বিংশ শতাব্দীতে বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রনায়ক বা বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব খুন হয়েছেন বা রাষ্ট্রযন্ত্র প্রভাবিত বিচারব্যবস্থায় তাঁদের ফাঁসি হয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ড বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা সারা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। এসব ঘটনা সম্পর্কে এখনো পাঠকদের জানার প্রবল আগ্রহ রয়েছে। তাঁদের আগ্রহের কথা চিন্তা করে আমাদের এই বিশেষ আয়োজন। আজ থাকছে যুক্তরাষ্ট্রের বর্ণবাদবিরোধী ও কৃষ্ণাঙ্গদের সম-অধিকার আদায়ের আন্দোলনের নেতা মার্টিন লুথার কিংয়ের হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিশেষ লেখা।
১৯৬৮ সালের মার্চ মাস। যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি অঙ্গরাজ্যের মেম্ফিস শহরে তখন পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ধর্মঘট চলছিল। মজুরি বৃদ্ধি ও কাজের পরিবেশ উন্নত করার দাবি তুলেছিলেন শ্রমিকেরা। ধর্মঘটে সংহতি জানিয়ে একটি বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিতে তখন মেম্ফিসে যান মার্কিন নাগরিক আন্দোলনের নেতা মার্টিন লুথার কিং। তবে সহিংসতার কারণে সে বিক্ষোভ আর ঠিকঠাক চলতে পারেনি। পরে তা দাঙ্গায় রূপ নেয়।
১৯৬৮ সালের ৩ এপ্রিল আবারও মেম্ফিসে ফিরে যান লুথার কিং। তিনি পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের বোঝাতে থাকেন, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে কাঙ্ক্ষিত সামাজিক ও অর্থনৈতিক লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব।
লুথার কিং তখন মেম্ফিসে যে হোটেলে উঠেছিলেন, তার নাম ছিল লরেন মোটেল। এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির মালিকানায় মোটেলটি পরিচালিত হতো। ৩ এপ্রিল মোটেলের তৃতীয় তলায় ৩০৬ নম্বর কক্ষে ওঠেন লুথার। সহযোগী রালফ অ্যাবারন্যাথির সঙ্গে একই কক্ষে ভাগাভাগি করে ছিলেন তিনি। কক্ষের সামনেই একটি ব্যালকনি ছিল।
পরদিন ৪ এপ্রিল দুপুরে ওই লরেন হোটেলের কাছে একটি বোর্ডিং হাউসে কক্ষ ভাড়া নেন জেমস আর্ল রে নামের এক ব্যক্তি। তবে তিনি তাঁর পরিচয় গোপন করে জন উইলার্ড নামে কক্ষটি ভাড়া করেছিলেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম পিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, আর্ল রে শুরুতে ওই বোর্ডিং হাউসে ৮ নম্বর কক্ষটি ভাড়া করেছিলেন। পরে সেটি আবার পাল্টে ফেলেন। তিনি বুঝতে পারেন, পার্শ্ববর্তী লরেন মোটেলে লুথার কিংয়ের ওপর নজর রাখতে ৫বি কক্ষটিই বেশি ভালো। তিনি তখন আগের কক্ষ পাল্টে ওই কক্ষে ওঠেন।
সেদিন বিকেল ৪টার দিকে আর্ল রে ইয়র্ক আর্মস কোম্পানি থেকে ৪১ দশমিক ৫৫ ডলার দিয়ে এক জোড়া বাইনোকুলার কিনে নেন। এরপর তিনি আবার বোর্ডিং হাউসের সেই কক্ষে ফিরে যান এবং লুথার কিংয়ের ওপর নজর রাখতে থাকেন।
৪ এপ্রিল সন্ধ্যা ছয়টার দিকে লরেন হোটেলের ৩০৬ নম্বর কক্ষের সামনের ব্যালকনিতে আসেন লুথার কিং। তিনি ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে নিচতলায় থাকা গাড়িচালক সলোমোন জোন্সের সঙ্গে কথা বলছিলেন। হঠাৎই একটি বুলেট এসে তাঁকে বিদ্ধ করে। এ সময় তিনি গুরুতর আহত হন। ওই অবস্থায় তাঁকে সেন্ট জোসেফ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সন্ধ্যা ৭টা ৫ মিনিটের দিকে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
৩৯ বছর বয়সী লুথার কিংকে মৃত ঘোষণা করার পর তাঁর দেহ সেন্ট জোসেফ হাসপাতাল থেকে গাস্টন হাউসে নেওয়া হয়। সেখানে জেরি টি ফ্রান্সিসকো নামের এক চিকিৎসক লুথারের ময়নাতদন্ত করেন। তিনি শেলবি কাউন্টির ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ছিলেন। ফ্রান্সিসকো তাঁর প্রতিবেদনে বলেছেন, লুথার কিংয়ের চিবুক ও কাঁধের কাছে একটি গুলির আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
এই হত্যাকাণ্ডের পর ওয়াশিংটন, শিকাগো, বাল্টিমোর, কানসাস সিটি, মিজৌরিসহ বিভিন্ন শহরে অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল। হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী সপ্তাহে বেশ কিছু শহরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করতে হয়।
লুথার কিংকে হত্যার পরপরই আর্ল রে পালিয়ে যান। ১৯৬৮ সালের ৭ মে শেলবি কাউন্টির ফৌজদারি আদালত লুথার কিংকে হত্যার ঘটনায় আসামি হিসেবে আর্ল রের নাম ঘোষণা করেন। তাঁকে খুঁজতে আন্তর্জাতিকভাবে সহযোগিতা নেওয়া হয়।
অবশেষে দুই মাস পর ১৯৬৮ সালের ৮ জুন লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। যুক্তরাজ্যে প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া শেষে ১৯৬৮ সালের ১৯ জুলাই আর্ল-রেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। আর ১৯৬৯ সালের ১০ মার্চ লুথার কিংকে হত্যায় দোষী সাব্যস্ত হন আর্ল রে। তাঁর ৯৯ বছরের কারাদণ্ড হয়।
১৯২৯ সালের ১৫ জানুয়ারি আমেরিকার জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টা শহরে এক কৃষ্ণাঙ্গ যাজক পরিবারে জন্ম নেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র। প্রথমে তাঁর নাম রাখা হয় মাইকেল কিং জুনিয়র। পরে তাঁর বাবা মাইকেল বিখ্যাত জার্মান সংস্কারক মার্টিন লুথারের নামানুসারে ছেলের নাম রাখেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার আন্দোলনের এই নেতা সারা জীবন বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে ও কৃষ্ণাঙ্গদের সম-অধিকার আদায়ে লড়াই করে গেছেন। ৩৫ বছর বয়সে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান তিনি। ৩৯ বছর বয়সে লুথার কিং যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিক অধিকার আন্দোলনের মুখ্য নেতা হয়ে ওঠেন। তিনি ছিলেন আফ্রিকান-আমেরিকান নাগরিক অধিকারবিষয়ক সংগঠন সাউদার্ন ক্রিশ্চিয়ান লিডারশিপ কনফারেন্সের প্রতিষ্ঠাতা।
মার্টিন লুথার কিংকে কয়েকবারই হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। ১৯৫৬ সালে মন্টগোমারি বাস বর্জন আন্দোলনের সময় কিংয়ের বাসায় বোমা হামলা করা হয়।
১৯৫৮ সালে নিউইয়র্কে মানসিকভাবে অসুস্থ এক কৃষ্ণাঙ্গ নারী তাঁকে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করেন। ১৯৬৩ সালে আলাবামার বার্মিংহামে অনুষ্ঠানের মঞ্চে এক শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীর আক্রমণের শিকার হন তিনি।
এক বছর পর ওই একই শহরে প্রচারণা চালাতে যান কিং।
মার্টিন লুথার কিং বিষয়ক গবেষক অধ্যাপক জোনাথন রিয়েডার কিংয়ের বন্ধু অ্যান্ড্রু ইয়ং ও উইয়াট ওয়াকারের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। বন্ধুরা বলেছেন, বার্মিংহামে প্রচারণা চালাতে যাওয়ার আগে কিং তাঁদের সতর্ক করেছিলেন।
কিং তাঁর বন্ধুদের বলেছিলেন, ‘আমরা বুল কনরের শহরে যাচ্ছি। আর এর সঙ্গে বুল কনর নেই। এমনও হতে পারে, আমাদের কয়েকজন সেখান থেকে বেঁচে না-ও ফিরতে পারি।’
বুল কনর ছিলেন বার্মিংহামের স্থানীয় নেতা। তিনি নাগরিক অধিকার আন্দোলনের বিরোধী ছিলেন।
কিংয়ের ওপর যেন সব সময়ই মৃত্যুর ছায়া ছিল। কেবল তিনি আর তাঁর সহকর্মীরাই যে মৃত্যুভয়ে থাকতেন, তা নয়। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ১৯৬০-এর দশকটাই ছিল সংঘাতপূর্ণ ও ভয়ংকর। যুক্তরাষ্ট্রে সেটি ছিল দাঙ্গা, যুদ্ধ আর হত্যার দশক। ওই দশকে হারলেম, ফিলাডেলফিয়া, লস অ্যাঞ্জেলস এবং ডেট্রয়েটে দাঙ্গা হয়েছে, ভিয়েতনাম যুদ্ধ চলেছে। এই এক দশকে হত্যার শিকার হয়েছেন জন এফ কেনেডি, ম্যালকম এক্স, মার্টিন লুথার কিং, রবার্ট এফ কেনেডি।
১৯৬৩ সালে জন এফ কেনেডির হত্যার পর কিং তাঁর স্ত্রী কোরেটাকে বলেছিলেন, ‘আমার ভাগ্যেও এটাই আছে। আমি বারবার তোমাকে বলে আসছি যে এটা একটা অসুস্থ সমাজ।’
মার্টিন লুথার কিং নিহত হওয়ার পরের বছরের মার্চে জেমস আর্ল রে অপরাধ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। তাঁকে ৯৯ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে জেমস আর্ল রে আসলেই দোষী কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে গেছে। রে নিজে শুরুতে স্বীকারোক্তি দিলেও পরে দাবি করেছিলেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার।
জীবনবৃত্তান্ত সংরক্ষণকারী ওয়েবসাইট দ্য বায়োগ্রাফির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সাজা ঘোষণার পর রে তাঁর দেওয়া স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার করেন এবং মৃত্যুর আগপর্যন্ত নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন।
রে দাবি করেছিলেন, তিনি একা একা কিছু করেননি। কানাডায় এক ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়েছিল। আর ওই ব্যক্তিই লুথার কিংকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। ওই ব্যক্তিই আসলে কিংকে গুলি করেছিলেন। পরে আবার রে-এর আইনজীবী দাবি করেন, এই হত্যার ষড়যন্ত্রে সরকারের সম্পৃক্ততা আছে।
বিভিন্ন বইয়ের লেখক এমনকি নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতাদের কেউ কেউও সরকারি সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলেছিলেন। বিশেষ করে, হত্যার ঘটনাটি তদন্তের দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলোর দিকে অভিযোগের আঙুল উঠেছিল। এর মধ্যে আছে—এফবিআই, মেম্ফিস পুলিশ বিভাগ।
মিজৌরি অঙ্গরাজ্যের সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছিল। কারণ, লুথার কিংকে হত্যার আগেও বিভিন্ন অপরাধে বিভিন্ন সময়ে কারাগারে ছিলেন আর্ল রে। লুথারকে হত্যার আগের বছর তিনি মিজৌরি অঙ্গরাজ্যের কারাগার থেকে পালিয়েছিলেন।
লুথার কিং-এর পরিবারের সদস্যরাও আর্ল রেকে খুনি বলে মনে করেন না। বিভিন্ন সময়ে তাঁদের বক্তব্যে কথাটি স্পষ্ট হয়েছে। নিজের মৃত্যুর আগপর্যন্ত লুথার কিংয়ের স্ত্রী কোরেটা স্কট কিং প্রকাশ্যে বলতেন, তাঁর স্বামীকে হত্যার পেছনে উচ্চ পর্যায়ের ষড়যন্ত্র আছে। এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে আরও বেশি করে তথ্য প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষকে চাপ দিতে ১৯৯৯ সালে তাঁর পরিবার একটি দেওয়ানি মামলা করে। তখন মেম্ফিসের আদালতের জুরি রায় দিয়েছিলেন, লুথার কিংয়ের হত্যার পেছনে স্থানীয়, অঙ্গরাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের দায় আছে।
রায়ের পর কোরেটা কিং বলেন, ‘আমার স্বামীকে হত্যার ক্ষেত্রে যে একটি বড় ও উচ্চ পর্যায়ের ষড়যন্ত্র আছে, তার অজস্র প্রমাণ আছে।’
১৯৯৮ সালের ২৩ এপ্রিল ৭০ বছর বয়সে আর্ল রে মারা যান। তিনি হেপাটাইটিস সি-তে আক্রান্ত ছিলেন। আর্ল রের মৃত্যুর কিছুদিন আগে লুথার কিংয়ের ছেলে ডেক্সটার কিং বাবার হত্যাকারীর সঙ্গে দেখা করেন। আর্লের কাছে তিনি জানতে চান, তিনিই লুথার কিংকে হত্যা করেছেন কি না। জবাবে আর্ল রে বলেছিলেন, ‘আপনার বাবাকে হত্যার ঘটনায় আমি জড়িত নই।’
ডেক্সটার তখন আর্লকে বলেছিলেন, ‘আমি আপনার কথা বিশ্বাস করি।’
নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে লুথার কিং হত্যার ঘটনা তদন্তের জন্য ১৯৭৬ সালে মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদ থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি এ ঘটনায় যত আলামত ছিল, সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এবং কয়েক দফায় আর্ল রের সাক্ষাৎকার নেয়। আর্ল রের বেশ কয়েকজন সহযোগী এবং প্রত্যক্ষদর্শীরও জবানবন্দি নেওয়া হয়। এফবিআই ও মেম্ফিস পুলিশের বেশ কিছু সরকারি নথিপত্রও যাচাই-বাছাই করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এবং কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (সিআইএ)-এর মতো কিছু সংস্থার নথিপত্রও যাচাই করা হয়।
তদন্তের ভিত্তিতে শেষ পর্যন্ত কমিটি জানায়, জেমস আর্ল রে-ই মার্টিন লুথার কিং-কে গুলি করেছেন। তিনিই হত্যাকারী।
১৯৯৮ সালে কোরেটা কিং ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা লুথার কিংয়ের হত্যার ঘটনাটি নিয়ে আবার তদন্ত করতে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের প্রতি আবেদন জানান। অ্যাটর্নি জেনারেল জ্যানেট রেনো নাগরিক অধিকারবিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা ব্যারি কোয়ালস্কিকে অভিযোগগুলো পর্যালোচনা করার দায়িত্ব দেন। ১৯৯৯ সালে মেম্ফিসের জুরির দেওয়া রায়ও পর্যালোচনা করেছেন কোয়ালস্কি। তবে শেষ পর্যন্ত তিনিও বলেন, লুথার কিংকে হত্যা করেছেন আর্ল রে। এ ঘটনায় কোনো সরকারি ষড়যন্ত্র নেই।
তথ্যসূত্র: সিএনএন, বিবিসি, ওয়াশিংটন পোস্ট, দ্য বায়োগ্রাফি, পিবিএস, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল আর্কাইভ