যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে তিন শতাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও গোপন রাষ্ট্রীয় নথি জব্দ করা হয়েছে। জব্দ করা এসব নথির মধ্যে দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ এবং কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের জাতীয় নিরাপত্তা–সংক্রান্ত নথিও রয়েছে। ট্রাম্পের বাড়িতে তল্লাশির সঙ্গে যুক্ত একাধিক সূত্রের বরাতে স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানায়।
সাম্প্রতিক সময়ে একাধিকবার ট্রাম্পের ফ্লোরিডার বাড়ি মার–এ–লাগোয় তল্লাশি চালানো হয়। নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, প্রাথমিকভাবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ট্রাম্পের বাড়ি থেকে ১৫০টির বেশি গোপন নথি জব্দ করা হয়েছে। এগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল আর্কাইভের নথি। এরপর গত জুনে সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের বেশকিছু গোপন নথি জব্দ করা হয়। আর সর্বশেষ চলতি মাসের শুরুতে এফবিআইয়ের সদস্যরা তল্লাশি চালিয়ে ট্রাম্পের বাড়ি থেকে বাদবাকি গোপন নথি জব্দ করেন।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের প্রতিনিধি ও ট্রাম্পের প্রতিনিধি কেউই কোনো মন্তব্য করেননি। এদিকে ট্রাম্পের ফ্লোরিডার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ফাইল জব্দ করার ঘটনায় একটি মামলা করেছেন সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ওই নথিগুলো নিয়ে বিচার বিভাগের তদন্ত বন্ধের আদেশ দিতে আদালতে আবেদন জানিয়েছেন তিনি। গতকাল সোমবার ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বিচের একটি আদালতে মামলাটি করা হয়।
ট্রাম্পের মামলার আবেদনটি করা হয়েছে এমন একজন বিচারকের আদালতে, যাঁকে ২০২০ সালে ট্রাম্প নিজেই মনোনয়ন দিয়েছিলেন। মামলায় ট্রাম্পের আইনি দলের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে, চলতি মাসের শুরুতে এফবিআইয়ের সদস্যরা যে নথিগুলো জব্দ করেছেন, সেগুলো যাচাই–বাছাইয়ের জন্য যেন স্বতন্ত্র একজন কৌঁসুলি নিয়োগ দেওয়া হয়। বিচার বিভাগ যেন তা যাচাই–বাছাই না করে।
নিয়ম অনুযায়ী, মার্কিন প্রেসিডেন্টদের আবশ্যিকভাবে তাঁদের সব নথি ও ই–মেইল কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ন্যাশনাল আর্কাইভে জমা দিতে হয়। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব ছাড়ার পর হোয়াইট হাউস থেকে ফ্লোরিডার বাড়িতে সরিয়ে নেওয়া নথিগুলো ট্রাম্প নিয়মবহির্ভূতভাবে রেখেছিলেন কি না, তা জানতে তদন্ত করছে এফবিআই।
এফবিআইয়ের তথ্যমতে, ৮ আগস্ট ট্রাম্পের বাড়িতে ১১ সেট গোপনীয় নথি পেয়েছে তারা। ওই গোপন নথিগুলো ঠিকমতো সামলে না রাখায় ট্রাম্পকে তদন্তের মুখোমুখি করা হচ্ছে। তবে ট্রাম্প কোনো ধরনের অপকর্ম করার কথা অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, ওই নথিগুলো গোপনীয় নয়।
এদিকে ট্রাম্পের আইনজীবীরা আদালতে করা আবেদনে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর দাপ্তরিক দায়িত্ব পালনের সময় যেসব আলোচনা করেছেন, সেগুলো নিরপেক্ষভাবে পর্যালোচনা করে যাচাই–বাছাইয়ের মাধ্যমে শুধু একজন স্পেশাল মাস্টার বা স্বতন্ত্র একজন কৌঁসুলি জনস্বার্থ রক্ষা করতে পারেন।
ফ্লোরিডার আদালতে জমা দেওয়া ২৭ পৃষ্ঠার নথিতে ট্রাম্পের আইনি দল অভিযোগ করেছে, ট্রাম্প যেন ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী না হতে পারেন সে চেষ্টায় তাঁর ফ্লোরিডার বাড়িতে এ তল্লাশি চালানো হয়েছে। অন্যদিকে বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ট্রাম্পের মামলা সম্পর্কে কৌঁসুলিরা অবগত রয়েছেন। আদালতে এ বিষয়ে যথাযথ জবাব দেওয়া হবে।