৯/১১ হামলায় সৌদিসংশ্লিষ্টতা নিয়ে এফবিআইয়ের গোপন নথি প্রকাশ

এফবিআই প্রকাশিত নথির অংশ
 ছবি: সংগৃহীত

২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আল–কায়েদার সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা তদন্তের গোপন নথি প্রকাশ করা শুরু করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই। ভয়াবহ ওই হামলার ২০ বছর পূর্তির দিনে স্থানীয় সময় শনিবার রাতে প্রথম এই নথি প্রকাশ করা হয়েছে। এত দিন গোপন থাকা এই নথিতে দুই হামলাকারীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত সৌদি নাগরিকদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তদন্তে পাওয়া তথ্য–উপাত্ত উঠে এসেছে। এই হামলা তদন্তের আরও নথি প্রকাশ করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর বিমান ছিনিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ার ও বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে হামলা করেন আল–কায়েদার সদস্যরা। উড়োজাহাজ ছিনতাইকারী ১৯ জনের মধ্যে ১৫ জনই ছিলেন সৌদির নাগরিক। ওই হামলায় তিন হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারান। এর জেরে বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের প্রতি মনোভাবে পরিবর্তন ঘটে।

দেশে দেশে জোরদার হয় গোয়েন্দা নজরদারি। বদলে যায় আরও অনেক কিছু।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিমান ছিনতাইকারী দুজনকে যুক্তরাষ্ট্রে দায়িত্বরত একজন সৌদি কনস্যুলার কর্মকর্তা এবং সন্দেহভাজন একজন সৌদি গোয়েন্দা এজেন্টের সহযোগিতার অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করে এফবিআই। তাদের সেই তদন্তে পাওয়া তথ্য–প্রমাণ উঠে এসেছে ২০১৬ সালের এই নথিতে।

বিবিসি বলেছে, ১৬ পৃষ্ঠার ওই নথি ব্যাপকভাবে সম্পাদনা করা হয়েছে। এটি এমন একটি উৎসের সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে প্রস্তুত করা হয়েছে, যার পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে। এতে একাধিক সৌদি নাগরিকের সঙ্গে দুই উড়োজাহাজ ছিনতাইকারী নাওয়াফ আল-হাজমি ও খালিদ আল-মিদহারের যোগাযোগের প্রমাণ দেয়।

২০০০ সালে ওই সন্ত্রাসীরা শিক্ষার্থীর ছদ্মবেশে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিলেন। এফবিআইয়ের নথি অনুসারে, এরপর তাঁরা ওমর আল-বায়োমির কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতা পান। তিনি তাঁদের দোভাষী হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি ভ্রমণ, আবাসন ও আর্থিক সুবিধা দিয়েছিলেন। ওই সময় নিজেকে ছাত্র হিসেবে পরিচয় দেওয়া ওমর আল-বায়োমি নিয়মিত লস অ্যাঞ্জেলেসের সৌদি দূতাবাসে যাতায়াত করতেন। সেখানে তাঁকে খুবই সমাদর করা হতো।

ওমর আল-বায়োমি ছাড়াও দুই ছিনতাইকারীর সঙ্গে লস অ্যাঞ্জেলেসের কিং ফাহাদ মসজিদের ইমাম সৌদি নাগরিক ফাহাদ আল-থুমাইরির সম্পর্ক ছিল। এফবিআইয়ের নথি বলছে, থুমাইরি চরমপন্থায় বিশ্বাসী ছিলেন। থুমাইরি ও বায়োমি ৯/১১ হামলার কয়েক সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে যান।

৯/১১ হামলায় নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের স্বজনেরা দীর্ঘদিন ধরে এই গোয়েন্দা নথি প্রকাশের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তাঁদের দাবি, ওই হামলা সম্পর্কে সৌদি কর্মকর্তারা আগে থেকে জানলেও তাঁরা তা ঠেকানোর চেষ্টা করেননি। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত অনেক পরিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ওপর ওই নথি প্রকাশের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। নথি প্রকাশ না করলে বাইডেনকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ অনুষ্ঠানে যোগ না দিতে দেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছিলেন তাঁরা।

ওই নথি প্রকাশের আগে ওয়াশিংটনে সৌদি দূতাবাস এই উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। হামলাকারীদের সঙ্গে সৌদি সরকারের কোনো সম্পর্কের অভিযোগ অস্বীকার করে তাঁরা।

এদিকে বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, ৯/১১ হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালতে সৌদি আরবের সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। ৯/১১ হামলার ২০ বছর পরে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে করা মামলায় সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে জড়িত থাকার অভিযোগ তোলাকে এই ঘটনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের আইনজীবী ম্যালোনি আল–জাজিরাকে বলেন, তাঁদের বিশ্বাস, সৌদি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আল–কায়েদা সদস্যদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি প্রমাণ করতে পারবেন তাঁরা।

এর আগে তদন্তের নথি প্রকাশের দাবি উঠলেও যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ, বারাক ওবামা ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে তা করেনি। গত সপ্তাহে জো বাইডেন ছয় মাসের মধ্যে তদন্তসংশ্লিষ্ট নথি প্রকাশের আদেশ দেন।

যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব দীর্ঘদিন ধরেই মিত্র হিসেবে থাকলেও তাদের একসময় কঠিন সম্পর্কের মধ্যে পড়তে হয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেন নির্বাচনের আগে তুরস্কে সৌদি দূতাবাসে সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যার কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। তবে সৌদির সঙ্গে জোটের কথা বিবেচনা করে এখন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের প্রতি মনোভাব অনেকটাই নরম করেছেন বাইডেন।