যুক্তরাষ্ট্রের নানা বর্ণের মানুষ আর তরুণ ভোটারদের মধ্যে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের চেয়ে কমলা হ্যারিসের প্রতি সমর্থন বেশ ভালো বলা চলে। বাইডেন প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার আগে তাঁর প্রতি যে সমর্থন ছিল, এখন কমলার প্রতি সমর্থন তাঁর তুলনায় বেশ খানিকটা বেড়েছে।
সিএনএন/এসএসআরএসের সর্বশেষ জরিপে উঠে এসেছে এমনই চিত্র। জরিপের তথ্য বলছে, কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের মধ্যে কমলার প্রতি সমর্থন ৭৮ শতাংশ, অন্যদিকে ট্রাম্পের প্রতি সেই সমর্থন ১৫ শতাংশ। গত এপ্রিল ও জুনে সিএনএনের জরিপের তথ্য বলছে, এই ভোটারদের মধ্যে বাইডেনের প্রতি সমর্থন ছিল ৭০ শতাংশ এবং ট্রাম্পের প্রতি ২৩ শতাংশ।
হিসপানিক ভোটারদের মধ্যেও কমলার প্রতি সমর্থন বেড়েছে। এই ভোটারদের মধ্যে কমলার প্রতি ৪৭ শতাংশ এবং ট্রাম্পের প্রতি ৪৫ শতাংশের সমর্থন রয়েছে। কিন্তু এপ্রিল ও জুনের জরিপে হিসপানিকদের মধ্যে ৫০ শতাংশ ট্রাম্পের প্রতি এবং ৪১ শতাংশ বাইডেনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন।
৩৫ বছরের কম বয়সী ভোটারদের মধ্যেও আগের তুলনায় পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। এসব ভোটারের মধ্যে ৪৭ শতাংশ কমলার প্রতি এবং ৪৩ শতাংশ ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। অথচ গত এপ্রিল ও জুনের জরিপে ট্রাম্পের প্রতি ৪৯ শতাংশ এবং বাইডেনের প্রতি ৪২ শতাংশ ভোটার সমর্থন জানিয়েছিলেন।
কিছু দিক বিবেচনা করলে, ভোটারদের মনের এই পরিবর্তন খুব অবাক হওয়ার মতো কিছু নয়। এই শতাব্দীর মধ্যে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্টদের মধ্যে কেবল বাইডেনই এই দলের প্রতি সহানুভূতিশীল জনগোষ্ঠীগুলোর জন্য সবচেয়ে কম কাজ করেছেন। প্রকৃত অর্থে ৫০ বছরের মধ্যে হিসপানিক ও কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের জন্য ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্টদের মধ্যে তাঁর কর্মতৎপরতা ছিল সবচেয়ে খারাপ।
৩৫ বছরের কম বয়সী ভোটারদের মধ্যেও আগের তুলনায় পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। এসব ভোটারের মধ্যে ৪৭ শতাংশ কমলার প্রতি এবং ৪৩ শতাংশ ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। অথচ গত এপ্রিল ও জুনের জরিপে ট্রাম্পের প্রতি ৪৯ শতাংশ এবং বাইডেনের প্রতি ৪২ শতাংশ ভোটার সমর্থন জানিয়েছিলেন।
বাইডেনের তুলনায় কমলা হ্যারিসের প্রতি জনসমর্থন বাড়লেও তাঁকে জনসমর্থন বাড়াতে আরও বেশি কাজ করতে হবে। ২০২০ সালে বাইডেনের প্রতি এসব জনগোষ্ঠীর যে সমর্থন ছিল, এখন কমলা তার চেয়ে ৫ শতাংশ পিছিয়ে আছেন।
২০২০ সালে নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিকে কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের ৮৪ শতাংশ বাইডেনের প্রতি এবং ৯ শতাংশ ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন। এমনকি হিসপানিক ভোটারদের ৫৮ শতাংশ বাইডেনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন। অন্যদিকে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন দিয়েছিলেন ৩২ শতাংশ ভোটার।
চূড়ান্তভাবে, তরুণ ভোটারদের কাছেও কমলা হ্যারিস পছন্দের প্রার্থী। ২০২০ সালে নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিকে তরুণদের ৬০ শতাংশ বাইডেনকে এবং ৩১ শতাংশ ট্রাম্পকে সমর্থন করেছিলেন। ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে থাকলেও ২০২০ সালের তুলনায় কমলা এই মুহূর্তে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছেন।
তুলনামূলক জনসমর্থন দেখে কমলার নির্বাচনী শিবির হতাশ হতে পারে। পরিষ্কার করে বলতে গেলে, এই মুহূর্তে এটিই বাস্তবতা। এসব জনগোষ্ঠীর মধ্যে জনসমর্থন আরও বৃদ্ধি করতে না পারলে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কমলার জয় কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
অবশ্য ভালো খবর হচ্ছে, বাইডেন চলতি বছরের শুরুর দিকে এসব জনগোষ্ঠীর মধ্যে সমর্থন হারালেও কমলা হ্যারিস বুঝিয়ে দিচ্ছেন, সেই ঘাটতি তিনি পুষিয়ে নিতে পারবেন।
জো বাইডেনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয়, নিজেকে আলাদাভাবে তুলে ধরতে কমলা হ্যারিস কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি ভোটারদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন, তিনি নিজের আলাদা রাজনৈতিক সত্তা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম। আর সেটা যদি তিনি করতে পারেন, তাহলে নানা বর্ণের আর তরুণ ভোটারদের মধ্যে তিনি একটা আস্থার জায়গা তৈরি করতে পারবেন।
কমলা যদি নানা বর্ণের মানুষের মধ্যে আস্থা জাগিয়ে তুলতে পারেন, তাহলে তিনি ইলেকটোরাল কলেজের ভোটে বাইডেনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হবে।
বাইডেনের তুলনায় কমলা হ্যারিসের প্রতি জনসমর্থন বাড়লেও তাঁকে জনসমর্থন বাড়াতে আরও বেশি কাজ করতে হবে। ২০২০ সালে বাইডেনের প্রতি এসব জনগোষ্ঠীর যে সমর্থন ছিল, এখন কমলা তার চেয়ে ৫ শতাংশ পিছিয়ে আছেন।
নির্বাচনে ২৭০ ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে বাইডেনকে জয়ী হতে হলে এবার অনেক বেশি কাঠখড় পোড়াতে হতো। দোদুল্যমান রাজ্য হিসেবে পরিচিত উত্তরাঞ্চলীয় মিশিগান, পেনসিলভানিয়া, উইসকনসিন রাজ্য এবং নেব্রাস্কার দ্বিতীয় কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্টে তাঁর অবস্থা মোটামুটি ছিল বলা যায়। কিন্তু সান-বেল্ট রাজ্য হিসেবে পরিচিত অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, নেভাদা ও নর্থ ক্যারোলিনায় তাঁর অবস্থা বেশ খারাপ ছিল। এসব রাজ্যে জয় না পেলে তাঁর পক্ষে জয় পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াত।
এবার উত্তরাঞ্চলীয় দোদুল্যমান রাজ্যগুলো ও ডেমোক্র্যাট অধ্যুষিত অন্যান্য রাজ্যে জয় পেলে (ওপরে উল্লিখিত সান-বেল্ট রাজ্য বাদে) বাইডেন হয়তো ২৭০ ইলেকটোরাল কলেজ পেতেন। তবে সেটা নিশ্চিত করে বলা কঠিন।
সান-বেল্ট রাজ্যগুলোতে জয় নিয়ে বাইডেনকে এবার বেশ সংগ্রাম করতে হতো। এসব রাজ্যের প্রতিটিতে উল্লেখযোগ্য হারে কৃষ্ণাঙ্গ বা হিসপানিক ভোটার রয়েছেন। এসব জনগোষ্ঠীর মধ্যে কাজ করে কমলা হয়তো আরও বেশি ইলেকটোরাল ভোট পাওয়ার পথ প্রশস্ত করতে পারেন।
কমলা যদি দোদুল্যমান সব সান-বেল্ট রাজ্যে জয়ী হতে পারেন, তাহলে জয়ের জন্য তাঁর মিশিগান, পেনসিলভানিয়া বা উইসকনসিন রাজ্যের জয় না-ও লাগতে পারে।
পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, কমলা উত্তরাঞ্চলের মিশ্র বর্ণের মানুষের দোদুল্যমান ও সান-বেল্ট রাজ্যগুলো জিতে ২৭০ ইলেকটোরাল ভোট নিশ্চিত করতে পারবেন।
শেষ কথা হচ্ছে, সিএনএনের সর্বশেষ জরিপ কমলার নির্বাচনী প্রচার শিবিরকে আশা জাগাচ্ছে। তবে বিষয়টা এমন নয় যে ট্রাম্পের জন্য পরিবেশ অনুকূল নয় অথবা কমলা কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়বেন না; বরং বলা যায়, বাইডেনের অবস্থা যেভাবে খারাপ হচ্ছিল, সেখান থেকে কমলা হ্যারিস নিজের জয়ের সম্ভাবনা অনেকটাই জাগিয়ে তুলেছেন।