সবার মাথায় একটি প্রশ্ন ঘুরছে | একজন বাংলাদেশি, যার জন্ম ও বেড়ে ওঠা আমেরিকায়, তিনি কি বাংলাদেশের আবহ ও সংস্কৃতি নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ পারবেন? নিঃসন্দেহে অনেক বড় প্রশ্ন। তবে এর উত্তর একটাই, আর তা হলো ‘হ্যাঁ, অবশ্যই পারবেন।’
রাহশান নূরের অসাধারণ লেখা ও পরিচালনায় ‘বাঙালি বিউটি’ বাংলা চলচ্চিত্রকে হলিউড-বলিউডের কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছে | প্রচলিত বাংলা চলচ্চিত্রের বাইরে এই চলচ্চিত্র ভিন্ন স্বাদ এনে দিয়েছে। এ কথা অন্য কারও বলার প্রয়োজন নেই। সিনেমাটি নিজেই এই কথা বলছে দর্শককে।
‘বাঙালি বিউটি’র কেন্দ্রীয় চরিত্র রূপায়ণ করেছেন রাহশান নূর নিজে। তাঁর সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন টয়া। পর্দায় এই জুটির রসায়ন ছিল মনোগ্রাহী, যা বাংলা চলচ্চিত্রে সফল জুটি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার প্রতিশ্রুতির জানা দেয়। ছিলেন সারাহ আলম ও আশফিক রিজওয়ান। অভিনয়ে এই চারজনই মাতিয়ে রেখেছেন। অনেক পরিণত শিল্পীর মতোই কাজ ছিল তাঁদের।
চলচ্চিত্রে টয়ার চরিত্রের নাম ময়না। ময়না, বাঙালি মেয়ে বলতে যা বোঝায়, ঠিক তেমনই। মা-বাবার প্রতিটি কথা মেনে চলা বাধ্য সন্তান যেমন হয় আর কি। তাদের কথাতেই পারিবারিক বিয়েতে সম্মতি দেয় সে। এখানেই হাজির হয় রাহশান নূর, পর্দায় যার নাম আফজাল খান। ফিজিক্সের ছাত্র আফজাল খান আমেরিকা ফেরত। বাংলাদেশে ফিরে সে পেশা হিসেবে বেছে নেয় রেডিও জকির কাজ। ওলটপালট শুরু হয় এই চাকরির সুবাদেই। আর এই ওলটপালট ময়নার জীবনে, আফজাল খানের কণ্ঠের মুগ্ধ শ্রোতা যে। মুগ্ধতা প্রেমে রূপান্তরে সময় লাগে না। আর এই প্রেম বদলে দেয় ময়নার এত দিনকার জীবন, যা মা-বাবার একান্ত বাধ্য এই মেয়েকে প্ররোচনা দেয় বিদ্রোহে।
সংলাপের বুনট, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের পর্দার রসায়ন, আবহ সংগীত এই সবকিছুই মূর্ত করে তুলেছে ‘বাঙালি বিউটি’কে। প্রথম দৃশ্য থেকে শেষ পর্যন্ত দর্শক আকৃষ্ট রাখার মতো যথেষ্ট রসদ আছে এই চলচ্চিত্রে। আর এর মূর্তায়নে রেঘু শংকরের সিনেমাটোগ্রাফি ছিল এক কথায় অসাধারণ, যা ‘বাঙালি বিউটি’ নামটিকে সার্থক করেছে।
রাহশান, সারাহ ও আশফিকের অভিনয় ছিল এক কথায় দুর্দান্ত। বিদ্যমান সমাজ ও নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন প্রজন্মের যে উদ্বেগ ও আকাঙ্ক্ষা, তা তাঁরা সার্থকভাবে পর্দায় রূপায়ণ করতে পেরেছেন। আর টয়ার কথা আলাদাভাবে বলতেই হয়। সম্ভবত এই চলচ্চিত্রেই টয়া এখন পর্যন্ত তাঁর সেরা কাজটি করেছেন। নিশ্চিতভাবেই ‘বাঙালি বিউটি’ টয়ার অভিনয় জীবনে নতুন পালক যুক্ত করেছে। ‘বাঙালি বিউটি’ সম্পর্কে এক কথায় বলতে হয়, না আর্ট ফিল্ম, না কমার্শিয়াল; এই চলচ্চিত্র বরং এ দুইয়ের এক সফল মিশ্রণ।