যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং।

ট্রাম্প ক্ষমতায় ফেরার আগে বাইডেন-সির সম্ভাব্য শেষ বৈঠকের দিকে তাকিয়ে বিশ্ব

প্রেসিডেন্ট হিসেবে আগামী জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দায়িত্ব নেওয়ার আগে আজ শনিবার পেরুর রাজধানী লিমায় বৈঠকে বসার কথা যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের। দুই দেশের মধ্যে চলমান উদ্বেগ কমানোর লক্ষ্য নিয়ে এ বৈঠক হচ্ছে। তবে এর মধ্যে সাইবার অপরাধ, বাণিজ্য, তাওইয়ান ও রাশিয়ার মতো বিষয়গুলো দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নে বড় বাধা হিসেবে দেখা দিয়েছে। দুই নেতার বৈঠকে এ বিষয়গুলো আলোচনায় আসতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে জয়ী হওয়ার বিষয়টি নিয়ে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থার (এপেক) সম্মেলনেও উদ্বেগের ছাপ দেখা গেছে। লিমায় এপেক সম্মেলনের পাশাপাশি দুই নেতা বৈঠক করছেন। তবে তাঁদের বৈঠকের সময় সম্পর্কে তথ্য দেওয়া হয়নি। বাইডেন ও সির মধ্যে গত সাত মাসের মধ্যে এটাই হবে প্রথম আলোচনা।

ওয়াশিংটন বর্তমানে সরকারি টেলিফোন যোগাযোগ ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারে চীন–সংশ্লিষ্ট হ্যাকিংয়ে ক্ষুব্ধ। এ ছাড়া তাইওয়ান নিয়ে বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান চাপ ও রাশিয়াকে সমর্থন দিয়ে উদ্বেগে রয়েছে। তাইওয়ানকে নিজেদের ভূখণ্ড মনে করে চীন। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং–তের যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই ও গুয়াম সফর নিয়ে বেইজিংয়ের ক্ষোভ রয়েছে।

বাইডেনের বাণিজ্যনীতির কারণে বেইজিংয়ের অর্থনীতি বড় ধাক্কা খেয়েছে। বাইডেন প্রশাসনের পরিকল্পনায় চীনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও সেমিকন্ডাক্টরের মতো প্রযুক্তি খাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ বন্ধ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এসব বিষয় আলোচনায় স্থান পেতে পারে বলে মনে করছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।

চীনের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের হ্যাকিংয়ের অভিযোগ বারবার অস্বীকার করা হয়েছে। এ ছাড়া তাইওয়ানকে অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মন্তব্য করা হয়েছে। চীন ও রাশিয়ার বাণিজ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতিরও প্রতিবাদ জানিয়েছে চীন। এদিকে বাইডেনের সঙ্গে সির আলোচনার বিষয় নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি ওয়াশিংটনের চীনের দূতাবাস।

ট্রাম্পের পক্ষ থেকে চীন থেকে পণ্য আমদানিতে ৬০ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপের অঙ্গীকার করা হয়েছে। বেইজিং এ ধরনের পদক্ষেপের বিরোধী। ট্রাম্প ইতিমধ্যে তাঁর প্রশাসন সাজাতে শুরু করেছেন, যেখানে কট্টর চীনবিরোধী কর্মকর্তারা ঠাঁই পাচ্ছেন। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের সিনেটর মার্কো রুবিওকে নিয়োগ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। গত বুধবার বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বর্তমান রূপান্তরকালকে এমন একটি সময় হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যখন প্রতিযোগী এবং প্রতিপক্ষরা সম্ভবত সুযোগ দেখতে পারে। বাইডেনের পক্ষ থেকে সির সঙ্গে আলোচনায় স্থিতিশীলতা, স্বচ্ছতা বজায় রাখার মতো বিষয়গুলোর ওপর জোর দেওয়া হতে পারে।

সাংহাইভিত্তিক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ শেন ডিংলি বলেন, ক্ষমতা হস্তান্তরের এই সময়ে চীনের পক্ষ থেকে বৈঠককে কাজে লাগিয়ে উদ্বেগ কমানোর চেষ্টা করা হতে পারে। ট্রাম্প আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা গ্রহণের আগে চীনের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়াতে চাইবে না।

দক্ষিণ আমেরিকায় চীনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক যুক্তরাষ্ট্রের নিজের উঠানে ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ জানানোর চিহ্ন হিসেবে দেখা হতে পারে। গত বৃহস্পতিবার লিমায় পৌঁছান সি। সেখানে সপ্তাহব্যাপী লাতিন আমেরিকার কূটনীতিকদের সঙ্গে তিনি আলোচনা চালিয়ে যাবেন।

এর আগে গত  শুক্রবার এপেক সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেছেন, অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের স্বার্থে একতরফাবাদ ও সুরক্ষাবাদকে প্রত্যাখ্যান করা দরকার। ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর চীন কোন অবস্থানে থাকার চেষ্টা করবে, তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে সির এই বক্তব্য।