কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) বিকাশের হাত ধরে প্রযুক্তি রূপকথার গল্প বা বিজ্ঞান কল্পকাহিনীকে বাস্তবে রূপ দিচ্ছে। মানবসদৃশ বা হিউম্যানয়েড রোবটের তৈরি এক ব্যক্তির প্রতিকৃতি নিলামে রেকর্ড দামে বিক্রি হওয়ার পর এআইয়ের জয়যাত্রা আরও পোক্ত হলো।
ইংরেজ গণিতবিদ অ্যালান টুরিংয়ের একটি প্রতিকৃতি নিউইয়র্কে গত বৃহস্পতিবার ১ দশমিক শূন্য ৮ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১২ কোটি ১ লাখ ১৮ হাজার ৬০০ টাকা।
মানবসদৃশ রোবটের তৈরি টুরিংয়ের ৭ দশমিক ৫ ফুটের এ প্রতিকৃতির নাম দেওয়া হয়েছে ‘এআই গড’। মানবসদৃশ যে রোবট প্রতিকৃতিটি তৈরি করেছে, তার নাম ‘আই-দা’।
বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে এআই গড নিলামে তোলে বিখ্যাত নিলাম আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠান সোথবি’স। ২৭ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি নিলামে অংশ নেয়। প্রাথমিকভাবে প্রতিকৃতিটি ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার ডলারে বিক্রি হতে পারে বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু সব প্রত্যাশা ছাড়িয়ে তা বিক্রি হয়েছে প্রায় ১২ কোটি ১ লাখ ১৮ হাজার ৬০০ টাকায়।
মানবসদৃশ রোবট আই-দা বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তির রোবটগুলোর একটি। অতিবাস্তব প্রকৃতির এই ‘রোবট শিল্পীর’ জন্ম দুই বছর আগে। একদল প্রোগ্রামার, রোবোটিস্ট, শিল্পবিশেষজ্ঞ এবং মনোবিজ্ঞানী আই-দা-কে তৈরি করেন। এআই প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে আই-দাকেও শক্তিশালী করা হয়েছে।
রোবটের তৈরি শিল্পকর্ম এত বেশি দামে বিক্রি হওয়ায় শিল্পসমালোচকদের মধ্যে তোলপাড় চলছে। এক বিবৃতিতে সোথবি’স জানিয়েছে, একটি মানবসদৃশ রোবট শিল্পীর তৈরি শিল্পকর্ম রেকর্ড দামে বিক্রি হওয়াটি আধুনিক ও সমসাময়িক শিল্পকলার ইতিহাসের জন্য বিশেষ ঘটনা। এআই প্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক শিল্পকলার বাজার কীভাবে নতুন গতিপথ তৈরি করছে, এ ঘটনা সেটার ইঙ্গিত দেয়।
আই-দা এআইয়ের সাহায্যে কথা বলতে পারে। নিজের কাজ সম্পর্কে সে বলেছে, নিত্যনতুন প্রযুক্তি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করার ক্ষমতাই আমার শিল্পকর্মের মূল বৈশিষ্ট্য।
টুরিংয়ের প্রতিকৃতি নিয়ে আই-দা জানায়, এআইয়ের প্রকৃতি অনেকটা ঈশ্বরের মতো। প্রযুক্তির এসব অগ্রগতির নানা ধরনের নৈতিক ও সামাজিক দিক আছে। টুরিংয়ের প্রতিকৃতি আমাদের সেই সব বিষয়ে চিন্তা করতে সুযোগ করে দেবে।
ইংরেজ গণিতবিদ অ্যালান টুরিং (১৯১২-১৯৫৪) প্রথম দিকের কম্পিউটার বিজ্ঞানীর একজন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসিদের কোড ফাঁস করার ক্ষেত্রে তাঁর বড় ভূমিকা ছিল। কোড ফাঁস করতে পারায় নাৎসিদের বিরুদ্ধে লড়াই করা সহজ হয়েছিল। ১৯৫০–এর দশকেই তিনি এআইয়ের উত্থান নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন।
এদিকে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি আই-দার নকশা করা হয়েছে একজন নারী আদলে। বিশ্বের প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামার অ্যাডা লাভলেসের নামেই এই মানবসদৃশ রোবটের নামকরণ করা হয়েছে।
আধুনিক ও সমসাময়িক শিল্পকলার বিশেষজ্ঞ আইদান মেলারকে আই-দার রূপকল্পকার বলা হয়। আই-দাকে উদ্ভাবন করা প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, প্রতিটি যুগের সেরা শিল্পীরা নিজেদের সময়ের নানা চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন। সমাজের পরিবর্তনকে উদ্যাপন করার পাশাপাশি প্রশ্ন করেন।