সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী কার্যকর করবেন না বলে স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিকে জানিয়ে দিয়েছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। তবে সিনেটে এর মধ্যেই চারজন রিপাবলিকান নেতা ট্রাম্পের অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন।
সিএনএনের খবরে জানা যায়, মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে ভোটের কয়েক ঘণ্টা আগে স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার রাতে পেলোসিকে এক চিঠিতে পেন্স বলেন, ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে সরাতে ২৫তম সংশোধনী কার্যকর করবেন না। তিনি আরও বলেন, এটি ভয়ংকর নজির তৈরি করবে।
স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি আইনপ্রণেতা জ্যামি রাসকিনের নেতৃত্বে নয়জন আইনপ্রণেতাকে নিয়ে অভিশংসন কমিটি গঠন করেছেন। এসব আইনপ্রণেতা ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসনের জন্য যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন।
ক্ষমতার বাকি মেয়াদে ট্রাম্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার জন্য রিপাবলিকানদের পক্ষ থেকেই কংগ্রেসে একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে। অভিশংসনের পরিবর্তে নিষেধাজ্ঞা আরোপ একধরনের হালকা ব্যবস্থা।
পেনসিলভানিয়া থেকে নির্বাচিত রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ব্রায়ান ফিটজপ্যাট্রিক এই প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন।
২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন শপথ গ্রহণ করবেন। ট্রাম্প ২০ জানুয়ারি দুপুরের পর থেকে আর প্রেসিডেন্ট পদেও নেই। ক্ষমতায় নেই—এমন একজন প্রেসিডেন্টের অভিশংসন নিয়ে আইনপ্রণেতাদের কংগ্রেসে বিতর্ক করার কোনো নজির যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে নেই।
ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম ১০০ দিনে অনেক কিছু করার পূর্বপ্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিস প্রশাসন। প্রশাসনের নতুন নিয়োগ পাওয়া লোকজনের সিনেটে শুনানি গ্রহণ এবং নিশ্চিতকরণ ছাড়া অনেক কিছুই করা সম্ভব হবে না। এমন সময়ে ট্রাম্পকে নিয়ে পড়ে থাকতে চাচ্ছেন না ডেমোক্র্যাট কৌশলবিদেরা।
মার্কিন তিন বাহিনীর প্রধান যুক্তরাষ্ট্রের সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্যের উদ্দেশে নজিরবিহীন এক বিবৃতি প্রদান করেছেন। গতকাল তিন বাহিনীর প্রধানদের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সংবিধান রক্ষার জন্য শপথ গ্রহণ করে থাকেন। সংবিধান রক্ষার শপথের মধ্য দিয়ে যেকোনো চরমপন্থাকে প্রত্যাখ্যান করাই এই শপথের মর্মকথা বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দেশ ও দেশের বাইরে আমেরিকার শত্রুর হাত থেকে জনগণ ও সম্পদ রক্ষায় মার্কিন সেনাবাহিনী সব সময় সংবিধানকে সমুন্নত রেখেছে। এক পৃষ্ঠার এমন যৌথ বিবৃতিতে জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তারা সই করেছেন।
বিভিন্ন মার্কিন সংবাদমাধ্যমের খবর বলছে, ৬ জানুয়ারি ট্রাম্পের সমর্থনে বেশ কিছু সেনাসদস্যের উপস্থিতি ছিল ওয়াশিংটন ডিসিতে। এ নিয়ে এফবিআই জোর তদন্তে নেমেছে। এফবিআই এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, তারা এর মধ্যেই দেড় শতাধিক অভিযোগ গঠনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নিয়ে এসেছে। সহিংসতায় যোগ দেওয়া কেউ ছাড়া পাবে না। ছবি দেখে, তাদের সেলফোন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তল্লাশি করে করে বিভিন্ন রাজ্যে ধরপাকড় শুরু হয়েছে।
এর মধ্যে জো বাইডেনের শপথকে ঘিরে নাশকতার পরিকল্পনা হতে পারে বলে এফবিআই সব মহলকে সতর্ক করে দিচ্ছে। এফবিআই বলছে, ট্রাম্প–সমর্থক শ্বেতাঙ্গ রক্ষণশীলরা ১৭ জানুয়ারি থেকে রাজ্যে রাজ্যে সশস্ত্র সমাবেশের জন্য গোপনে প্রচার চালাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান অঙ্গরাজ্যগুলোয় ফেডারেল ভবন ও সরকারি স্থাপনাগুলোয় ইতিমধ্যে অতিরিক্ত পাহারা বসানো হয়েছে। এফবিআইয়ের অভ্যন্তরীণ একটি স্মারক উল্লেখ করে এবিসি নিউজসহ অন্যান্য সংবাদমাধ্যম বলেছে, ট্রাম্পকে সময়ের আগে ক্ষমতাচ্যুত করার যেকোনো প্রয়াসে সহিংসতা সৃষ্টি হতে পারে। প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের আদালত ভবন, অঙ্গরাজ্য সভা, নগর ভবন, ফেডারেল ভবন হামলার লক্ষ্যবস্তু হতে পারে।
এদিকে টেক্সাসে সীমান্তদেয়াল পরিদর্শনে যাওয়ার পথে সাংবাদিকদের সঙ্গে অভিশংসন নিয়ে কথা বলেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, তাঁর অভিশংসন করা হলে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হবে। এতে মানুষের মনে চরম ক্ষোভ তৈরি হবে। তিনি কোনো সহিংসতা চান না। অভিশংসনের জন্য ডেমোক্র্যাটদের প্রচেষ্টাকে উদ্ভট বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী কার্যকরের আহ্বানকে নিজের জন্য কোনো ঝুঁকি মনে করেন না ট্রাম্প।