃখ প্রকাশ
বেলুনকাণ্ডের জেরে দুঃখ প্রকাশ করে চীন। দেশটির দাবি, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের জন্য বেলুনটি আকাশে ওড়ানো হয়েছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট পথে না গিয়ে বেলুনটি ভুল করে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের আকাশসীমায় অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বেলুনটি চলে যাওয়ার ঘটনার জন্য বেইজিং অনুতপ্ত।

বেলুনটি ধ্বংস করায় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় বেইজিং। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র মাত্রাতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।

বেলুনকাণ্ডে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন তাঁর চীন সফর স্থগিত করেন। ব্লিঙ্কেন বলেন, এটা যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী কাজ।

আটলান্টিক মহাসাগর থেকে চীনের গোয়েন্দা বেলুনের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করছে মার্কিন বাহিনী

একের পর এক ‘রহস্যময় বস্তু’
বেলুন কাণ্ডের পর এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার আকাশে একের পর এক ‘রহস্যময় বস্তু’ শনাক্ত হয়েছে। সব কটি বস্তুই ভূপাতিত করা হয়েছে।

গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কার উত্তরাঞ্চলের আকাশে একটি ‘রহস্যজনক বস্তু’ শনাক্ত হয়। পরে মার্কিন যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে বস্তুটি ধ্বংস করা হয়।

২৪ ঘণ্টার মধ্যে কানাডার আকাশে আরেকটি রহস্যময় বস্তু শনাক্ত করা হয়। কানাডার এই এলাকা যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত থেকে ১০০ মাইল দূরে অবস্থিত। পরে উভয় দেশের সিদ্ধান্তে বস্তুটি ভূপাতিত করা হয়।

গতকাল রোববার যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা সীমান্তসংলগ্ন হুরন হ্রদের ওপরে আরেকটি রহস্যময় বস্তু উড়তে দেখা যায়। পেন্টাগন জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্দেশে যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে বস্তুটি ধ্বংস করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার আকাশে ধ্বংস করা রহস্যজনক এসব বস্তু আসলে কী ছিল, এগুলো কোথা থেকে এসেছে, তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেনি দুই দেশের সরকার।

যা জানা গেল
৪ ফেব্রুয়ারি বেলুন ধ্বংসের পর আটলান্টিক মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের জলসীমায় তল্লাশি অভিযান শুরু করে দেশটির বাহিনী। তারা বেলুনটির ধ্বংসাবশেষের বিভিন্ন অংশ উদ্ধার করে। বেলুনটি যে চীনের, তা নিশ্চিত। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এখন তারা বেলুনের ধ্বংসাবশেষ পরীক্ষা করবে।

পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার আকাশে শনাক্ত ও ধ্বংস করা রহস্যময় বস্তুগুলোর উৎস সম্পর্কে প্রকাশ্যে কিছু বলেননি দেশ দুটির কর্মকর্তারা। উভয় দেশ রহস্যময় বস্তুর ধ্বংসাবশেষ উদ্ধারের বিষয়ে কাজ করছে।

প্রথম দুটি রহস্যময় বস্তু সম্পর্ক মার্কিন সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা চাক শুমার বলেছেন, তিনি বাইডেন প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন, এগুলো সম্ভবত বেলুন ছিল। তবে প্রথম বেলুনটির চেয়ে এই দুটির আকার বেশ ছোট ছিল। এগুলো ৪০ হাজার ফুট ওপর দিয়ে উড়ছিল।

কানাডার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশটির আকাশে যে বস্তুটি শনাক্ত হয়েছিল, তার উৎস চীন কি না, সে সম্পর্কে তারা এখনই কিছু বলতে চায় না।

যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে গতকাল যে বস্তু ভূপাতিত করা হয়েছে, সেটির ধ্বংসাবশেষ উদ্ধারের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, বস্তুটি স্পর্শকাতর সামরিক স্থাপনার কাছেই উড়ছিল।

‘নজরদারি করা উদ্দেশ্য’
যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে ধ্বংস করা প্রথম বেলুনটির ছবি দেখে মার্কিন কর্মকর্তারা বলেন, এতে নজরদারির উপকরণ ছিল।

মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত স্থাপনাগুলোর ওপর নজরদারির উদ্দেশে বেলুনটি পাঠানো হয়ে থাকতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের সাবেক চেয়ারম্যান মাইকেল মুলেন বলেন, চীন সরকার বা দেশটির সামরিক নেতৃত্বের কেউ হয়তো চায়নি যে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন বেইজিং সফর করুন। তাদের পক্ষ থেকে ইচ্ছা করেই এই কাণ্ড ঘটানো হয়েছে।

বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করছেন, যেহেতু সাম্প্রতিক বছরগুলো তাইওয়ান ইস্যুতে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বেড়েছে, তাই চীন কিছুটা চাপে আছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটি বিদেশি শক্তিগুলোর সামরিক সক্ষমতা সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য জানার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। এ জন্যই হয়তো আমেরিকা মহাদেশের আকাশে বেলুন পাঠাচ্ছে তারা।