নতুন বছর। চাকরি আগেরটাই। কাগজে-কলমে তাঁরা এখনো সরকারি চাকুরে। তবে বেতনের দেখা নেই। কবে পাবেন, তা জানা নেই। যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল সরকারের একাংশের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে (শাটডাউন) যাওয়ায় লাখো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী নতুন বছরের প্রথম বেতন পেলেন না। দৈনন্দিন খরচ জোগাতে অনেকে তাঁদের পুরোনো জিনিসপত্র বিক্রি করে দিচ্ছেন। অনলাইনে পুরোনো জিনিসপত্র বিক্রির একটি সংস্থার ওয়েবসাইট পণ্য বিক্রির বিজ্ঞাপনে সয়লাব হয়ে গেছে।
‘শাটডাউনের’ কারণে অনেক দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। তবে কারারক্ষী, বিমানবন্দরের কর্মী এবং গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের মতো বিভাগের কর্মীদের বিনা বেতনে কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ফেডারেল সরকারের একাংশের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়া নতুন কিছু নয়। এবারের মতো এত দীর্ঘ সময় ধরে অচলাবস্থা কখনো থাকেনি। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দেশটির বাসিন্দারা।
দেয়াল নির্মাণে বাজেট বরাদ্দ ইস্যুতে কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে মতবিরোধের জের ধরে রেকর্ডসংখ্যক ২১ দিন ধরে ফেডারেল সরকারের ২৫ শতাংশের কাজকর্ম বন্ধ রয়েছে। গত ২২ ডিসেম্বর থেকে চলছে এ অচলাবস্থা। আট লাখের মতো ফেডারেল কর্মী কোনো বেতন পাচ্ছেন না। এর মধ্যে সাড়ে তিন লাখ কর্মীকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। বাকিরা বিনা পারিশ্রমিকে কাজ চালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। অর্থের এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে হাজার হাজার কর্মী ইতিমধ্যে বেকার ভাতাসহ সুবিধাদি পেতে আবেদন করেছেন।
কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ এখন ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আর সিনেটে রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও প্রেসিডেন্টের দাবি অনুসারে অর্থ বরাদ্দ অনুমোদনে তা যথেষ্ট নয়। সিনেটে কমপক্ষে তা ৬০ ভোটে পাস হতে হবে। সেখানে রিপাবলিকানদের আসন রয়েছে ৫১। এদিকে ৫৭০ কোটি ডলার বাজেট পাস না হওয়ায় ট্রাম্প অন্যান্য বাজেটের নথিতে সই করা বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে ফেডারেল সরকারের ২৫ শতাংশের অর্থ বরাদ্দ না হওয়ায় কাজকর্ম বন্ধ রাখা হয়েছে।
আজ শনিবার বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, ভার্জিনিয়ার কৃষক জন বয়েড জুনিয়র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই কাজকর্ম বন্ধের বিষয়টি গোটা বাজারে প্রভাব ফেলেছে। তিনি বলেন, ‘আমি আমার কৃষিকাজ ঠিকভাবে করতে পারছি না। বাজারে প্রতিটি পণ্য এই অচলাবস্থার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমার দেয়ালের কোনো প্রয়োজন নেই, আমার আজ অর্থের প্রয়োজন। আমার ফসলের বীজ বুনতে অর্থের প্রয়োজন, শ্রমিকদের পারিশ্রমিক দিতে অর্থের প্রয়োজন। আমি আমার কাজ অব্যাহত রাখতে চাই। এই অচলাবস্থা পুরো আমেরিকার অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে।’
বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বছরের প্রথম বেতন পাওয়ার দিনটি হারাতে হলো সরকারি কর্মীদের। তাঁরা বেতন পাননি। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁদের পে স্লিপের ছবি পোস্ট করেন।
নাসার অ্যারোস্পেস প্রকৌশলী অস্কার মুরিলো টুইটারে শূন্য ডলারের চেক টুইটারে প্রদর্শন করে তাঁর বেতন না পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেছেন।
ক্যাট হেইফনের নামের আরেকজন টুইটার ব্যবহারকারী তাঁর ভাইয়ের পে স্লিপ প্রদর্শন করে জানান, তাঁর ভাই বিমানবন্দরে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রক হিসেবে কর্মরত আছেন এবং কোনো বেতন পাননি।
শ্রেণিভুক্ত বিজ্ঞাপনের ওয়েবসাইট ক্রেইগসলিস্ট ফেডারেল কর্মীদের পুরোনো জিনিসপত্র বিক্রির বিজ্ঞাপনে সয়লাব হয়ে গেছে। বিছানা থেকে শুরু করে পুরোনো খেলনা বিক্রির সেই তালিকাকে সরকারের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিশেষ তালিকা বা ‘গভর্নমেন্ট শাটডাউন স্পেশাল’ নামকরণ করা হয়েছে। একজন শিশুর রকিং চেয়ার বিক্রি করতে চেয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, ‘ওয়ালমার্টে দাম ৯৩ দশমিক ৮৮ ডলার, কিন্তু দাম চাইছি ১০ ডলার। বিল দেওয়ার জন্য আমাদের অর্থ প্রয়োজন।’
ওয়াশিংটনের ফুড ব্যাংকে ফেডারেল কর্মীদের আনাগোনা বেড়ে গেছে।
রাজধানী এলাকায় ফুড ব্যাংকের প্রধান রাধা মুথিয়া জানান, কর্মীদের খাবারের ব্যাগ দেওয়ার জন্য স্বেচ্ছাসেবকেরা কাজ করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর মিয়ামির পুরো টার্মিনাল এই সপ্তাহে কর্মীর অভাবে বন্ধ ঘোষণা করতে হয়েছে। কারণ, বিনা বেতনে কাজ করতে হচ্ছে বলে একসঙ্গে প্রায় সব কর্মী ‘অসুস্থ’ উল্লেখ করে কাজে আসতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন।
গতকাল শুক্রবার কংগ্রেসে প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটে সর্বসম্মতভাবে একটি বিল পাস হয়েছে যে অচলাবস্থা শেষ হওয়ার পর কর্মীদের সব বকেয়া পারিশ্রমিক একসঙ্গে দিয়ে দেওয়া হবে। প্রেসিডেন্ট এই বিলে সই করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে কর্মীদের জন্য এটাই এখন একটুখানি সান্ত্বনা।
আরও পড়ুন...