জেমি বিটন নামের এক হার্ভার্ড স্নাতক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আমেরিকার কলেজগুলোয় ভর্তি সহায়তা দেওয়ার বিনিময়ে লাখ লাখ ডলার আয় করছেন। নামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পথে নিজের অর্জিত অভিজ্ঞতাই তাঁকে এ ব্যবসা চালুতে উদ্বুদ্ধ করেছে।
আমেরিকা ও ব্রিটেনের ২৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করার পর জেমি বিটন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পথ খুঁজে পেয়েছিলেন। নিউজিল্যান্ডের নাগরিক জেমি বিটন বলেন, কীভাবে অভিজাত কলেজে ভর্তি হতে হবে, সে সম্পর্কে তাঁর সামনে কোনো পথনির্দেশনা ছিল না। নিজেই সেই পথ খুঁজে পেতে হয়েছিল। আর তখনই তিনি এ নিয়ে একটি ব্যবসায়িক চিন্তা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি গড়ে তোলেন কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠানটি।
২০১৩ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি সহযোগী হিসেবে কলেজের কিছু বন্ধুকে নিয়ে ‘ক্রিমসন এডুকেশন’ নামে একটি নতুন উদ্যোগ শুরু করেন। আইভি লীগসহ আমেরিকার নামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তিতে অংশ নিতে আগ্রহী আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য একটি পরামর্শ পরিষেবা চালু করেন। বিটনের কর্মচারীরাই এখানে টিউটর হতেন। তাঁরা শিক্ষার্থীদের নানা পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করতেন।
বিটন তাঁর কোম্পানি ক্রিমসন এডুকেশনকে একটি সফল পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করে জানান, বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ২০ কোটি ডলার সংগ্রহ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে তার মূল্য বেড়ে ২৬ কোটি ডলার হয়েছে। এরই মধ্যে তারা আন্তর্জাতিক পরিসরে এক হাজার শিক্ষক নিয়োগ করেছে। তাঁর প্রতিষ্ঠান এমনকি আমেরিকার অভ্যন্তরেও উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তির ব্যাপারে সাহায্য করে থাকে।
সমালোচকেরা অবশ্য প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়িক মডেলটির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলছেন, নিউইয়র্ক, সান ফ্রান্সেসকো, লস অ্যাঞ্জেলেস ও লন্ডনের অফিসে পরিদর্শনকারী সাংবাদিকেরা তাদের কার্যালয়ের ডেস্কে কাউকে দেখতে পাননি। এক বা একাধিক ক্ষেত্রে ক্রিমসনের কোনো চিহ্নই ছিল না।
ক্রিমসন এডুকেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রতিষ্ঠানটি ক্রিমসন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেয়। শিক্ষকদের অধিকাংশই কলেজছাত্র হলেও পরামর্শদাতা হিসেবে তাঁরা যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বাস করে, কলেজ শিক্ষার্থীদের পক্ষেই ভর্তির জন্য সবচেয়ে ভালো পরামর্শ দেওয়া সম্ভব। কারণ, তাঁরা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রতিক ভর্তির প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো জানেন।
মার্কিন তদন্ত সংস্থা ক্রিমসনের শিক্ষার রেকর্ড পরীক্ষা করে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। এদিকে ক্রিমসন এডুকেশনের দাবি, তাদের সাফল্যের হার শতভাগ। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য এই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীদের অনেককেই একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অনেকেই অনলাইনে পরামর্শ নিতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কোম্পানিটির অকল্যান্ড, সাংহাইসহ বিভিন্ন স্থানে কর্মীসহ লোকেশন রয়েছে। বিটন বা তাঁর সংস্থার কেউই অবৈধ কার্যক্রমের জন্য অভিযুক্ত হননি।
ক্রিমসন এডুকেশন বলেছে, শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সেশনের জন্য পাঁচ থেকে দশ হাজার ডলার পর্যন্ত চার্জ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভিডিও চ্যাটের মাধ্যমেই শিক্ষকেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি, আবেদনপত্র পূরণ ও বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নিতে সহায়তা করে থাকেন।